ডিজিটাল যুগে ‘হালখাতার-ই’ হাল খারাপ

রাজীব মুখোপাধ্যায়, হাওড়া

নববর্ষের প্রথম দিনে লক্ষ্মী-গণেশ পুজো ও সঙ্গে ব্যবসায়ের লেনদেনের খাতা পুজো করে ব্যবসায়ে লক্ষীলাভের প্রার্থনা বাঙালির সু-প্রাচীন কালের প্রথা। আজকের এই হাইটেক যুগে হালখাতারই ভবিষ্যৎ বিপন্ন হয়ে পড়েছে। নববর্ষের প্রথম দিন লক্ষ্মী-গণেশের পুজো দিয়ে খোলা হয় সারাবছরের বিকিকিনির হিসেবের নতুন খাতা৷ ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের প্রথা৷ কিন্তু, আধুনিকতার প্রভাব পড়েছে এই লাল রঙের মলাট দেওয়া খাতাতেও৷ কম্পিউটারের যুগে এখন খাতায় নয়, বেশিরভাগ ব্যবসায়ীই এখন হিসেব-নিকেশ গচ্ছিত রাখছেন হার্ডডিস্কে৷ তাই বিক্রি কমেছে হালখাতার৷ নববর্ষ মানেই হালখাতা, পঞ্জিকা, মিষ্টিমুখ আর নতুন জামার গন্ধ। বঙ্গের ব্যবসায়ীদের কাছে এটি একটি আর্থিক বছরের সুচনা বটে।

কম্পিউটারের যুগে হাঁসফাঁস হালখাতা৷ আজ পয়লা বৈশাখ৷ অথচ, আগের দিনও মন্দা হালখাতার বাজারে। আগে একেকজন ব্যবসায়ী যেখানে লেজার, খতিয়ান, সপ্তাহের খাতা, মাসের খাতা, জাবদা মোটা খাতা ও কর্মচারীদের মাস মাহিনার হিসাব রাখার খাতা কিনতেন। এখন সেখানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ী পাতলা খাতা কিনে হালখাতা সেরে ফেলছেন বলে আক্ষেপ হালখাতা বিক্রির দোকানিদের। সেই চিত্রই দেখা গেল হাওড়ার কালিবাবুর বাজারের সামনের হালখাতার দোকানে। জাবদা বিভিন্ন ধরণের খাতা দোকানে থাকলেও ক্রেতারা কিনছেন একদম পাতলা খাতা। ওই দিয়েই হালখাতার নিয়ম রক্ষা করে ব্যবসা চালাবেন তারা। হালখাতার বিক্রেতা অরবিন্দ চট্টোপাধ্যায় মজা করে বলেন, এখন হালখাতার হাল খারাপ হয়ে গিয়েছে। আগে একজন ক্রেতাকে কম করে ৬-৭ টি খাতা কিনতেন। একটাতে সে তার সাপ্তাহিক লেনদেনের হিসাব রাখতেন। একটাতে মাসিক লেনদেন করা হিসাব থাকতো। দোকানে ও ব্যবসার কর্মচারীদের উপস্থিতি ও পারিশ্রমিকের হিসাব রাখার জন্য বড় মোটা জাবদা খাতা লাগত। এখন দোকানে এসে পাতলা একটা খাতা কিনে নিয়ে চলে যাচ্ছেন তারাই। তিনি বলেন, আগে লেজার খতিয়ান সহ অনেক খাতা বিক্রি হতো।

এখন শুধু পুজো করার জন্যই পাতলা খাতা হলেই কাজ চলে যাচ্ছে তাদের। এখন সমস্ত কাজ কম্পিউটারে হয়ে খাতার চাহিদা অনেক কমে গিয়েছে। হালখাতার জন্য খাতা কিনতে হাওড়ার মাজু এলাকা থেকে আসা দীপঙ্কর বিশ্বাস জানান, আজ দুটি খাতা কিনেছেন তিনি। আগে প্রয়োজন থাকলেও এখন একটা খাটাতেই কাজ মিটে যায়। এখন মোবাইল কম্পিউটারে হিসাব রাখার কাজ চলছে তাই খাতার চল কমে যাচ্ছে। অপর এক ক্রেতা নীলমণি চট্টোপাধ্যায় বলেন, এখন শুধু হালখাতা পুজোর জন্যই খাতা কেনেন। আগে লেজার সহ অনেক খাতা প্রয়োজন পড়ত, এখন পুজো করতেই হবে, তাই একটা খাতাতেই হয়ে যায়। এখন সমস্ত হিসাব কম্পিউটারে করে নেন। তবু কিছু খুচরো হিসাবের জন্য একটা খাতা রাখা থাকে। এভাবে চাহিদা কমতে থাকার ফলে অস্তিত্ব সংকটে ‘হালখাতার’। ফলত, খাতা ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত। বাঙালি ব্যবসায়ীদের পয়লা বৈশাখ মানেই হালখাতা। বর্তমানে পুজোতে নিয়ম রক্ষার জন্য হালখাতা কেনার প্রয়োজন বোধ করছেন ব্যবসায়ীরা। স্বভাবতই, ডিজিটাল লেনদেনের দাপটে আসতে আসতে বিলুপ্তর পথে ‘হালখাতা’, আশঙ্কা এই হালখাতা বিক্রির ব্যবসায়ীদের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

13 − 11 =