রায়গঞ্জ: দীর্ঘ প্রায় ২ সপ্তাহ পর শনিবার থেকে উত্তর দিনাজপুর জেলার কালিয়াগঞ্জ ব্লকে জারি করা ১৪৪ ধারা উঠে গেল। এদিন নতুন করে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আর কোনো নির্দেশ জারি করা হয়নি। ২৫ এপ্রিল কালিয়াগঞ্জ থানা আক্রমণ ও আগুন লাগানোর ঘটনার পর কয়েক দফায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কালিয়াগঞ্জ ব্লক জুড়ে ১২ মে পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। থানায় হামলার ঘটনার পর কালিয়াগঞ্জ ব্লকে আর নতুন করে কোনও গন্ডগোল না ঘটলেও এই নির্দেশ বহাল থাকে। এই নির্দেশের জেরে গত প্রায় ৩ সপ্তাহ ধরে কালিয়াগঞ্জবাসীর স্বাভাবিক জনজীবন কার্যত ব্যাহত হয়ে পড়ে। শহরের ব্যবসা থেকে শুরু করে সামাজিক অনুষ্ঠান করতে গিয়েও বাসিন্দাদের ১৪৪ ধারার জন্য সমস্যায় পড়তে হয়েছে। ১৪৪ ধারার মেয়াদ শেষ হওয়ায় হাফ ছেড়ে বেঁচেছে শহরবাসী। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে আইনগত বিধিনিষেধ শেষ হতেই বিজেপি গোটা ইস্যুটি নিয়ে কার্যত কোমড় বেধে ময়দানে নেমে পড়েছে। ২১ এপ্রিল কালিয়াগঞ্জের সাহেবঘাটায় দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্রীর মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় তাকে ধর্ষণ করে খুন করার অভিযোগে ওঠে। ওই ছাত্রীকে ছাত্রীর পোস্টমর্টেম রিপোর্টে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে, বিষক্রিয়ার ফলেই কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে। এই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পরই পুলিশ ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ আরও বৃদ্ধি পায়। ২৫ এপ্রিল বিজেপির পক্ষ থেকে এই ঘটনার প্রতিবাদে স্থানীয় সাংসদের নেতৃত্বে পুলিশ সুপারের দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়। পাশাপাশি রাজবংশী ও আদিবাসী সংগঠনের পক্ষ থেকে এই একই ইস্যুতে কালিয়াগঞ্জ থানা অভিযানের ডাক দেওয়া হয়। রায়গঞ্জ পুলিশ সুপারের দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি কার্যত শান্তিপূর্ণভাবেই হয়।
পরিস্থিতির সামাল দিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রথমে কালিয়াগঞ্জ শহরের ৫ টি ওয়ার্ডে এবং পরবর্তীতে গোটা ব্লকজুড়েই ১৪৪ ধারা জারি করার পাশাপাশি ইন্টারনেট পরিষেবা ৪ দিনের জন্য বন্ধ রাখা হয়। এরপর এই দুটি নিষেধাজ্ঞার মেয়াদই দুই দফায় বাড়ানো হয়। পরবর্তীতে কালিয়াগঞ্জে ইন্টারনেট পরিষেবা চালু করা হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৩ মে পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি রাখা হয়েছিল। কিন্তু এদিন সকাল থেকেই পুনরায় ১৪৪ ধারার মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। পরবর্তীতে এলাকার পরিস্থিতি বিচার করে এই ১৪৪ ধারার মেয়াদ বৃদ্ধি করে ১২ মে পর্যন্ত করা হয়।
রায়গঞ্জের মহকুমাশাসক কিংশুক মাইতি জানিয়েছেন, ‘আগের নির্দেশে জারি করা ১৪৪ ধারার মেয়াদ ১২ মে শেষ হচ্ছে। এদিন এখনো পর্যন্ত পুলিশ প্রসাশনের পক্ষ থেকে নতুন করে এর মেয়াদ বৃদ্ধি করার জন্য কোনো রিকুইজিশন আসেনি।’
কালিয়াগঞ্জ শহরের বাসিন্দা শান্তনু বিশ্বাস জানিয়েছেন, ‘থানায় হামলার ঘটনায় পরিস্থিতির সামাল দিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। তার কয়েকদিন পর থেকে শহরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে। নতুন করে কোনও গন্ডগোল হয়নি। কোনও কারণ ছাড়াই মানুষ রাস্তাঘাটে বেরোনো বন্ধ করে দেয়। ১৪৪ ধারার জেরে প্রকাশ্যে মাইক বাজানোতে নিষেধাজ্ঞা থাকায় এবার পাড়ায় পাড়ায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন পালন অনুষ্ঠানও বন্ধ থেকেছে।
কালিয়াগঞ্জ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি প্রকাশ কুণ্ডু জানিয়েছেন, ‘১৪৪ ধারা দীর্ঘদিন ধরে জারি থাকার জন্য গোটা এলাকার ব্যবসার প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। এই শহরের ব্যবসা মূলত আশপাশের গ্রামাঞ্চলের ওপর নির্ভরশীল। পুলিশের আতঙ্কে আশপাশের এলাকা থেকে মানুষ বাজার করতে শহরে আসেনি। শেষ পর্যন্ত এই ১৪৪ ধারা উঠে যাওয়ায় আমরা খুশি।’
বিজেপির পক্ষ থেকে জানা গিয়েছে, ১৪৪ ধারা উঠে যাওয়ার পরপরই দলের পক্ষ থেকে লাগাতার আন্দোলনের কর্মসূচি তৈরি করা হয়েছে। শনিবার দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার সকালে রাধিকাপুরের গুলিতে মৃত যুবকের বাড়িতে যাবেন। সেখান থেকে তিনি ইসলামপুরের দাঁড়িভিট গিয়ে গুলিতে মৃত রাজেশ ও তাপসের পরিবারের সঙ্গে দেখা করবেন। বিকেলে ইসলামপুর বাসস্ট্যান্ডে দলের পক্ষ থেকে জনসভা।