রো-কো এর প্রত্যাবর্তনেও ভরাডুবি ভারতের, বৃষ্টিভেজা পারথে উজ্জ্বল অস্ট্রেলিয়া

অবশেষে বহু প্রতীক্ষার পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কামব্যাক করলেন রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলি। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর এই প্রথম তাঁদের দেখা গেল একসঙ্গে মাঠে। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে শুভমান গিলের নেতৃত্বে নামা ভারতীয় দলের প্রতি প্রত্যাশা ছিল আকাশছোঁয়া। কিন্তু পারথের বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে ভারতীয় ব্যাটিং লাইনআপ একেবারে ধসে পড়ে। প্রত্যাবর্তনের ম্যাচে ব্যর্থ হলেন দুই তারকাই। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটি ৭ উইকেটে সহজেই জিতে নিল অস্ট্রেলিয়া। চলতি বছরে এই প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে পরাজয়ের স্বাদ পেল ভারত।

টসে হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নামে ভারত। পারথের মেঘলা আকাশে ও গতিময় উইকেটে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেন দুই কিউই দ্রুতবোলার মিচেল স্টার্ক ও জশ হ্যাজেলউড। ম্যাচের চতুর্থ ওভারেই হ্যাজেলউডের বলে খোঁচা দিয়ে স্লিপে ক্যাচ দেন রোহিত শর্মা। তাঁর ব্যাট থেকে আসে মাত্র ৮ রান। যদিও এদিনই তিনি জীবনের ৫০০ তম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নেমেছিলেন, কিন্তু দিনটা হয়ে উঠল দুঃস্বপ্নের মতো। এরপর স্টার্কের বলে শূন্য রানে আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন বিরাট কোহলি। প্রত্যাবর্তনের দিনে ব্যাটে বল লাগানোর সুযোগই যেন পেলেন না ‘কিং কোহলি’।

এরপর দলকে এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব ছিল অধিনায়ক শুভমান গিলের কাঁধে। কিন্তু এশিয়া কাপের মতোই ব্যর্থ হলেন তিনি। মাত্র ১০ রানে নাথান এলিসের বলে কট বিহাইন্ড। একের পর এক ব্যাটসম্যানের ব্যর্থতায় ভারতের স্কোরবোর্ডে চাপ ক্রমেই বাড়তে থাকে। বৃষ্টির কারণে বারবার খেলা বন্ধ হয়, যার ফলে ম্যাচ কমে দাঁড়ায় ৫০ ওভারের বদলে ২৬ ওভারে। প্রতি বার খেলা শুরু হওয়ার পরই যেন ভারতের আরেকটি উইকেট পড়ে যায়। শ্রেয়স আইয়ারও হতাশ করেন।

তবে এই বিপর্যয়ের মধ্যে কিছুটা লড়াইয়ের ইঙ্গিত দেন অক্ষর প্যাটেল ও লোকেশ রাহুল। দু’জনেই দায়িত্ব নিয়ে খেলার চেষ্টা করেন। অক্ষর ৩১ ও রাহুল ৩৮ রান করে দলের স্কোরে খানিকটা জুড়ি দেন। কিন্তু রানের গতি বাড়াতে গিয়ে দু’জনেই আউট হয়ে যান। শেষদিকে ১৯ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলেন নবাগত নীতীশ রেড্ডি, যিনি এদিন তাঁর প্রথম আন্তর্জাতিক ওয়ানডে খেললেন। সব মিলিয়ে ২৬ ওভারে ভারতের ইনিংস থামে ১৩৬ রানে, যদিও ডিআরএসের পুনর্বিবেচনায় তা কমে দাঁড়ায় ১৩০।

জয়ের জন্য অস্ট্রেলিয়ার লক্ষ্য ছিল ১৩১ রান। জবাবে শুরুতেই অর্শদীপ সিং ট্র্যাভিস হেডকে ফিরিয়ে কিছুটা আশা জাগালেও সেই আশার আলো বেশিক্ষণ টেকেনি। ম্যাথু শর্টকে অক্ষর আউট করেন, কিন্তু ততক্ষণে ম্যাচ অনেকটাই হাতছাড়া হয়ে গিয়েছে। জশ ফিলিপেকে ওয়াশিংটন সুন্দর ফিরিয়ে দেন, কিন্তু তখন অজিদের স্কোরবোর্ডে প্রায় ১০০ রান। অধিনায়ক মিচেল মার্শ ৪৬ রানে অপরাজিত থেকে দলকে জয় এনে দেন সহজেই।

ভারতীয় বোলারদের মধ্যে একমাত্র অর্শদীপ ও অক্ষর খানিকটা ছাপ ফেলতে পারেন। কিন্তু রানবোর্ডে বড় টোটাল না থাকলে বোলারদের কাজ কঠিন হয়ে পড়ে। বিশেষত হর্ষিত রানারা ক্রমাগত শর্ট বল করে অস্ট্রেলীয় ব্যাটারদের সহজ রান তুলে দিতে থাকেন।

গতবছর অজিভূমে টেস্ট সিরিজে ব্যর্থ হয়েছিল ভারতীয় দল। এক বছর পেরিয়ে এবার ওয়ানডেতেও সেই ব্যর্থতার পুনরাবৃত্তি দেখা যাচ্ছে কি না, সেই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে ক্রিকেটমহলে। সিরিজে ফিরতে হলে পরের ম্যাচে রোহিত-কোহলিদের দায়িত্ব নিতে হবে সামনের সারিতে থেকে। নয়তো শুভমান গিলের নেতৃত্বের শুরুটা স্মরণীয় নয়, বরং শিক্ষণীয় হয়ে উঠবে ভারতীয় ক্রিকেটের জন্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

fifteen − one =