কথিত, হরগৌরী নিজেই এসেছিলেন মাকড়দহের শ্রীমানি বাড়ির দুয়ারে

রাজীব মুখোপাধ্যায়

বনেদি বাড়ি মানেই ইট,কাঠের মধ্যে লুকিয়ে থাকা অসংখ্য ইতিহাসের কাহিনি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কোথাও তা বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে গেছে, আবার কোথাও বা প্রবাহমান সময়েও সেই অতীতকে সাক্ষী দিচ্ছে। আর  বনেদি বাড়ির অলিন্দে কান পাতলেই শোনা যায় অতীতের সেই গৌরবময় ইতিহাসের ফিসফিসানি। বাড়ির খিড়কি থেকে সিংহদুয়ার হয়ে মায়ের আগমনীর বার্তাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে নিজেদের হৃত ঐতিহ্যর স্মৃতিমেদুরতায়। বাতাসে শোনা যায় অতীতের হৃত সাবেকিয়ানা অতীতে সেই  বাড়িতে ঘটে যাওয়া নানা কিংবদন্তীর আখ্যান।
১৯১৮ সাল ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধ। হাওড়ার মাকড়দহের শ্রীমানী বাড়ির বড় ছেলে বিশ্বনাথ শ্রীমানীর প্রথম পক্ষের স্ত্রী হঠাৎ একদিন বাড়ির সদর দরজা খুলে ঝাঁট দিতে গিয়ে দেখেন সেখানে বসানো একটি দেবীমূর্তির কাঠামো। দেখা মাত্রই সারা বাড়িতে শিহরণ পড়ে যায়। এ যে সাক্ষাৎ দেবী নিজে থেকে এসেছেন নিজের পুজো করানোর জন্য। তারপরে সেই কাঠামো বাড়ির ভেতরে নিয়ে এসে মৃৎশিল্পীদের দিয়ে প্রতিমা তৈরি শুরু করলে দেবী হরগৌরির রূপ নেন। সেই থেকেই হরগৌরি রূপেই দেবী দূর্গা এখানে পুজিত হয়ে আসছেন। আর সেই সুবাদে এই পুজোর নামও হরগৌরি বাড়ির পুজো বলেই বিখ্যাত হয়।

প্রতিবছর জন্মাষ্টমীর দিন কাঠামো পুজোর মাধ্যমে প্রতিমা তৈরি শুরু হয় । ষষ্ঠীতে দেবীর বোধন শুরু বেলগাছে পুজো দিয়ে হয়। সপ্তমীতে মৃন্ময়ীর প্রাণ প্রতিষ্ঠা হয় নবপত্রিকা স্নান করিয়ে । একসময়ে এই বাড়িতে নবমী তিথিতে কাদামাটি খেলা আর সন্ধিপুজোর পর ধূনী পোড়ানোর রেওয়াজ ছিল। আর ১ মণ চালের সঙ্গে ১০০ নারকেলের তৈরি খাবার ও মনোহরা দিয়ে দেবীকে নৈবেদ্য দেওয়া হত। সময়ের নিয়মে সেসব এখন কালের গর্ভে। যদিও অতীতের জৌলুস ও চাকচিক্য না থাকলেও মাতৃ আরাধনার আন্তরিকতায় এতটুকু ভাটা পড়েনি । আর এই পুজোর বিশেষ রীতি দশমীতে শ্রীমানি বাড়ির হরগৌরী মালিক পাড়ার ছেলেদের কাঁধে করে সরস্বতী নদীতে নিরঞ্জনে যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three × two =