করমণ্ডল এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনা নিয়ে এবার মুখ খুলল রেল মন্ত্রক। রবিবার সাংবাদিক বৈঠকে জানানো হয়, শুধুমাত্র করমণ্ডল এক্সপ্রেসই দুর্ঘটনার কবলে পড়়েছে। তিনটি ট্রেনের দুর্ঘটনার কবলে পড়ার তথ্য সঠিক নয়। বালেশ্বরের বাহানাগা স্টেশনে চারটি লাইন ছিল। মাঝের দু’টি আপ ও ডাউন মেন লাইন। আর দু’পাশে দু’টো লুপ লাইন। ওই লাইনে সাধারণত মালগাড়ি রাখা থাকে। এরই পাশাপাশি রেল মন্ত্রকের তরফ থেকে এও বলা হয়, শালিমার থেকে আসা করমণ্ডল এক্সপ্রেস ও চেন্নাই থেকে আসা সুপার ফাস্ট এক্সপ্রেস এই দু’টি ট্রেনই মেন লাইন দিয়ে থ্রু হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। সেইমতো আসছিলও ট্রেনগুলি। দুই লাইনেরই সিগন্যাল সবুজ ছিল। ফলে গতি কমানো, বা দাঁড় করানোর কোনও প্রশ্নই ছিল না চালকদের। করমণ্ডল এক্সপ্রেসের স্পিড ছিল প্রতি ঘণ্টায় ১২৮ কিলোমিটার আর চেন্নাই-হাওড়া সুপার ফাস্ট এক্সপ্রেসের স্পিড ছিল প্রতি ঘণ্টায় ১২৬ কিলোমিটার। যেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেই জায়গায় স্পিড লিমিট ছিল প্রতি ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার। ফলে এটা স্পষ্ট যে, কোনও ট্রেনই ওভার স্পিড ছিল না। এদিকে শনিবার ওড়িশায় রেল দুর্ঘটনার প্রাথমিক রিপোর্টে জানানো হয়েছিল সিগন্যালিংয়ের সমস্যার কারণে করমণ্ডল এক্সপ্রেস শুক্রবার ঢুকে পড়েছিল লুপলাইনে, ধাক্কা মারে লোহা ভর্তি মালগাড়ির পিছনে। এদিন রেলবোর্ডের শীর্ষ আধিকারিক জয়া ভার্মা সিনহাও সেই একই ইঙ্গিত করেন। তবে পাশপাশি তিনি এও জানান,রেল বোর্ডে কমিশনার অফ রেলওয়ে সেফটির রিপোর্টের অপেক্ষায় রয়েছে।
তবে শুক্রবারের এই দুর্ঘটনা প্রসঙ্গে রেল বোর্ডের সদস্য জয়া ভার্মা সিনহা এদিনের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট যে, সিগন্যালের ত্রুটির কারণেই দুর্ঘটনা ঘটেছে তা নিশ্চিত করা গেছে। পাশাপাশি রেল বোর্ডের এই সদস্য আরও জানান, এই দুর্ঘটনাকে ব্যর্থতা বলা ঠিক হবে না।
সঙ্গে রেলমন্ত্রকের তরফ থেকে এটাও স্পষ্ট ভাবে জানানো হয় যে, যে দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেটা শুধুমাত্র করমণ্ডল এক্সপ্রেসেই। এই দুর্ঘটনাকে কখনই তিনটি ট্রেনের দুর্ঘটনা বলা যায় না। কারণ হিসেবে জয়া সিনহা জানান, কিছু কারণের জন্য এই দুর্ঘটনা ঘটেছে, ইঞ্জিন ও কোচ একে অপরের ওপর উঠে গেছে। অর্থাৎ, রেলের কথায়, একাধিক ট্রেন দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে এই ধারণা একেবারে ঠিক নয়। এখানে একটি ট্রেনই দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে। তা হল করমণ্ডল এক্সপ্রেস। এই ট্রেনটি কোনও নির্দিষ্ট কারণবশত দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল। আপ লুপ লাইনে মালগাড়িটি দাঁড়িয়েছিল। তারসঙ্গে করমণ্ডলের ধাক্কা লাগে এবং মালগাড়িটির উপর ইঞ্জিন উঠে যায়।
পাশাপাশি রেলের তরফ থেকে এও জানানো হয় যে, এই ট্রেনটি ফুলস্পিডে ছিল। ট্রেনটির কোচগুলি এলএইচবি কোচ সাধারণত এই ধরনের কোচগুলি বেশি সুরক্ষিত হয়। কিন্তু, মালগাড়ির সঙ্গে ধাক্কা লাগে এবং তার প্রভাব পড়ে বগিগুলিতে। এরপরই করমণ্ডল এক্সপ্রেসের কিছু বগি এদিক ওদিক ছড়িয়ে পড়ে এবং তা ডাউন মেন লাইনে চলে আসে। এরপর তা ধাক্কা লাগে।
এদিন রেলের তরফে জয়া বর্মা সিনহা এও জানান, ‘রেলের হেলপ লাইন নম্বর ১৩৯ সবসময় চালু রয়েছে। সেখানে রেলের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা রয়েছেন এবং যথাসম্ভব মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। যাঁরা ওই ট্রেনে ছিলেন তাঁদের পরিবারের সদস্যরা আমাদের যোগাযোগ করতে পারেন। আমরা চেষ্টা করব তাঁদের নিকটজনের সঙ্গে মিলিত করার। তাঁদের যাতায়াতের খরচ এবং অন্যান্য খরচ আমরা বহন করব।’
শুক্রবার যে ঘটনাগুলি দুর্ঘটনা বর্ণনা করে জয়া ভার্মা সিনহা এও জানান, মালগাড়িটি লাইনচ্যুত হয়নি। যেহেতু সেটিতে লোহা ছিল, সেই কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল করমণ্ডল এক্সপ্রেস। বিপুল সংখ্যাক মৃত্যু এবং আহত যে কারণেই হয়েছে। পাশাপাশি এও জানান, করমণ্ডল এক্সপ্রেসের বলিগুলি লাইনচ্যুত হয়ে ডাউন লাইনের ওপরে চলে যায়। যা সেই সময় ঘন্টায় ১২৬ কিমি বেগে চলা যশবন্তপুর এক্সপ্রেসের শেষ দুটি কামরাকে আঘাত করে।
এই প্রসঙ্গে সামনে আসে বিশেষ সুরক্ষা প্রযুক্তি কবচের কথাও। এই প্রসঙ্গে তিনি জানান, কবচের জন্য অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে তহবিল বরাদ্দ করা হয়েছে। তবে কবচ প্রতি বিভাগেই দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি। তবে এদিন জয়া ভার্মা সিনহার বক্তব্যে এটাও স্পষ্ট যে, যে পরিস্থিতিতে শুক্রবারের দুর্ঘটনা, তাতে এই কবচ কাজ করত না। কারণ ট্রেনের দূরত্ব ছিল মাত্র ১০০ মিটার। কবচের জন্য দরকার ৬০ মিটার। এটি আবার মেইন লাইনে কাজ করে না। এছাড়াও এখনও নাশকতার কারণও উড়িয়ে দেওয়া হয়নি বলে জানান তিনি।