ক্যাঙ্গারু বাহিনীর কাছে শেষ ম্যাচে হেরে ওয়ান-ডে সিরিজ হাতছাড়া ভারতের

বছরের শুরু থেকেই দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছে ভারত। শ্রীলঙ্কার পর নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধেও একদিনের সিরিজ জয়। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধেও সিরিজ জয়ের হাতছানি। সিরিজ জিতলে একদিনের ক্রিকেটে শীর্ষস্থানও ধরে রাখতে পারবে এমনই এক অবস্থায় দাঁড়িয়ে ছিল ভারত। তবে এদিন চেন্নাইয়ের এমএ চিদম্বরম স্টেডিয়ামে ব্যাট হাতে কোহলি, রোহিত, হার্দিক, গিল রান পেলেও কোথাও দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যাটিং, আত্মতুষ্টি, ভুল শট নির্বাচন, উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে আসা এবং ধারাবাহিক ব্যর্থতার জেরে অজিদের বিরুদ্ধে শেষ ওয়ানডেতে হার মানতে হল ভারতীয় দলকে। শেষ ওয়ানডেতে ২১ রানে পরাস্ত হয়ে ৩ ম্যাচের সিরিজ ২-১ ম্যাচের ব্যবধানে সিরিজে হার রোহিত ব্রিগেডের।
এদিন ১৭ বলে ৩০ রান করেন রোহিত, ৩৯ বলে ৩৭ রান করেন শুভমন গিল আর কোহলি ৭২ বলে করেন ৫৪ রান। তাঁদের ব্যাটের ওপরে ভর করে এগোতে থাকে ভারতের ইনিংস। তাঁদের ভাল সঙ্গত দেন হার্দিক আর রাহুলও। হার্দিকের ৪০ বলে ৪০ রানের ইনিংস বা রাহুলের ৫০ বলে ৩২ রান ভারতকে এগিয়ে নিয়ে গেলেও কোথাও একটা ধরা পড়ছিল আত্মতুষ্টি। আর এই আত্মতুষ্টিই ডোবাল ভারতকে। ফলে কাজের কাজ কিছু-ই হল না।
অধিনায়ক রোহিত দলগত ৬৫ রানের মাথায় নিজের উইকেটটি কার্যত ছুঁড়ে দিয়ে আসতেই শুরু হয়ে যায় ভাঙন। অধিনায়কোচিত ইনিংস খেলেও শেষে ছউঁডেই দিয়ে আসেন উইকেটটা। এরপর সেই পেথে হাঁটেন অন্যারাও। গিল ৩৭ রান করে এলবিডব্লিউ হলেও, হাফ সেঞ্চুরি করেও বিরাট কোহলি ভুল শট খেলে আউট হন। সেট হওয়ার পর ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে আউট হন রাহুল। অক্ষর প্যাটেলের রান আউট দুর্ভাগ্যজনক। এদিন ফের ব্যর্থ সূর্যকুমার যাদব। অথচ, টি-টোয়েন্টিতে তিনি বিশ্বসেরা ব্যাটসম্যান। অনেকেই তাঁকে আধুনিক ক্রিকেটের ‘মিস্টার ৩৬০ ডিগ্রি’ বলে আখ্যাও দিয়ে ফেলেছেন। অথচ এই সূর্যকুমারই ওয়ানডে ক্রিকেটে আদৌ দলে থাকার যোগ্য কিনা সেটা নিয়ে বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন উঠে গেল চেন্নাই ওয়ানডের পর। কাণ, এদিনও ফের ‘গোল্ডেন ডাক’ অর্থাৎ প্রথম বলে শূন্য রান করে প্যাভিলিয়নে ফিরলেন ভারতীয় ক্রিকেটের ‘মিস্টার ৩৬০’। মিডল অর্ডারে যাকে ঘিরে আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখছেন রোহিত শর্মা, রাহুল দ্রাবিড়রা, সেই সূর্যকুমার চলতি সিরিজের ৩ ম্যাচেই এক বলে শূন্য রান করে আউট হন। ব্যাটিং অর্ডারে সূর্যর ৪ নম্বরে নামার হলেও এদিন তাঁকে নামানো হয় ৬ নম্বরে। কারণ, আগের দু’ম্যাচে মিচেল স্টার্কের জোরাল ইনসুইংয়ের শিকার হয়েছিলেন সূর্য। দুটি ম্যাচেই একইভাবে আউট হন তিনি। সম্ভবত সেকারণেই এদিন নিজের প্রিয় ক্রিকেটারকে স্টার্কের সামনে ফেলতে চাননি রোহিত। এদিন সামনে স্টার্ক না থাকলেও সূর্যের ভাগ্য বিশেষ বদলায়নি। এদিনও তিনি প্রথম বলেই আউট হন বাঁহাতি স্পিনার অ্যাস্টন আগরের বলে।
