প্রবল বায়ুদূষণের জেরে ভেস্তে গেল ভারত বনাম দক্ষিণ আফ্রিকার চতুর্থ টি-২০ ম্যাচ। বুধবার নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই লখনউয়ের একানা স্টেডিয়ামে হাজির হয় দুই দল, ম্যাচ অফিসিয়াল ও দর্শকেরা। কিন্তু প্রকৃতির সামনে শেষ পর্যন্ত হার মানতে হল ক্রিকেটকেই। নির্ধারিত সময়ের আড়াই ঘণ্টা পর্যন্ত বারবার মাঠ ও আশপাশের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন আম্পায়াররা। ছ’বার পরিদর্শনের পরও অবস্থার কোনও উন্নতি না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত ম্যাচ বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
মূল সমস্যা ছিল প্রবল ধোঁয়াশা। দূষণ আর শীতের কুয়াশা মিলিয়ে মাঠে দৃশ্যমানতা কার্যত শূন্যের কাছাকাছি নেমে আসে। বাউন্ডারি লাইনের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত তো বটেই, কাছাকাছি ফিল্ডারকেও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল না। এই অবস্থায় খেলোয়াড়দের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই বাধ্য হন আম্পায়াররা।
বুধবার লখনউয়ের বায়ুদূষণের মাত্রা ভয়াবহ আকার নেয়। ম্যাচ শুরুর সময় একিউআই পৌঁছে যায় প্রায় ৩৮৭-এ, যা ‘গুরুতর’ স্তরের অনেক ওপরে। এই দূষিত বাতাসে দীর্ঘক্ষণ শারীরিক পরিশ্রম করলে শ্বাসকষ্ট, চোখ জ্বালা ও অন্যান্য স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে। ফলে খেলানো মানেই ক্রিকেটারদের স্বাস্থ্যের সঙ্গে আপস করা—এমন মতই উঠে আসে ম্যাচ অফিসিয়ালদের আলোচনায়।
লখনউয়ের পরিস্থিতি কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। গোটা উত্তর ভারতই বর্তমানে দূষণের দাপটে জর্জরিত। কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রক বোর্ড (সিপিসিবি)-এর তথ্য অনুযায়ী, বুধবার সকাল ৭টায় দিল্লির একিউআই ছিল ৩৭৭। যদিও মঙ্গলবার তা ছিল আরও ভয়াবহ—৪৯৮। অর্থাৎ সংখ্যায় সামান্য উন্নতি হলেও বাস্তবে দূষণের প্রাবল্য কমেনি। তার জেরেই বুধবার সকালে দিল্লি বিমানবন্দর থেকে বাতিল করতে হয়েছে অন্তত ১০টি বিমান। কুয়াশা ও ধোঁয়াশার যুগলবন্দিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন।
এই অবস্থায় প্রশ্ন উঠছে, ডিসেম্বর মাসে কেন উত্তর ভারতের শহরে আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজন করা হল? গত কয়েক বছর ধরেই শীতকাল এলেই দিল্লি, লখনউ, কানপুর-সহ একাধিক শহর বায়ুদূষণের কবলে পড়ে। তা সত্ত্বেও সূচি নির্ধারণের সময় বিষয়টি কতটা গুরুত্ব পেয়েছে, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন অনেকেই। ক্রীড়াপ্রেমীদের একাংশের মতে, এই সময় দক্ষিণ বা পশ্চিম ভারতের শহরে ম্যাচ আয়োজন করা হলে এমন পরিস্থিতি এড়ানো যেত।
নেটদুনিয়াতেও ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন ক্রিকেটভক্তরা। অনেকে নিজেদের শহরের একিউআই শেয়ার করে বলেছেন, তাঁদের শহরে বাতাস তুলনামূলকভাবে অনেক পরিষ্কার ছিল। আবার কেউ কেউ প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। অভিযোগ, দূষণ নিয়ন্ত্রণে কাগজে-কলমে নানা পরিকল্পনা থাকলেও বাস্তবে তার কার্যকর প্রয়োগ দেখা যাচ্ছে না।
সব মিলিয়ে লখনউয়ের বাতিল ম্যাচ শুধু একটি ক্রিকেট ম্যাচ ভেস্তে যাওয়ার খবর নয়, বরং তা উত্তর ভারতের ক্রমবর্ধমান পরিবেশ সংকটেরই প্রতিচ্ছবি। সিরিজের পঞ্চম ও শেষ টি-২০ ম্যাচ হবে আহমেদাবাদে। আশা করা হচ্ছে, সেখানে অন্তত দূষণ ক্রিকেটে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। তবে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—পরিবেশ বাঁচাতে আমরা আদৌ যথেষ্ট সচেতন হচ্ছি তো?

