ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডকে বাগে আনতে ভরসা স্পিনই। সেই ফাঁদে নিজেদেরই পড়তে হবে এমনটা কে ভেবেছিল! ভারত সফরে আসার আগে আবু ধাবিতে শিবির করেছে ইংল্যান্ড ক্রিকেট দল। মূলত স্পিন সহায়ক পিচের জন্যই প্রস্তুতি। তাতেও অবশ্য স্বস্তিতে ছিল না ইংল্যান্ড। তাদের স্পিন বোলিং আক্রমণ অনভিজ্ঞ। ভারতের স্পিনত্রয়ীর অভিজ্ঞতার কাছে অনেক অনেক পিছিয়ে। সমস্যাটা হল ব্যাটিংয়ে। চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করা এত সহজ নয়। ভারতীয় ব্যাটাররা হাড়ে হাড়েই টের পেলেন। চার দিনেই ম্যাচ পকেটে পুরে নিল ইংল্যান্ড। দলকে ভেন্টিলেশন থেকে বের করার কিছুটা চেষ্টা করেন অশ্বিন-ভরত। কিন্তু সফল হননি। ২৮ রানে হার। সিরিজে পিছিয়ে পড়ল ভারত।
দক্ষিণ আফ্রিকায় পিচ বিতর্কের পর ক্ষুব্ধ ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা বলেছিলেন, কোনও দল যেন ভারতের পিচ নিয়েও কান্নাকাটি না করে। কয়েক দিন আগেই ইংল্যান্ড ব্যাটার ওলি পোপ একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তিনি ভারতে স্পিন সহায়ক পিচই প্রত্যাশা করছেন এবং তা নিয়ে কোনও অসুবিধা নেই। শুধু কথায় নয়, পারফরম্যান্সেও দেখিয়ে দিলেন পোপ। তৃতীয় দিনের শেষে ১৪৮ রানে অপরাজিত ছিলেন। শেষ উইকেট হিসেবে আউট হন তিনিই। যতটা সম্ভব রান যোগ করাই লক্ষ্য ছিল। রিভার্স র্যাম্প খেলতে গিয়ে বোল্ড হন। একটু দেখে শুনে খেললে হয়তো ডাবল সেঞ্চুরিও হয়ে যেত। ১৯৬ রানে থামেন পোপ। ভারতের লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৩১ রান।
মনে হতেই পারে, লক্ষ্যটা বিশাল নয়। তবে চতুর্থ দিনের পিচে! অবশ্যই কঠিন। অভিষেককারী বাঁ হাতি স্পিনার টম হার্টলি প্রথম ইনিংসে স্নায়ুর চাপে ভুগছিলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে যেন অভিজ্ঞতা অনেকটা বেড়ে গিয়েছে তাঁর। লাইন-লেন্থ পুরোপুরি আলাদা। সুফলও পেলেন দ্রুত। শুরুতেই ভারতের তিন উইকেট হার্টলির ঝুলিতে। পরিসংখ্যান বলছে, যেখানে বল বেশি টার্ন করে, সেই পিচে ভারতই হেরেছে। এই ম্যাচেও গড় টার্ন ৪.২ ডিগ্রি!
রান তাড়ায় দলীয় ১০৭ স্কোরে লোকেশ রাহুল আউট হতেই ভারতের আত্মবিশ্বাস কমতে থাকে। তখনও ভরসা ছিলেন প্রথম ইনিংসের নায়ক রবীন্দ্র জাডেজা। তবে মিড অন বেন স্টোকসের পিক আপ থ্রোয়ে জাডেজা রান আউট। সেই থেকে হারানো বাঁচানো রীতিমতো চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। রবিচন্দ্রন অশ্বিন এবং ভরতই ‘ভাগ্য’ বিধাতা হয়ে দাঁড়ান। জুটিতে পঞ্চাশ পেরোলেও অবিচ্ছিন থাকতে পারলেন না। দিনের খেলার মাত্র ২ ওভার বাকি থাকতে ভরতও আউট। ১২ বল টিকে থাকতে হত অশ্বিন-বুমরাকে। অন্তত পঞ্চম দিন অশ্বিনও যদি ম্য়াচের রং বদলান! কিন্তু দিনের নির্ধারিত শেষ ওভারেই অশ্বিনকে ফেরান। স্টেপ আউট করে লাইন-ফ্লাইট সবই মিস অশ্বিনের। উইকেটের পিছনে মিস করেননি বেন ফোকস।
নির্ধারিত সময়ে বাকি ছিল চারটে ডেলিভারি। সেই চার ডেলিভারি সামলে দিলেও লাভ হয়নি। মাত্র এক উইকেট বাকি থাকায় দিনের খেলার সময় বাড়ানো হয়। সিরাজ-বুমরা জুটি কতক্ষণ টিকবে সেটাই যেন দেখার ছিল। এই জুটি দুর্দান্ত পরিস্থিতি তৈরি করে। একেক সময় মনে হচ্ছিল, এই জুটি ইংল্যান্ডকে হতাশ করতেই পারে। অতিরিক্ত সময়ের শেষ ওভারের প্রথম বলেই আউট মহম্মদ সিরাজ। মাত্র ২৮ রানে হার ভারতের। ব্রিসবেনের মতো, রুদ্ধশ্বাস একটা টেস্ট হায়দরাবাদে। বেঁচে রয়েছে টেস্ট ক্রিকেট।