অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তন, বেলিংহ্যাম-কেনের গোলে শেষ আটে ইংল্যান্ড

একটুর জন্য অঘটনের হাত থেকে রেহাই। ইউরো কাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ড। ১২০ মিনিটের ফুটবলে রবিবার স্লোভাকিয়াকে ২-১ গোলে হারিয়ে শেষ আটের টিকিট কেটে নিল হ্যারি কেনরা‌। ৯০ মিনিট পর্যন্ত পিছিয়ে থেকেও দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন। সুইজারল্যান্ডের পর একটুর জন্য জায়ান্ট কিলারের তালিকায় নাম লেখাতে পারল না স্লোভাকিয়া। ইংল্যান্ডের কামব্যাক মনে করিয়ে দিল ইতালি-ক্রোয়েশিয়া ম্যাচকে। সেদিন মাত্র ৪০ সেকেন্ডের জন্য বদলে যায় লুকা মদ্রিচদের ভাগ্য। একেবারে শেষলগ্নে গোল করে সমতা ফেরায় ইতালি। এদিনও তারই পুনরাবৃত্তি। নব্বই মিনিটের শেষে এক গোলে এগিয়ে ছিল স্লোভাকিয়া। ছয় মিনিট অতিরিক্ত সময় দেয় রেফারি। স্টপেজ টাইমের শেষ মিনিটে দুরন্ত বাইসাইকেল কিক থেকে ১-১ করেন জুড বেলিংহ্যাম‌। এটাই ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট। এক্সট্রা টাইমের প্রথম মিনিটে জয়সূচক গোল হ্যারি কেনের। তবে পরের রাউন্ডে গেলেও দলের পারফরম্যান্স নিয়ে চিন্তা কাটবে না গ্যারেথ সাউথগেটের।

নক আউটেও ইংল্যান্ডের খারাপ পারফরম্যান্স অব্যাহত। শেষ ষোলোয় খেলার ছাড়পত্র সংগ্রহ করলেও গ্রুপ পর্বে নিজেদের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেনি হ্যারি কেনরা‌। এদিনও অনেকটাই তাই। ম্যাচের শুরু থেকে পজিটিভ ফুটবল খেললেও অ্যাটাকিং থার্ডে যাবতীয় আক্রমণ আটকে যায়। প্রথমার্ধে গোল লক্ষ্য করে খুব বেশি শট নিতে পারেনি ইংল্যান্ড। ছটা শটের মধ্যে একটাও গোলে ছিল না। হ্যারি কেনকে সামনে রেখে ৪-২-৩-১ ফরমেশনে দল সাজান গ্যারেথ সাউথগেট। সাকা, বেলিংহ্যাম, ফোডেনের ত্রিফলা আক্রমণে ভর করে বিপক্ষের রক্ষণকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলার চেষ্টা করছিল ইংল্যান্ড। কিন্তু আঁটোসাঁটো স্লোভাকিয়ার রক্ষণ। বল পজেশন ইংল্যান্ডের বেশি থাকলেও ম্যাড়ম্যাড়ে ফুটবল। বরং কাউন্টার অ্যাটাক থেকে বেশ কয়েকবার আক্রমণে ওঠে স্লোভাকিয়া। ম্যাচের ৬ মিনিটের মাথায় গোল হজম করতে পারত ইংল্যান্ড। বাঁ দিক থেকে হারাসলিনের শট ইংল্যান্ড গোলকিপার পিকফোর্ডের গা ঘেঁষে বাইরে যায়। ম্যাচের ১৩ মিনিটে আবার সুযোগ। গতি বাড়িয়ে ওয়াকারকে পরাস্ত করে বিপক্ষের বক্সে ঢুকে