শেষ বেলায় দুরন্ত কামব্যাক ভারতীয় দলের, গুয়াহাটিতে লড়াই সমানে সমানে

দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে প্রথম টেস্ট হারের পর ইডেন গার্ডেন্সের ২২ গজকে প্রশংসা করেছিলেন গৌতম গম্ভীর। তবে পিচ নিয়ে আরও কোনও দাবি বা পরিবর্তনের কথা শোনা যায়নি ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) সচিব দেবজিৎ শইকীয়ার শহরে এসে। কোচ গম্ভীরও মাঠকর্মীদের নিজের মতো স্বাধীন ভাবে পিচ প্রস্তুত করতে দিয়েছেন। সেই কারণে গুয়াহাটির বরষাপাড়া স্টেডিয়ামে প্রথম টেস্টের প্রথম দিনেই দেখা গেল এক আদর্শ ব্যালান্সড পিচ—যেখানে ব্যাটারদের রান তোলা যেমন সম্ভব, তেমনি সঠিক জায়গায় বল ফেলতে পারলে বোলাররাও সাফল্য পাচ্ছেন। যার ছাপ পাওয়া গেল দিনের শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোরকার্ডে—২৪৭/৬। গুয়াহাটিতে এই প্রথম টেস্ট ম্যাচ আয়োজন হওয়ায় স্থানীয় দর্শকদের উত্তেজনা এবং আবেগ ছিল চরমে। প্রথম দিনের খেলা সেই উত্তেজনার মর্যাদা রাখল বলেই মনে করা হচ্ছে। ব্যাট–বল লড়াইয়ে দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখা গেল।

এই পিচে ভুল না করলে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটারদের ফেরানো কঠিন ছিল। আবার ভারতীয় বোলাররা তাঁদের ভুল করতে বাধ্যও করতে পেরেছেন।টসে এ দিনও ভাগ্য সহায় হল না ভারতের। নেতৃত্ব শুভমন গিল থেকে গিয়ে ঋষভ পন্থের হাতে এলেও টসের ফল পরিবর্তন হল না। টস জিতে অজানা পিচে প্রথমে ব্যাট নেওয়াই বেছে নিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা। শুরু থেকেই ঝুঁকি না নিয়ে সতর্ক খেলতে থাকেন দুই ওপেনার এডেন মার্করাম ও রায়ান রিকলটন। ধীর কিন্তু দৃঢ় সূচনায় প্রথম উইকেটে তাঁরা যোগ করেন ৮২ রান। প্রাথমিকভাবে একবার মার্করামের দেওয়া সহজ ক্যাচ স্লিপে ফেলে দেন লোকেশ রাহুল। কিন্তু পরে ৩৮ রানে তাঁকে বুমরাহ ফিরিয়ে দেন। মার্করামের উইকেটের পর চা-বিরতি ঘোষণা হলে বিরতির পর তেমন স্থায়ী হতে পারেননি রিকলটনও (৩৫)। তাঁকে ফেরান কুলদীপ যাদব। দুই ওপেনার আউট হওয়ার পর ইনিংস সামাল দিতে নামেন স্টাবস ও অধিনায়ক বাভুমা। সাবধানী ব্যাটিংয়ে তাঁরা ভারতীয় শিবিরকে যথেষ্ট চাপের মুখে ফেলেছিলেন।

তৃতীয় উইকেটে ৮৪ রানের জুটি গড়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে প্রবল লড়াইয়ের জায়গায় এনে দেন। সেই জুটি ভাঙেন রবীন্দ্র জাডেজা। বাভুমাকে (৪১) আউট করে ভারতকে খেলায় ফিরিয়ে আনে তিনি। অধিনায়ক হিসেবে এই দিনই বাভুমা পূর্ণ করেন ১০০০ টেস্ট রান। এরপর বেশি ক্ষণ টিকতে পারলেন না স্টাবসও। অর্ধশতক থেকে মাত্র এক রান দূরে কুলদীপের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন তিনি (৪৯)। পরে বেশি রান করতে পারেননি উইয়ান মুল্ডারও (১৩)। ৫ উইকেটে ২০১ রানে চাপে পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। সেখান থেকে ইনিংস সামলে তোলার দায়িত্ব নেন টনি ডি জোরজি এবং সেনুরান মুথুস্বামী। ছয় নম্বর উইকেটে ৪৫ রানের জুটি দলকে কিছুটা নিরাপত্তা দেয়। সেই জুটি ভাঙেন মহম্মদ সিরাজ। দিনের শেষে অপরাজিত রয়েছেন মুথুস্বামী (২৫) এবং কাইল ভেরেনে (১)।

প্রথম দুই সেশনে মাত্র একটি করে উইকেট তুলতে পারলেও শেষ সেশনে ছন্দ ফিরে পায় ভারতীয় বোলিং। কুলদীপ সবচেয়ে সফল হয়ে ৪৮ রানে ৩ উইকেট নেন। জাডেজা ৩০ রানে ১, বুমরাহ ৩৮ রানে ১ এবং দিনশেষে সিরাজ পান ১ উইকেট, ৫৯ রান খরচ করে। দিনের খেলা শেষে ম্যাচ এখনও সমানতালে। দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম ইনিংসে লড়াই করার মতো রান তুলেছে, তবে ভারতের বোলাররাও নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের ইঙ্গিত দিয়েছেন। দ্বিতীয় দিনের শুরুই ম্যাচের দিক নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

twenty − six =