ভারতের ম্যাপ থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে যোশীমঠ, আশঙ্কা ইসরোর রিপোর্টে

যে দিকে পরিস্থিতি এগোচ্ছে, তাতে ভারতের ম্যাপ থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে যোশীমঠ। আর বাঁচানো সম্ভব নয় এই জনপদকে, এমনই চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট দিল ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো আশঙ্কা কারণ, বাড়িঘর, দোকাপাট, হোটেল থেকে শুরু করে রাস্তাঘাট সমস্তটাই বসে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। ভবিষ্যতে সম্পূর্ণ এলাকাটাই মুছে যাবে। যার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে গত ১২ দিন ধরে। যোশীমঠ নিয়ে অধিকাংশ গবেষক যা জানাচ্ছিলেন সেটাই সত্য বলে প্রমাণিত হতে চলেছে এদিনের ইসরোর এই রিপোর্টে।

সম্প্রতি ইসরোর ন্যাশনাল রিমোট সেন্সিং সেন্টার যে স্যাটেলাইট ইমেজ প্রকাশ করে তাতে দেখা যাচ্ছে, গত ১২ দিনে ৫.৪ সেন্টিমিটার বসে গিয়েছে যোশীমঠ এলাকা।হায়দরাবাদে অবস্থিত ন্যাশনাল রিমোট সেন্সিং সেন্টারের কারটোস্যাট-২৫ উপগ্রহচিত্র। যেখানে দেখা যাচ্ছে ২০২২ সালের এপ্রিল মাস থেকে একটু একটু করে বসে যাচ্ছিল যোশীমঠ। এপ্রিল থেকে নভেম্বর মাসের মধ্যে ৮.৯ সেন্টিমিটার বসে গিয়েছিল এলাকা। এরপর ২৭ ডিসেম্বর থেকে ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত আরও ৫.৪ সেন্টিমিটার বসে গিয়েছে যোশীমঠ। যোশীমঠ এবং আউলির মাঝের সড়ক যে কোনও মুহূর্তে বসে যেতে পারে বলেও স্যাটেলাইট চিত্রে ধরা পড়ে।  এদিকে ২৭ ডিসেম্বর থেকে ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত আরও ৫.৪ সেন্টিমিটার বসে যায় মাটি। গত ৫ এবং ৬ জানুয়ারি এই উপগ্রহ চিত্র নজরে আসতেই যোশীমঠের ভয়াবহ পরিস্থিতি নিয়ে সতর্কতা জারি করে ইসরো। মহাকাশ গবেষণা সংস্থার তরফে দ্রুত এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি এবং হোটেল ভাঙার নির্দেশও দেওয়া হয়।  যোশীমঠের ৯০ কিলোমিটার দুরে কর্ণপ্রয়াগ, এবং আউলিতেও একাধিক বাড়ি-হোটেল নিয়ে সতর্কতা জারি করা হয়। এখানেই শেষ নয়, ইসরো রিপোর্ট এও উল্লেখ করা হয়েছে, ভবিষ্যতে গোটা যোশীমঠ জনপদটিই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। তলিয়ে যাবে মাটির তলায়।এদিকে বিজ্ঞানী ও গবষেকরা এখনও ফাটলগুলি নিয়ে পর্যালোচনা করছেন। খতিয়ে দেখা হচ্ছে ইসরোর প্রকাশিত এই রিপোর্ট।

যোশীমঠের এই পরিস্থিতির জন্য প্রকৃতির তোয়াক্কা না করে উন্নয়ন করার যে পদক্ষেপ নেওযা হয়েছে তার দিকেই আঙুল তুলেছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। হিমালয়ের এইসব এলাকায় কোনও প্রকল্প বা নির্মাণে অনুমতি দেওয়ার আগে দীর্ঘমেয়াদী ফল খতিয়ে দেখা দরকার, বলেই মত প্রকাশ করেন ভূতাত্বিকরা। আর এখানেই যোশীমঠে জলবিদদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণকেও দায়ী করেন পরিবেশবিদরা। তাঁদের আশঙ্কা এই বিপর্যয় রোখার আর কোনও পথ নেই। ক্রমেই মানুষের বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠবে পুরো শহরটাই। এদিকে পরিবেশবিদ বিমলেন্দু ঝা এই বিপর্যয়ের জন্য সরাসরি ইঞ্জিনিয়রদের ব্যর্থতাকেই দায়ী করেন। কারণ, যোশীমঠ ছাড়়াও চারধাম সড়ক প্রকল্প, বিভিন্ন জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের আশপাশ থেকে ফাটলের ঘটনা সমানে এসেছে। এই ঘটনাগুলিকে কাকতালীয় মানতে নারাজ এই পরিবেশবিদ। স্পষ্ট ভাষায় পরিবেশবিদদের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, এখান থেকে ফেরার কোনও কোনও পথ নেই। সুযোগ নেই এই শহর মেরামতেরও। এ নিয়ে পরিবেশবিদ বিমলেন্দু ঝা আরও জানান, সেসমিক জোনে প্রকল্প নির্মাণের আগে এই বিষয়গুলিকে কোনও গুরত্বই দেওয়া হয়নি। পাশাপাশি তাঁর কটাক্ষ, ‘ইঞ্জিনিয়রা সম্ভবত অটোক্যাডে দিল্লির সরোজিনী নগরের কোনও উন্নয়ন প্রকল্পের নকশা করার মতোই এই পরিকল্পনা করেছিলেন।’ একইসঙ্গে বিপর্যয়ের জন্য সরাসরি এনটিপিসির প্রকল্পকে নিশানা করে তিনি ট্যুইট করে জানান, যোশীমঠের বিপর্যয় হল এনটিপিসি ইঞ্জিনিয়ারদের জলাশয়গুলি পাংচার করার ফল। শহরের ফাটল গুলি থেকে উঠতে থাকা কাদা জল ‘ইঞ্জিনিয়ারিং অপরাধের’ সাক্ষ্য বহন করছে।’ একইসঙ্গে  জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য টানেল বোরিং মেশিন ব্যবহার করে একের পর এক টানেল তৈরিকেও দায়ী করেন পরিবেশবিদরা। যোশীমঠের থেকে শিক্ষা নিয়ে, উত্তরাখণ্ডের অন্য পার্বত্য এলাকার ধারণ ক্ষমতা মূল্যায়নের ঘোষণা করেছে উত্তরাখণ্ডের পুস্কর সিং ধামি সরকার। শুধু যোশীমঠ-ই নয়, গুপ্তকাশী, মুসৌরি, আলমোড়া, পিথোরাগড়, মুন্সিয়ারির মতো একাধিক শহরে বিপদের আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

16 − 14 =