শুরুতেই স্বপ্ন শেষ স্বপ্নদীপের, যাদবপুরে ছাত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যুতে ব়্যাগিংয়ের অভিযোগ

রাতে মাকে ফোন করে বলেছিলেন ‘ভালো নেই’। ভোররাতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই ছাত্রেরই মৃত্যুর খবর এল। যে মৃত্যু অস্বাভাবিক। পুলিশ সূত্রে খবর, মেইন হোস্টেলের তিন তলা থেকে পড়ে গিয়ে ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। এটা আত্মহত্যা কি না জল্পনার মাঝেই মৃতের পরিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে লিখিতভাবে র‌্যাগিংয়ের অভিযোগ তুললেন। পরিবারের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে যাদবপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এই ঘটনায় র‌্যাগিং-এর পাশাপাশি আরও একটি বিষয়ে উঠে এসেছে, সেটা হল ‘বেআইনি ভাবে’ প্রাক্তনীদের থেকে যাওয়া। ছাত্রদের একাংশের দাবি, হোস্টেলে ‘র‌্যাগিং’-এর নেপথ্যে রয়েছেন মূলত তাঁরাই। এই দাবিতে সিলমোহর দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠনের সভাপতি পার্থপ্রতিম রায়।
অভিযোগ, যাঁরা পড়ুয়া বা আবাসিক নন এমন প্রাক্তনীরাও থাকেন এখানে। দাবি উঠেছে, তাঁদের এখনই হোস্টেল থেকে বার করে দেওয়া হোক। পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর, পড়ুয়ার নাম স্বপ্নদীপ কুণ্ড (১৮)। তিনি নদিয়ার হাঁসখালির বগুলা এলাকার বাসিন্দা। দিন দুয়েক আগেই যাদবপুরের প্রথম বর্ষে ভরতি হয়েছিলেন স্বপ্নদীপ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেলের ‘এ’ ব্লকের তৃতীয় তলার বারান্দা থেকে ‘কোনও ভাবে’ পড়ে গিয়ে মৃত্যু হয় স্বপ্নদীপের। তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে জল্পনা তৈরি হয়েছে। তবে স্বপ্নদীপের মামা অরূপ কুন্ডু দাবি করেছেন, র‌্যাগিং করা হয়েছে তাঁর ভাগ্নেকে। বুধবার রাতে মাকে ফোন করে ‘ভাল নেই’ বলে জানিয়েছিলেন স্বপ্নদীপ।
ওই পড়ুয়ার মামা জানিয়েছেন, সোমবার থেকে বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হয়েছে। হস্টেলে জায়গা পাননি স্বপ্নদীপ। এক বন্ধুর সঙ্গে থাকছিলেন। সেখানেই এই ঘটনা। তবে স্বপ্নদীপ একা নন, অভিযোগ, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলে এমন অনেকেই থাকেন, যাঁরা পড়ুয়া নন। প্রশ্ন উঠছে, কারা র‌্যাগিং করেছিলেন স্বপ্নদীপকে? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পড়ুয়া জানিয়েছেন, এই প্রাক্তনীরা প্রায়ই হস্টেলে মত্ত অবস্থায় ঝামেলা করেন। র‌্যাগিং করেন। তাঁর আশঙ্কা, স্বপ্নদীপের রহস্যমৃত্যুর নেপথ্যেও এ রকম প্রাক্তনীদের হাত থাকতে পারে।
জুটার প্রেসিডেন্ট পার্থপ্রতিম বলেন, ‘প্রাথমিক ভাবে যতটা জানা যাচ্ছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে স্বাভাবিক মৃত্যু নয়।’ তিনি জানিয়েছেন, বুধবার রাতে যাদবপুরের বেসরকারি হাসপাতালে ওই ছাত্রকে নিয়ে যাওয়ার পর এসএসকেএমের ট্রমা সেন্টারে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু অবস্থার অবনতি হওয়ায় তা সম্ভব হয়নি। এর পরেই দোষীদের শাস্তির দাবিতে সরব হয়েছেন পার্থপ্রতিম।
স্বপ্নদীপের পরিবার অবশ্য যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ করেননি। অরূপ জানিয়েছেন, বাংলার ক্লাস করতে বেশ ভালই লাগছিল স্বপ্নদীপের। বাবাকে ফোন করে সে কথা জানিয়েছিলেন। এই ঘটনার পর, বৃহস্পতিবার বাংলা বিভাগে প্রথম বর্ষের ক্লাস হয়নি। বিভাগীয় প্রধান প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eighteen − seven =