ভারত দাবায় পেল নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন

ওস্তাদের মার শেষ রাতে। ১২তম রাউন্ডেও মনে হচ্ছিল গুটিগুটি চিনের দিকে পা বাড়িয়েছে খেতাব। ১৩তম রাউন্ডে রুপোলি ঝলক দেখিয়েছিলেন। আর ১৪তম রাউন্ডে? ওস্তাদের বাজিমাত। সর্বকনিষ্ঠ দাবাড়ু হিসেবে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হলেন ভারতের দোম্মারাজু গুকেশ। চৌষট্টি খোপের খেলায় ভারত এতদিন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন মানে বুঝত বিশ্বনাথন আনন্দ। সেই তাঁরই ছত্রছায়ায় বেড়ে ওঠা একঝাঁক তরুণ সমস্ত হিসেব পাল্টে দিচ্ছেন। গুকেশের সাফল্যে যেন বিশ্ব দাবায় ভারতের পুনর্জন্ম হল। এই প্রথমবার বিশ্ব দাবা চ্যাম্পিয়নশিপে নেমেছিলেন গুকেশ। আর তাতেই বাজিমাত। কিংবদন্তি দাবাড়ু ম্যাগনাস কার্লসেনও কেরিয়ারের প্রথম বিশ্ব দাবা চ্যাম্পিয়নশিপে জিততে পারেননি। আর সেটাই করে দেখালেন ভারতের টিনএজার গুকেশ।

চিনের ডিং লিরেনের সঙ্গে লড়াইটা কঠিনই বলছিলেন বিশেষজ্ঞরা। ১৮ বছরের গুকেশ দুরন্ত ফর্মে থাকলেও নার্ভ ধরে রাখতে পারেন কিনা, দেখার জন্য অপেক্ষায় ছিলেন প্রাক্তন চ্যাম্পিয়নরা। অনেকেই স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন, গুকেশ অভিনব কিছু করে দেখাতে পারেন। শুরুতে তা না হলেও গুকেশই উল্টে দিলেন পাশা। দাবা বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ শুরু হয়েছিল ২৫ নভেম্বর। ১৮দিন পর বিশ্ব দাবার সোনার মঞ্চে উঠে দাঁড়ালেন গুকেশই। প্রথম রাউন্ডের ম্যাচে লিরেনের কাছে হেরে গিয়েছিলেন গুকেশ। কিন্তু নিজের স্ট্র্যাটেজি থেকে একবারও নড়েননি। তৃতীয় গেমে দুরন্ত ফিরে আসেন গুকেশ। লিরেনকে হারিয়ে দেন। পরের ৭ রাউন্ড টানা ড্র। ১১তম গেমে গুকেশ আবার নড়িয়ে দেন লিরেনের ডিফেন্স। পরের গেমেই আবার চিনের দাবাড়ু জয় তুলে নেন। তাতেও গুকেশ ঘাবড়াননি। বরং অপেক্ষা করেছিলেন সুযোগের। ১৪তম গেমে সাদা ঘুঁটি নিয়ে বাজিমাত করলেন গুকেশ।

চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর গুকেশ বলেছেন, ‘বড় আসরে প্রতিপক্ষের ভুলের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। লিরেনও এমন একটা ভুল করেছিল, যা আমার সুবিধে করে দেয়। লিরেন দাবায় অত্যন্ত নামি প্লেয়ার। প্রায় কিংবদন্তির পর্যায়ে। ও যখন ভুলটা করে, আমি তখন থমকে গিয়েছিলাম। এমন কোনও চাল সঙ্গে সঙ্গে দিতে চাইনি, যা আমার বিরুদ্ধে যেতে পারে। লিরেনের বিরুদ্ধে জিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়া অসাধারণ তৃপ্তি। ৬ বছর বয়স থেকে দাবা খেলছি। এই স্বপ্নটাই লালন-পালন করছিলাম এতদিন। অবশেষে মুঠোয় ধরা দিল।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

12 + 8 =