চিনা সেনাবাহিনীকে সমুচিত জবাব দিয়েছেন ভারতীয় সেনারা: রাজনাথ সিং

‘চিনা সেনাবাহিনীকে সমুচিত জবাব দিয়েছেন দেশের জওয়ানরা। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে চিনা আগ্রাসনের চেষ্টা রুখে দিয়েছে ভারত।‘ তাওয়াং সংঘর্ষ নিয়ে মঙ্গলবার লোকসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে এমনটাই জানান প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং। একইসঙ্গে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দাবি, অরুণাচলের এই সংঘর্ষে কোনও ভারতীয় সেনা আহত হননি। কোনও হতাহতের খবর নেই।

পাশাপাশি তিনি এও জানান, ভারতীয় সেনা সাফল্যের সঙ্গে চিনা লালফৌজের আগ্রাসন রোধ করতে সক্ষম হয়েছে। সঙ্গে তাঁর সংযোজন, লালফৌজকে পোস্টে ফেরতও পাঠায় ভারতীয় সেনা। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং তাঁর এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে ভারতীয় সেনার অবস্থান স্পষ্ট করেন এদিন। এদিকে এর মধ্যে সংসদে বিরোধীরা নিজেদের বক্তব্য রাখার দাবি জানালে তা নস্যাৎ করে দেওয়া হয় শাসকদলের তরফে। প্রতিবাদে তীব্র বিক্ষোভ প্রদর্শন করে সমগ্র বিরোধী শিবির। লোকসভা থেকে ওয়াক আউট করেন বিরোধী সাংসদরা।

এই ঘটনায় মঙ্গলবার সকালে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী। যেখানে উপস্থিত ছিলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর, চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ অনিল চৌহান, স্থলসেনা প্রধান জেনারেল মনোজ পাণ্ডে,  জলসেনা প্রধান আর হরি কুমার এবং বায়ুসেনা প্রধান মার্শাল ভি আর চৌধুরী।এছাড়াও এই বৈঠকে ছিলেন বিদেশ সচিব বিনয় মোহন কাটরা এবং প্রতিরক্ষা সচিব বিনয় মোহন গিরিধর আরামানে। চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ অনিল চৌহান অরুণাচলের এই সংঘর্ষ নিয়ে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংকে যাবতীয় তথ্য দেন বলেই জানা সূত্রে খবর। এরপরই সংসদে বিবৃতিতে প্রতিরক্ষামন্ত্রী অরুণাচলের এই সংঘর্ষ নিয়ে বিস্তারিত তথ্য জানান।

প্রসঙ্গত, অরুণাচলপ্রদেশের তাওয়াং সেক্টরে সীমান্ত সংঘর্ষের এই ঘটনা ঘটে গত ৯ ডিসেম্বর। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বা লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল চিনা সেনারা পার হতে গেলে বাধা পান ভারতীয় সেনাদের কাছ থেকে। প্রথমে গায়ের জোর দেখানোর চেষ্টা চলে। তাতেও লাভ হবে না বুঝে গালিগালাজ শুরু করে চিনা লালফৌজ।যা শেষ পর্যন্ত গড়ায় হাতাহাতিতে। অরুণাচলপ্রদেশের তাওয়াংকাণ্ডে সামনে এসেছে এমনই একের পর এক নয়া তথ্য। এদিকে সেনাসূত্রে খবর, ‘ঘটনার সময় ইচ্ছাকৃতভাবে উস্কানি দেয় চিনের পিউপিল লিবারেশন আর্মি বা পিএলএ। বারবার বোঝানোর চেষ্টা করা হলেও তাঁরা শোনেননি। বরং তাঁরা ভারত এবং ভারতীয় সেনা সম্পর্কে অশ্রাব্য ভাষায় কুকথা বলতে শুরু করে। একটা সময় তা শালীনতার সীমাও ছাড়ায়। এর পর আরও আগ্রাসী হওয়ার চেষ্টা করলে পিএলএ-কে উচিত শিক্ষা দেওয়া হয় বলে জানানো হয়। গত ৯ ডিসেম্বর অরুণাচলের তাওয়াঙে চিনা সেনার সঙ্গে সংঘাতে জড়ায় ভারতীয় ফৌজ। দু’পক্ষের মধ্যে চলে হাতাহাতি ও পাথরবৃষ্টি। তাতে দু’দেশেরই বেশ কয়েকজন জওয়ান আহত হন বলে সেনা সূত্রে খবর। সেনা অফিসারদের দাবি, ওই জায়গায় কোনও কাঁটাতারের বেড়া না থাকায় নির্দিষ্ট করে সীমানা নির্ধারণ করা খুবই কঠিন। এর আগেও সীমান্তে টহলদারির সময় চিনের তরফে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা লঙ্ঘনের চেষ্টার মতো ঘটনা ঘটেছে। তবে আগে তা মিটে যেত কথাবার্তাতেই। ভুল স্বীকার করে পিছনে চলে যেতেন তাঁরা। তবে গত ৯ তারিখ মোটেই সেই রাস্তায় হাঁটেননি পিএলএ জওয়ান ও কমান্ডাররা। কয়েক ঘণ্টা ধরে তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা করা হলেও সমস্যা মেটেনি।উলটে জোর জবরদস্তি শুরু করে দেন তাঁরা।

এই ঘটনায় সেনা সূত্রে খবর, প্রায় ৩০০ জওয়ানের একটি বাহিনী নিয়ে এগিয়ে এসেছিল চিনা লালফৌজ। সংখ্যায় বেশি আছে বুঝতে পেরে দাদাগিরি শুরু করে দেন তাঁরা। বোঝাতে গেলে প্রথম থেকেই ‘যুদ্ধং দেহি’ মনোভাব দেখাতে শুরু করে পিএলএ। চলে আঙুল উঁচিয়ে হুমকি। একটা সময় ভারত ও ভারতীয় ফৌজ সম্পর্কে গালিগালাজ শুরু করে দেন তাঁরা। তারপর ভারতীয় জওয়ানদের ধাক্কা মেরে সরিয়ে এগিয়ে যেতে গেলে সংঘর্ষ বেঁধে যায়।প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের দাবি, চিনা লালফৌজের এটা একটা পুরনো চাল। শত্রুর মনোবল ভেঙে দিতে ‘মাইন্ড গেম’ খেলতে শুরু করেছিল তাঁরা। কিন্তু মাথা ঠান্ডা রেখে চিনের সেই ছক বানচাল করে দেন ভারতীয় জওয়ানরা। বরং পাল্টা মার খেয়ে ধীরে ধীরে পিছু হঠে চিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eighteen − sixteen =