পড়েন হারাসলিন। তাঁর শট পিকফোর্ডের মাথার ওপর দিয়ে বেরিয়ে যায়। ম্যাচের ২৪ মিনিটে নিজেদের মধ্যে ওয়ান টু খেলে বিপক্ষের বক্সে ঢুকে পড়েন বেলিংহ্যাম এবং রাইস। কিন্তু গোলমুখ খুলতে পারেনি। তার এক মিনিটের মধ্যেই কাউন্টার অ্যাটাক থেকে স্লোভাকিয়াকে এগিয়ে দেন আইভান শ্রাঞ্জ। ডেভিড স্ট্রেলেকের পাস থেকে চলতি ইউরোতে নিজের তৃতীয় গোল করেন। জার্মানির মুসিয়ালা এবং জর্জিয়ার মিকাউতাদজের সঙ্গে চলতি টুর্নামেন্টে যৌথ সর্বোচ্চ গোলদাতা শ্রাঞ্জ। ইংল্যান্ডের আক্রমণে কোনও ঝাঁঝ ছিল না। কোনও প্ল্যান বি ছিল না সাউথগেটের। নিজেদের মধ্যে প্রচুর ব্যাকপাস এবং স্কোয়ার পাস খেললেও গোলের সুযোগ তৈরি করতে পারেনি হ্যারি কেনরা।‌ বিরতিতে এক গোলে পিছিয়ে ছিল ইংল্যান্ড।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই অনেক বেশি আগ্রাসী ফুটবল খেলে ইংল্যান্ড। পুরো অর্ধেই ফোডেন, সাকাদের দাপট ছিল। ম্যাচের ৫০ মিনিটে ট্রিপিয়ারের পাস থেকে গোল করেন ফিল ফোডেন। কিন্তু ‘ভার’ এর সাহায্য নিয়ে অফসাইডের জন্য গোল বাতিল করে দেন রেফারি। দ্বিতীয়ার্ধে টেম্পো অনেক বাড়িয়ে দেয় সাউথগেটের দল। কিন্তু গোল করতে ব্যর্থ। গোল লক্ষ্য করে ১১টি শট নিলেও একটিও গোলে রাখতে পারেনি। দ্বিতীয়ার্ধে পুরোটাই ব্যাকফুটে ছিল স্লোভাকিয়া। দুই উইং নিয়ে আক্রমণে ওঠে ইংল্যান্ড। কিন্তু স্লোভাকিয়ার রক্ষণের প্রশংসা করতে হবে। বিশেষ করে গোলকিপারের। এবারের ইউরোতে গ্রুপ পর্বে মাত্র দুটো গোল করেছে ইংল্যান্ড। এদিনও একটা সময় পর্যন্ত গোলের খরা অব্যাহত ছিল। ভাগ্যও সঙ্গ দেয়নি। ৮১ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে রাইসের দূরপাল্লার শট ক্রসপিসে লাগে। ফিরতি বল বাইরে মারেন হ্যারি কেন। নব্বই মিনিটে সমতা ফেরাতে পারেনি ইংল্যান্ড। ছয় মিনিট অতিরিক্ত সময় দেন রেফারি। শেষ মিনিটে ইংল্যান্ডকে ম্যাচে ফেরান জুড বেলিংহ্যাম‌। ৯০+৫ মিনিটে বাইসাইকেল কিক থেকে দুরন্ত গোল রিয়াল মাদ্রিদের মিডিওর। গ্রুপের শেষ ম্যাচে বিশেষ সুবিধা করতে না পারলেও, এদিন শুরু থেকেই ভাল খেলেন বেলিংহ্যাম। ম্যাচ এক্সট্রা টাইমে গড়ায়। প্রথম মিনিটেই ইংল্যান্ডকে এগিয়ে দেন হ্যারি কেন। এজের পাস হেড করে কেনকে দেন টনি। নিখুঁত হেডে ২-১ করেন ইংল্যান্ডের অধিনায়ক। মাত্র দু’মিনিটের ব্যবধানে বদলে যায় ম্যাচের ভাগ্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four × 1 =