তবে এদিন রোহিত শর্মার ভারতের বিরুদ্ধে তৃতীয় ওডিআই-এ টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং করে স্টিভ স্মিথের অস্ট্রেলিয়া। ডেভিড ওয়ার্নার প্রথম একাদশে ফিরলেও ওপেনিংয়ে নামেননি। চিপকে তৃতীয় ওডিআইতে এদিন ট্রাভিস হেড ও মিচেল মার্শ জুটি ওপেন করে।শুরুটা ভালোই করেছিল অজিরা। ১০ ওভার অবধি কোনও উইকেট পাননি ভারতীয় বোলাররা। এরপর ক্যাঙ্গারুদের প্রথম ধাক্কা দেন হার্দিক পান্ডিয়া। সেই শুরু এরপর মাঝে মধ্যে উইকেট হারালেও শেষ অবধি ৪৯ ওভার অবধি খেলে অজিরা। ১ ওভার অবধি বাকি থাকতেই ২৬৯ রান তুলে অল আউট হয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। অর্থাৎ, চেন্নাইয়ে সিরিজ নির্ণায়ক ম্যাচে ভারতকে জিততে হলে করতে হবে ২৭০ রান।
সিরিজ নির্ণায়ক ম্যাচে ভারত একই দল ধরে রাখলেও প্রথম একাদশে দুটি পরিবর্তন করে অস্ট্রেলিয়া। হালকা অসুস্থ থাকায় ক্যামেরন গ্রিনের পরিবর্তে প্রথম একাদশে আসেন ডেভিড ওয়ার্নার। আর চিপকের স্পিন সহায়ক উইকেটের কথা মাথায় রেখে নাথান এলিসের পরিবর্তে সুযোগ দেওয়া হয় অ্যাস্টন অ্যাগারকে। এদিন টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং করে স্মিথের লক্ষ্য ছিল ভারতের ওপর বড় রানের ইনিংস চাপিয়ে দেওয়া। ব্যাট করতে নেমে ভালোও শুরু করেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার দুই ওপেনার ট্রেভিস হেড ও মিচেল মার্শ। আগের ম্যাচের মতোই আক্রমণাত্মক মেজাজেই খেলতে দেখা যায় তাঁদের। এরপর ওপেনিং জুটিতে ওঠে ৬৮। একাদশ ওভারে ভারতকে ব্রেক থ্রু এনে দেন হার্দিক পান্ডিয়া। পঞ্চম বলে তুলে নেন ট্রেভিস হেডকে। ৩১ বলে ৩৩ রান করে আউট হন ট্রেভিস হেড। এক ওভার পরেই স্মিথকেও শূন্য রানে প্যাভিলিয়‌নে ফেরার পথ দেখান হার্দিক। অস্ট্রেলিয়া সবথেকে বড় ধাক্কা খায় ১৫তম ওভারে। দুর্দান্তু ফর্মে থাকা মিচেল মার্শকে যখন ৪৭ রানে আউট করেন হার্দিক। অফস্টাম্পের বাইরের বল ব্যাটের কানায় লাগিয়ে বোল্ড হন মার্শ। ৪৭ বলে তিনি করেন ৪৭। মাত্র ৩ রানের জন্য টানা ৩ মাচে হাফসেঞ্চুরি হাতছাড়া। এদিকে ১৬ ওভার শেষ হতে না হতেই, কেএল রাহুল আচমকাই মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যান। তাঁর জায়গায় ঈশান কিষানকে উইকেটকিপিং করতে দেখা যায়।
মার্শ আউট হওয়ার পর অস্ট্রেলিয়াকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন সিরিজে প্রথমবার মাঠে নামা ডেভিড ওয়ার্নার ও মার্নাস লাবুশানে। দুজনই ভালো খেলছিলেন। হঠাৎ-ই বাজে শট খেলে কুলদীপ যাদবকে প্রায় নিজের উইকেটটা উপহার দিয়েই চলে যান ওয়ার্নার ও লাবুশানে। ৩১ বলে ২৩ রান করেন ওয়ার্নার। লাবুশানে করেন ৪৫ বলে ২৮। তবে অস্ট্রেলিয়াকে বড় রানের স্বপ্ন দেখাচ্ছিলেন অ্যালেক্স ক্যারে ও মার্কাস স্টয়নিস। ষষ্ঠ উইকেটের জুটিতে তোলেন ৫৮। অক্ষর প্যাটেলকে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে লং অন বাউন্ডারিতে শুভমানের হাতে ধরা পড়েন স্টয়নিস (‌২৬ বলে ২৫)‌। স্টয়নিস আউট হওয়ার পরপরই ফিরে যান অ্যালেক্স ক্যারে (‌৪৬ বলে ৩৮)‌। শেষ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়াকে ২৬৯ রানে পৌঁছে দেন শন অ্যাবট (‌২৩ বলে ২৬)‌, অ্যাস্টন অ্যাগার (‌১৭)‌, মিচেল স্টার্ক (‌১০)‌, জাম্পারা (‌অপরাজিত ১০)‌। কুলদীপ যাদব ও হার্দিক পান্ডিয়া ৩টি করে উইকেট নেন। ২টি করে উইকেট পান সিরাজ ও অক্ষর প্যাটেল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

nineteen − 2 =