প্রথম বর্ষের ছাত্র মৃত্যুতে যখন ব়্যাগিং নিয়ে কাঠগড়ায় পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম নামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যাদবপুর বিশ্ববদ্যালয়, তখন একটু অন্যভাবে বক্তব্য রাখলেন অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি বলেন, ‘যাদবপুর ইউনিভার্সিটিতে এসে এই মানুষগুলো খারাপ হয়েছে এ বিশ্বাস আমি করি না।’ তাঁর স্পষ্ট কথা, ‘একটা প্রতিষ্ঠান শুধু টার্গেট হতে পারে না।’ ছাত্রমৃত্যু নিয়ে তাঁর খারাপ লাগা থাকলেও এ ব্যাপারে শুধু যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়কে দায়ী করা ঠিক নয় বলেই তিনি মনে করেন।
গত বুধবার রাতে যাদবপুরের বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের পড়ুয়া মারা যান তিনতলা থেকে পড়ে। পরিবারের তরফে দায়ের হয়েছে খুনের অভিযোগ। ব়্যাগিং করে মেরে ফেলা হয়েছে তাঁদের ছেলেকে, এমনই দাবি করেছে পরিবার। পুলিশ ইতিমধ্যেই গ্রেপ্তার করেছে ৯ জন প্রাক্তন ও বর্তমান পড়ুয়াকে।
এই নিয়ে শুরু হয়েছে নিন্দার ঝড়। তোলপাড় পড়ে গেছে সব মহলে। তারকা মহলও মৌনতা ভেঙে সরব হয়েছে প্রতিবাদে। খুনের বিচার চেয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছিলেন ঋদ্ধি সেন, কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তরা। সরব হন তারকা সাংসদ দেবও। এবার শ্রীলেখাও সেই দলে নাম লেখালেন।
যদিও অভিনেত্রীর বক্তব্য, ‘বাংলায় একটা প্রবাদ আছে শক্তের ভক্ত নরমের যম। এটা মাথায় এল, যাদবপুর ইউনিভার্সিটি প্রসঙ্গে। যাদবপুর ইউনিভার্সিটিতে এসে এই মানুষগুলো খারাপ হয়েছে, এ বিশ্বাস আমি করি না, একটু গভীরভাবে ভাবতে শিখুন, মানুষের বেড়ে ওঠা তার পারিপার্শ্বিক তার পূর্ব কোন অভিজ্ঞতা– আরও অনেক কিছু থাকতে পারে।’
অপরাধের শিকড় অনেক গভীরে। কেবলই যাদবপুরকেন্দ্রিক আলোচনা ও নিন্দা করলেই দায় সেরে ফেলা যায় না এটাই বলতে চেয়েছেন অভিনেত্রী। পাশাপাশি শ্রীলেখার ব্যাখ্যা, ‘মানুষ আসলেই ঈশ্বর বা প্রকৃতির সবচেয়ে নিকৃষ্ট সৃষ্টি। জঙ্গলে বাঘ-সিংহ শিকার করে তার ক্ষুধা নিবৃত্ত করার জন্য, মানুষ সজ্ঞানে রেপ করে, খুন করে, ব়্যাগিং করে… আরও কত কিছুই করে।’ তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘যাদবপুর ইউনিভার্সিটি থেকে পাশ করে অনেক গুণী ছাত্র-ছাত্রী সমাজে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।’
শ্রীলেখা যাদবপুরের বাইরে বেরিয়ে এসে লিখেছেন, ‘রাজনীতি আপনার বাড়ির রান্নাঘরেও হয়, মানুষ যতদিন বাঁচবে ক্ষমতার লড়াই চলবে। যার সন্তান গেছে তার কাছে কোন লজিকই কার্যকরী নয়। এটা কোনও সাধারণ ইস্যু নয়, এটা পাওয়ার গেম। যা পলিটিক্যাল পার্টিরা এই মুহূর্তে ব্যবহার করছে। অনেক প্রশ্ন আছে, অনেক ফ্রাস্ট্রেশন জমছে, কিন্তু তার টার্গেট শুধু একটা প্রতিষ্ঠান হতে পারে না।’
অভিনেত্রীর কথায়, ‘সময়টা বড় গোলমেলে, সবাই সাবধানে থাকুন সাবধানে রাখুন। অন্যায় দেখলে নিশ্চয়ই প্রতিবাদ করুন, কিন্তু সেটা বুঝে করুন। প্রত্যেকের একটা সাইকোলজিক্যাল এভালুয়েশন এর প্রয়োজন, স্কুল, কলেজ, কর্মস্থান সব ক্ষেত্রে।’
তবে চলতি সমালোচনার ঝড়ের মাঝে অভিনেত্রীর এই মতামত যে সর্বজনগৃহীত হবে না, সে আন্দাজও করেছেন তিনি। তাই লিখেছেন, ‘জানি আমার এই পোস্টটার সঙ্গে অনেকেই একমত হবেন না। নাই হতে পারেন, মোদ্দা কথা হল ক্ষমতা এবং তার অপব্যবহার।’