ফুটবল সমর্থকরা এমনটাই চেয়েছিলেন। রবিবারের বিকেল, কানায় কানায় পূর্ণ যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন, আর মাঠে কলকাতা ডার্বি। আর কী চাই! সবসময় চাওয়া-পাওয়া মিলে যাবে তা নয়। মন থেকে চাইলে, অনেক সময়ই পাওয়া যায়। এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে মোহনবাগান শুরু থেকেই দুর্দান্ত। মুম্বই সিটি এফসির মতো দলকে হারিয়ে শেষ চারে জায়গা করে নিয়েছিল সবুজ মেরুন। ভয় ছিল আত্মতুষ্টির। প্রথমার্ধের মাঝপথে যেন তাই হল। এক গোলে পিছিয়ে পড়ে যেন সম্বিৎ ফিরে পেয়েছিলেন মোহনবাগান ফুটবলাররা। ঘুরে দাঁড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা। শেষ অবধি ফাইনাল নিশ্চিত। এফসি গোয়াকে ২-১ ব্যবধানে হারিয়ে ডুরান্ডে স্বপ্নের ফাইনাল নিশ্চিত করল সবুজ মেরুন শিবির। ২০০৪ সালের পর ফের ডুরান্ড ফাইনালে কলকাতা ডার্বি। দুরন্ত ছন্দে থাকা হুগো বোমাস এমন ভুল করবেন এ যেন কল্পনার বাইরে। ডান দিকে পাস করেন বল। তাও এফসি গোয়ার প্লেয়ার নোয়ার দিকে! বক্সের কাছাকাছি প্রতিপক্ষ ফুটবলারের থেকে এমন সাজানো পাস! কোনও প্লেয়ারই গোল করতে ভুল করবেন না। তাও আবার নোয়া ওয়েলের মতো ফুটবলার যিনি এফসি গোয়ার গত মরসুমে সর্বাধিক স্কোরার ছিলেন। এ বারের ডুরান্ডে আধডজন গোল। ২৩ মিনিটে নোয়ার গোলে গোয়া এগিয়ে যেতেই মোহনবাগান ফুটবলাররা মেজাজ হারাতে শুরু করেন। বল কাড়তে গিয়ে প্রতিপক্ষের পায়ে মেরে কার্ড দেখেন অনিরুদ্ধ থাপা। ওয়াটার ব্রেকের আগেই একটি সুযোগ আসে মোহনবাগানের কাছে। তাড়াহুড়ো টার্গেটে শট রাখতে পারেননি দিমিত্রি পেত্রাতোস। মোহনবাগান সমর্থকরা এসেছিলেন, দলের আরও একটা জয় দেখতে। মরসুমের প্রথম ডার্বি হারের জ্বালা। টানা আটটি ডার্বি জয়ে যে আনন্দধারা বয়েছিল, একটা হারে সেই উচ্ছ্বাসের বেলুন চুপসে গিয়েছিল। এফসি গোয়াকে হারালে আরও একটা ডার্বি। সেখানে বদলা নেওয়া যাবে। কিন্তু ২৩ মিনিটের সেই গোল গ্যালারিকে নির্বাক করে দেয়। ৩৮ মিনিটে রেফারির সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক। গোয়া ডিফেন্ডার জয় গুপ্ত ট্যাকল করেছিলেন আশিক কুরুনিয়ানকে। ট্যাকলের পয়েন্ট বক্সের বাইরে এবং আশিক পড়েন ভেতরে। পেনাল্টি না ফ্রি-কিক, এই নিয়ে নাটক। রেফারি পেনাল্টি দেন। ৪২ মিনিটে বিশ্বকাপার জেসন কামিন্স স্পটকিক থেকে গোল করে সমতা ফেরান। এফসি গোয়া গোলকিপার ধীরজ বাঁ দিকে ডাইভ দেন, কামিন্সের শট ছিল ডান দিকে। প্রথমার্ধে এফসি গোয়ার বল পজেশন ৬৪ পারসেন্ট, মোহনবাগান মাত্র ৩৬। বিরতিতে ১-১ স্কোরলাইন। ম্যাচ শুরুর ঘণ্টাখানেক পর চিত্র পুরোপুরি বদলে দেন আর্মান্দো সাদিকু। এ যেন আইপিএলের ‘ইমপ্যাক্ট’ প্লেয়ারের মতো। পরিবর্ত হিসেবে নেমেছিলেন আর্মান্দো সাদিকু। প্রথমার্ধে বোমাসের ভুলে পিছিয়ে পড়েছিল মোহনবাগান। সেই বোমাসের পরিবর্তেই নামানো হয়েছিল। বক্সের অনেকটা বাইরে লম্বা পাস আসছিল সাদিকুর দিকে। সামনে জাতীয় দলের সেরা ডিফেন্ডার সন্দেশ ঝিঙ্গান। স্লাইড করে বল আটকাতে পারেননি। সন্দেশের থেকে নবীশের মতো ভুল। পুরোমাত্রায় সুযোগ নিলেন সুপার সাব সাদিকু। বল পান সাদিকু। হালকা টার্ন, বল ধরে কিছুটা সময় নিয়ে দূর থেকেই জোরালো শট। কোনও রাগ-অভিমান যেন ঝরে পড়ল তাঁর শটে! অনূর্ধ্ব ১৭ বিশ্বকাপ খেলা গোয়ার কিপার ধীরজকে কোনও সুযোগই দেননি। ৬২ মিনিটেই ২-১ লিড নেয় মোহনবাগান। গ্যালারি ফের পুরনো মেজাজে। গ্যালারিতে পোস্টার ‘এই মাঠেই বদলা নেব’। ততক্ষণে সমর্থকরাও বুঝতে পেরেছেন, ফাইনালে ডার্বি এখন সময়ের অপেক্ষা। মোহনবাগান গোলরক্ষক সেই স্বপ্নকে প্রাণপনে ধরে রাখেন। শেষ দিকে তাঁর একটি দুরন্ত সেভ। রবিবার ফের ডার্বি।