তর্জন-গর্জনই সার! বাংলা টাইগারদের হারিয়ে এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারত

এশিয়া কাপে সুপার ফোর পর্বে কার্যত সেমিফাইনালের লড়াইয়ে মুখোমুখি হয়েছিল ভারত ও বাংলাদেশ। ম্যাচের আগে বাংলাদেশ কোচ ফিল সিমন্স আত্মবিশ্বাসী মন্তব্য করেছিলেন যে, টিম ইন্ডিয়াকে যে কোনও দল হারিয়ে দিতে পারে। কিন্তু বাস্তবে মাঠে তার কোনও প্রতিফলন দেখা গেল না। ভারতের সামনে তর্জন-গর্জনই সার হলো বাংলাদেশের। ৪১ রানের ব্যবধানে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে কার্যত ছিটকে গেল তারা। অন্যদিকে এই জয়ে ফাইনালে প্রবেশ করল সূর্যকুমার যাদবের নেতৃত্বাধীন ভারত।

ভারতের দেওয়া লক্ষ্য ছিল ১৬৯ রান। রানচেজে নামতেই শুরুতে বিপর্যয়ের মুখে পড়ে বাংলাদেশ। জশপ্রীত বুমরাহ তার আগ্রাসী বোলিংয়ে মাত্র ১ রানে তানজিদ হাসানকে ফিরিয়ে দেন। শুরু থেকেই ভারতীয় পেস আক্রমণের কাছে ব্যাকফুটে চলে যায় বাংলাদেশি ব্যাটাররা। তবে এরপর দলকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন ওপেনার সইফ হাসান ও পারভেজ হোসেন ইমন। পাওয়ার প্লেতে তারা তুলেছিল ৪৪ রান। ৪২ রানের গুরুত্বপূর্ণ জুটি গড়ে ম্যাচে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন এই দুজন।

কিন্তু তখনই আক্রমণে আসেন কুলদীপ যাদব। বাঁহাতি এই চাইনাম্যান বোলার আবারও প্রমাণ করলেন, মাঝের ওভারে তিনি কতটা ভয়ঙ্কর। ইমনকে মাত্র ২১ রানে ফেরান তিনি। এরপর ক্রিজে আসা তাওহিদ হৃদয়ও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি, তাঁকে মাত্র ৭ রানে আউট করেন অক্ষর প্যাটেল। একপ্রান্তে সইফ লড়াই চালালেও অন্য প্রান্তে একের পর এক উইকেট হারাতে থাকে বাংলাদেশ। শামিম হোসেন শূন্য রানে বরুণ চক্রবর্তীর শিকার হন। লিটন দাসের অনুপস্থিতিতে অধিনায়কত্বের দায়িত্ব পাওয়া জাকের আলিও ব্যর্থ হন। তাঁর রানআউট ছিল ম্যাচের টার্নিং পয়েন্টগুলির একটি।

বাংলাদেশের ব্যাটিং ধসের সবচেয়ে বড় কারণ ছিল কুলদীপের স্পেল। রিশাদ হোসেন (২) এবং তানজিম হাসান (০)-কে টানা দুই বলে ফিরিয়ে হ্যাটট্রিকের সামনে পৌঁছে গিয়েছিলেন তিনি। যদিও সেই রেকর্ড আর হয়নি, কিন্তু তাঁর তিনটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেটই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। অন্যদিকে, উইকেটের অন্য প্রান্তে একা লড়ে যাচ্ছিলেন সইফ হাসান। ধৈর্যের সঙ্গে খেলতে খেলতে তিনি ৬৯ রানের দারুণ ইনিংস উপহার দেন। কিন্তু সঙ্গীর অভাবে তাঁর লড়াই বৃথা যায়। শেষ পর্যন্ত বুমরাহ তাঁকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে কার্যত ম্যাচের বাইরে ঠেলে দেন।

পুরো বাংলাদেশ দল ১৯.১ ওভারে গুটিয়ে যায় ১২৭ রানে। ভারতের বোলারদের মধ্যে কুলদীপ যাদব নেন ৩ উইকেট। বুমরাহ ও বরুণ চক্রবর্তী পান ২টি করে উইকেট। অক্ষর প্যাটেলের ঝুলিতে যায় ১ উইকেট। তবে এই ম্যাচে ভারতীয় ফিল্ডিংয়ের কিছু ত্রুটি চোখে পড়েছে। পাকিস্তানের ম্যাচের মতো এদিনও কয়েকটি সহজ ক্যাচ মিস করে ভারতীয় ক্রিকেটাররা। ফাইনালের আগে এই বিষয়টি অবশ্যই ভাবাবে কোচ রাহুল দ্রাবিড় ও টিম ম্যানেজমেন্টকে।

সব মিলিয়ে, বাংলাদেশের বিপক্ষে ভারতের জয় অনেকটাই সহজ হয়েছে। বাংলাদেশের একমাত্র ভরসা ছিলেন সইফ হাসান, কিন্তু তাঁকে যোগ্য সমর্থন দিতে পারেননি কেউ। অন্যদিকে ভারতীয় বোলাররা দলগত পারফরম্যান্সে আবারও প্রমাণ করলেন কেন তারা ফাইনালের অন্যতম দাবিদার। সেমিফাইনালতুল্য এই ম্যাচে জিতে ভারত এখন পুরো আত্মবিশ্বাস নিয়ে ফাইনালে পা রাখল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

thirteen + thirteen =