ভারত সিরিজ জিতবে, একথা আগে থেকেই জানাই ছিল। কিন্তু সিরিজ জয়ের পথ যে এতটা কঠিন হবে, সেটা হয়তো কেউ কল্পনাও করতে পারেননি। দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় টেস্টে এমনই এক নাটকীয় লড়াইয়ের সাক্ষী থাকল ক্রিকেটপ্রেমীরা। শুভমান গিলের নেতৃত্বে ভারত শেষ পর্যন্ত সিরিজ জিতেছে ঠিকই, তবে ক্যারিবিয়ানদের মরণপণ প্রতিরোধ ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে গভীর ছাপ ফেলেছে।
ঘরের মাঠে প্রথমবার জাতীয় দলকে নেতৃত্ব দিতে নামা শুভমান গিলের অধিনায়কত্বে আহমেদাবাদের প্রথম টেস্টে ভারতীয় দল আড়াই দিনে উড়িয়ে দিয়েছিল প্রতিপক্ষকে। তাই দ্বিতীয় টেস্টও অনেকেই ভেবেছিলেন একতরফা হবে। কিন্তু এই ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটাররা প্রমাণ করলেন, তাঁদের আত্মসম্মান এখনো টিকে আছে। টসের সময়েই ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক জানিয়ে দিয়েছিলেন, তাঁর লক্ষ্য অন্তত ৯০ ওভার ব্যাট করা। কিন্তু ম্যাচ শেষে দেখা গেল, দুই ইনিংস মিলিয়ে প্রায় ২০০ ওভার ব্যাট করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ—যা অনেকের কাছেই নৈতিক জয়ের সমান।
প্রথম ইনিংসে শুভমান গিলের ভারত ৫১৮ রানের পাহাড় গড়ে। যশস্বী জয়সওয়াল ও শুভমান গিলের জোড়া সেঞ্চুরিতে ভর করে সহজেই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয় ভারত। জবাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২৪৫ রানে গুটিয়ে যায়। এরপর শুভমান কোনো দেরি না করেই প্রতিপক্ষকে ফলো অন করান। ২৭০ রানে পিছিয়ে থেকেও ক্যারিবীয়রা দ্বিতীয় ইনিংসে দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন ঘটায়। জন ক্যাম্পবেল ও শাই হোপের জোড়া শতরান ইনিংস হার বাঁচিয়ে দেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজকে।
দ্বিতীয় ইনিংসে তাঁদের দৃঢ়তা দেখে ম্যাচে নতুন প্রাণ ফিরে আসে। শেষ পর্যন্ত রস্টন চেজরা ভারতকে জয়ের জন্য ১২১ রানের লক্ষ্য দেয়। রান তাড়া করতে নেমে শুরুতেই তিন উইকেট হারায় ভারত, ম্যাচ তখন কার্যত দোলাচলে। কিন্তু কে এল রাহুলের শান্ত মাথায় খেলা হাফসেঞ্চুরি ভারতের জয় নিশ্চিত করে। তিনিই শেষ পর্যন্ত দলকে নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছে দেন।
এই সিরিজে ব্যাট হাতে উজ্জ্বল ছিলেন যশস্বী জয়সওয়াল, যিনি ২১৯ রান করে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। তাঁর পরেই রয়েছেন কে এল রাহুল। বল হাতে সবচেয়ে সফল কুলদীপ যাদব, পুরো সিরিজে পেয়েছেন ১২ উইকেট। শুভমান গিলের অধিনায়কত্বে ভারত সিরিজ জিতলেও, দলের কিছু দুর্বলতা প্রকাশ্যে এসেছে—বিশেষত দ্বিতীয় ইনিংসে বোলারদের ধার কমে যাওয়ায়।
আগামী মাসে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে সিরিজে নামবে ভারত। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে এমন চাপে পড়া গম্ভীরের নেতৃত্বাধীন টিম ম্যানেজমেন্টকে চিন্তায় ফেলবেই। কারণ প্রোটিয়ারা আরও শক্তিশালী প্রতিপক্ষ। তবু এই সিরিজ ভারতের জন্য এক মূল্যবান শিক্ষা—যে, টেস্ট ক্রিকেটে এখন আর ‘সহজ জয়’ বলে কিছু নেই। মাঠে প্রতিটি মুহূর্তে লড়াই করেই জিততে হয়।

