কলকাতা: আশঙ্কা ছিল, সেটাই সত্যি হল। ট্রেনে ভিড়। বাসের জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা। বাস এলেও তাতে বাদুর ঝোলা অবস্থা। বিজেপির ‘নবান্ন অভিযান’ কর্মসূচি ঘিরে সপ্তাহের শুরুর দিকেই ভোগান্তির মুখে পড়লেন সাধারণ মানুষ। কলকাতা ও হাওড়ায় এই অভিযান ঘিরে ঝামেলা হতে পারে ভেবে কেউ কেউ বের হননি ঠিকই। কিন্তু কাজের প্রয়োজনে বের হতে হয়েছে বেশিরভাগকেই। আর তাঁরাই পড়েছেন সমস্যা।
এদিন রাস্তায় যানবাহন কম। নিরাপত্তার কারণে অনেক রাস্তাতেই যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছে পুলিশ। এর ফলে বহু রুটে বাস নেই। হাওড়া ও শিয়ালদহ স্টেশনে নেমে বহু মানুষকে হেঁটে কর্মস্থলে যেতে হয়েছে।
সোমবার সন্ধ্যা থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় বিজেপির কর্মসূচি ঘিরে উত্তেজনার ছবি ধরা পড়ে। আর মঙ্গলবার সকাল থেকে এক দিকে বিজেপি ও অন্য দিকে পুলিশ প্রশাসন মরিয়া ভূমিকায়। রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের মনোভাব, ‘নবান্ন অভিযান’ সফল করতেই হবে। আর রাজ্য প্রশাসনের কাছে পাল্টা চ্যালেঞ্জ তা রোখার। সব রকমের পরিস্থিতির মোকাবিলা করার জন্য রাস্তায় বিভিন্ন জায়গায় ব্যারিকেড তৈরি করেছে পুলিশ। কলকাতার উত্তর থেকে দক্ষিণ সর্বত্রই এক চিত্র। কলকাতায় বিজেপির বিভিন্ন জেলার মিছিলের প্রবেশ রোখার জন্য কড়া বন্দোবস্তে ঘোর বিপাকে সাধারণ মানুষ। দ্বিতীয় হুগলি সেতু ও হাওড়া সেতুতে তৈরি হয়েছে ব্যারিকেড।
ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, এর ফলে পুজোর বাজারেও বড় প্রভাব পড়বে। সকাল থেকে বড়বাজার এলাকা ফাঁকা ফাঁকা। বহু মানুষই একান্ত প্রয়োজন ছাড়া কলকাতায় আসেননি বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। বড়বাজারের ব্যবসায়ী সুনীল জয়সওয়াল বলেন, ‘এমনিতেই পুজোর বাজার গত কয়েকটা দিন বৃষ্টির জন্য জমছে না। তার মধ্যে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে এই দিনটা নষ্ট হল। জেলার বহু বাজারই মঙ্গলবার বন্ধ থাকে। তাই খুচরো বিক্রেতারা এই দিনে বড়বাজারে আসেন। যা পরিস্থিতি সেই বাজার পাওয়া যাবে না।’ বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ, রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে তিন দিক থেকে মিছিল আসার কথা নবান্নর দিকে। তিন জনের নেতৃত্বে তিনটি মিছিল শুরু হওয়ার কথা যথাক্রমে কলেজ স্ট্রিট, হাওড়া ময়দান ও সাঁতরাগাছি থেকে। তিনটি জায়গাতেই বিশাল পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। অন্য দিকে, নবান্ন পৌঁছনোর আগেই বিজেপির মিছিল আটকে দিতে মজুত রয়েছে দু’টি জলকামান।
মঙ্গলবার কলেজ স্ট্রিট এলাকায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন অনেক পড়ুয়াও। কলকাতা ও প্রেসেডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও এই এলাকায় অনেকগুলি কলেজ রয়েছে। ছুটি না থাকায় সেখানে আসতে গিয়ে অনেকেই সমস্যায় পড়ছেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সুকমল সরকার বলেন, ‘আমাদের অনেক বন্ধুবান্ধবই আসেনি। বাড়ি থেকে আমাকেও বারণ করা হয়েছিল। কিন্তু আমার খুব দরকার থাকায় এসেছি। শ্যামবাজার থেকে হেঁটে আসতে হয়েছে।’ একই অভিজ্ঞতার কথা শোনালেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়েরই আর এক ছাত্রী। জানালেন, উত্তরপাড়ায় বাড়ি। ট্রেনে খুব ভিড় ছিল। হাওড়াতেও বাস কম। এত ভিড় সেগুলোয় যে বাধ্য হয়ে হেঁটে হেঁটেই আসতে হয়েছে।
ব্যারিকেড দেওয়া হয়েছে সেন্ট্রাল-এমজি রোড ক্রসিংয়ে। আপাতত গিরিশ পার্ক হয়ে ধর্মতলামুখী গাড়ি এবং ধর্মতলা থেকে গিরিশ পার্ক-মুখী গাড়ি চলাচল করছে। নবান্ন অভিযানের ফলে দুর্ভোগে সাধারণ যাত্রীরা।