‘দলকে সমর্থন করতে না পারলে বাড়িতে বসে থাকুন’, কড়া বার্তা ইরান কোচের

সবে বিশ্বকাপ শুরু হয়েছে। এর মধ্যেই ইরান দলের ফুটবলারদের নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে। কাতার বিশ্বকাপের উদ্বোধনের দ্বিতীয় দিনই গ্রুপ-বি-তে থাকা হ্যারি কেনের ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে নেমেছিল ইরান। সেই ম্যাচে ৬-২ ব্যবধানে হেরেছে এশিয়ার দলটি। এর পর ইরানের সমর্থকরাই আঙুল তুলছেন মেহদি তারেমিদের দিকে। যা দেখে চুপ থাকতে পারেননি ইরানের কোচ কার্লোস কুইরোজ।

এ বারের বিশ্বকাপে ইরানের ফুটবলাররা প্রথম ম্যাচেই এক অভিনব প্রতিবাদ জানিয়েছেন। খলিফা আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে ম্যাচ শুরু হওয়ার আগে ইরান ফুটবলাররা জাতীয় সঙ্গীত গায়নি। নিজেদের দেশে সরকারবিরোধী যে প্রতিবাদ চলছে, তারই সমর্থনে এমন সিদ্ধান্ত নেন আলিরেজা বেইরানভান্দ, সাদেঘ মোহরামিরা। ম্যাচ শুরু হওয়ার আগে ইরানের অধিনায়ক আলীরেজা জাহানবখশ জানিয়েছিলেন, দেশের সরকারবিরোধী আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে তাঁরা জাতীয় সঙ্গীত গাইবেন কি না, সেটা দলগতভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

হিজাব নিয়ে সরকার বিরোধী প্রতিবাদে সামিল হয়েছিলেন ইরানের ফুটবলাররা। দু’মাস আগে পুলিশি হেফাজতে এক তরুণীর মৃত্যু ঘটে ইরানে। হিজাব ও বোরখা পরার নিয়ম না মানার জন্য মাশা আমিনি নামের এক তরুণীকে গ্রেপ্তার করে জেল হেফাজতে নিয়ে যায় ইরানের মর্যা লিটি পুলিশ। হেফাজতে নিয়ে যাওয়ার দুই ঘণ্টা পরই গুরুতর আহত অবস্থায় অ্যাম্বুল্যান্সে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় মাশাকে। এরপর তিনি মারা যান। মধ্যপ্রাচ্যের দেশে এই মর্মান্তিন ঘটনার পর সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সরব হয়েছেন অনেকেই।
৬-২ ব্যবধানে ইংল্যান্ডের কাছে হেরে বিশ্বকাপ যাত্রা শুরু করেছে ইরান। যার ফলে গ্যালারি থেকে এশিয়ার এই দলের ফুটবলারদের বিদ্রুপ করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ইরানের কোচ কার্লোস দলের সমর্থকদের কড়া ভাষায় বলেছেন, যদি টিমকে সাপোর্ট না করতে পারেন, চুপ চাপ বাড়িতে বসে থাকুন। দলকে বিদ্রুপ করবেন না। ইরানের কোচ কার্লোস বলেন, “২০১৪ ও ২০১৮ সালে আমাদের সমর্থকদের কাছ থেকে আমরা সম্পূর্ণ সমর্থন পেয়েছি। আর এখন কী দেখেতে হচ্ছে? এখানে দলকে সমর্থন করতে না আসা সমর্থকদের আমি বাড়িতে থাকা পরামর্শ দেব। কেন তারা এখানে এসেছে? দলের বিরুদ্ধে যেতে? তেমনটাই যদি হয়, তা হলে আমাদের তাদের দরকার নেই।”

কার্লোসের কথায় ফুটে উঠেছে রীতিমতো বিরক্তি। তিনি আরও বলেন, “আমার মনে হয়ে তাদের বাড়িতে থাকাটাই অনেক ভালো।আমরা যখন জিতি, তখনই দলকে সমর্থন করে এমন সমর্থকদের আমাদের প্রয়োজন নেই। ফুটবলাররা যখন খেলে, তখন তারা এই পরিস্থিতিটা অনুভব করতে পারে।”
কুইরোজ ম্যাচের শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে সমর্থকদের কড়া ভাষায় নিন্দা করেছেন। তিনি আরও বলেন, “যখন আমি ইরানিদের সম্পর্কে মন্তব্য করি, অবশ্যই স্টেডিয়ামে সমস্ত ইরানিদের স্বাগত জানানো হয়। তাদের সন্তুষ্ট হওয়ার বা দলের সমালোচনা করার অধিকার আছে, সেটা কোনও সমস্যা নয়। তবে যারা এমন বিষয় নিয়ে দলকে বিরক্ত করতে আসে যা কেবল ফুটবলের মতামত নয়, তাদের স্বাগত জানানো হয় না। কারণ আমাদের ছেলেরা কেবল সাধারণ ফুটবল খেলা ছেলে নয়। তারা একটি দেশকে প্রতিনিধিত্ব করে। আমি ইংল্যান্ড, পর্তুগাল, অনেক জায়গায় কাজ করার বিশেষাধিকার পেয়েছি এবং আমি ইংল্যান্ড, পর্তুগাল, স্পেন এবং ব্রাজিলের খেলার আবেগ জানি। ইরান ফুটবলেও তেমনটা রয়েছে। ফুটবলের প্রতি প্যাশন প্রতিটা জায়গায় রয়েছে।”

হ্যারি কেনের ইংল্যান্ড যথেষ্ট শক্তিশালী দল। ফলে এই রকম ম্যাচে এই ফলাফল হতেই পারে। কিন্তু, একটা ম্যাচে হারের পর, যদি দেশের সমর্থকরাই দলের ফুটবলারদের বিদ্রুপ করেন, তা হলে ফুটবলাররা মনোবল পাবে না। তাই বিশ্বকাপের শুরুতেই সমর্থকদের কড়া ভাষায় নিন্দা করতে পিছপা হলেন না ইরানের কোচ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

20 − nine =