দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে নিজের পাতা ফাঁদে হার ভারতের

শনিবার খেলার শেষে চেতেশ্বর পুজারা বলেছিলেন, চতুর্থ ইনিংসে এই পিচে ১২০ রান তাড়াও কঠিন হতে পারে। তাঁর মন্তব্য অনেকের কাছে বাড়াবাড়ি বলেই মনে হয়েছিল। কিন্তু রবিবার ঋষভ পন্থদের ব্যাটিং একে অক্ষরে অক্ষরে সত্যি করে তুলল। দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় ইনিংস ১৫৩ রানে গুটিয়ে যাওয়ায় ভারতের সামনে লক্ষ্য ছিল মাত্র ১২৪ রান। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বড় দল হলে এমন লক্ষ্যে পৌঁছনো কঠিন হওয়ার কথা নয়। কিন্তু ইডেনের স্পিন সহায়ক, অনির্দিষ্ট বাউন্স ও ধীরগতির পিচে ভারতের ব্যাটিং লাইন আপ একেবারে ভেঙে পড়ল। মাত্র ৯৩ রানে অল আউট হয়ে ৩০ রানে ম্যাচ হারল গৌতম গম্ভীরের দল।

এই ম্যাচের নিয়ামক হয়ে ওঠেন দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা। ম্যাচের প্রথম দিন থেকেই ইডেনের ২২ গজ ব্যাটারদের জন্য ‘বধ্যভূমি’ হয়ে উঠেছিল। সেই পিচেই বাভুমা যেন ব্যতিক্রমী স্বচ্ছন্দ্য ও একাগ্রতায় অপরাজেয় হয়ে ওঠেন। চোট সারিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরে ১৩৬ বলে ৫৫ রানের অমূল্য ইনিংস খেললেন তিনি। ইডেনের দর্শকেরা দাঁড়িয়ে তাঁকে অভিনন্দন জানান অর্ধশতরান পূর্ণ করার পর। তাঁর এই লড়াই না থাকলে দক্ষিণ আফ্রিকার মোট সংগ্রহ অনেক কম হত এবং ভারতের জন্য লক্ষ্য তাড়া করা এতটা কঠিন হত না। ভারতের বোলিং ত্রয়ী—জসপ্রীত বুমরাহ, মহম্মদ সিরাজ ও রবীন্দ্র জাডেজা—কেউই বাভুমাকে আউট করতে পারেননি। বাভুমাকে সঙ্গ দিয়েছেন করবিন বসও, যিনি ২৫ রান করে ইনিংসে ভারসাম্য আনেন।

দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস শেষ হওয়ার পরও ভারতের জয়ের আশাই বেশি ছিল। কিন্তু ম্যাচ শুরুর কয়েক ওভারেই স্পষ্ট হয়, বাভুমার ইনিংস ভারতের সামনে অদৃশ্য প্রাচীর তৈরি করেছে। প্রথম ওভারে মার্কো জানসেনের বলে শূন্য রানে আউট হন যশস্বী জয়সওয়াল। থার্ড ওভারে রাহুলও প্যাভিলিয়নে ফেরেন। ১ রানে ২ উইকেট পড়ে ভারত প্রথম থেকেই চাপে পড়ে। এরপর ওয়াশিংটন সুন্দর ও ধ্রুব জুরেল ইনিংস সামাল দেওয়ার চেষ্টা করলেও জুরেলের অযথা ছক্কা মারার প্রয়াস বিপর্যয় ডেকে আনে। একটি দিক ধরে রাখার জেদ দেখা গেল শুধু ওয়াশিংটনের ব্যাটে। কিন্তু পন্থ (২) ও জাডেজা (১৮)-র ভুল শট নির্বাচন দলের পতন ত্বরান্বিত করে। দক্ষিণ আফ্রিকার স্পিনার সাইমন হারমার ম্যাচের নায়ক হয়ে ওঠেন বোলিংয়ে।

প্রথম ইনিংসের পর দ্বিতীয় ইনিংসেও ৪ উইকেট নেন মাত্র ২১ রানে। জ্যাঁসেন ২ উইকেট এবং কেশব মহারাজ ২ উইকেট নিয়ে ভারতের আত্মবিশ্বাস পুরোপুরি ধ্বংস করে দেন। এই পরাজয় ভারতের সাম্প্রতিক টেস্ট রেকর্ডে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নচিহ্ন তুলে দিল। গত বছর স্পিন সহায়ক উইকেটে খেলে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ০-৩ ব্যবধানে হেরেছিল গম্ভীরের ভারত। এবার দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে একই ধাঁচে হার—নিজেদের পছন্দের পিচেও ব্যর্থতা। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, দল এখনো স্পিন সহায়ক ঘরের মাটিতে প্রাপ্ত সুবিধাকে শক্তিতে রূপ দিতে পারছে না। দুই টেস্টের সিরিজে আর জয়ের সম্ভাবনা নেই ভারতের সামনে। গুয়াহাটিতে দ্বিতীয় টেস্ট জিততে পারলে সর্বোচ্চ ড্র করা সম্ভব। এখন বড় প্রশ্ন—গম্ভীর কি এই ধারাবাহিক ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নেবেন? অন্যদিকে, বাভুমা টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে অপরাজিত থাকার রেকর্ড আরও মজবুত করলেন এবং দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রামী চরিত্রের প্রতীক হয়ে উঠলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

5 + sixteen =