সমুদ্র যখন জোয়ারে ফুলে-ফেঁপে ওঠে তখন দূর থেকে দেখা যায় পতাকা। দিনের একটা বিশেষ সময়ে ওই পতাকার নীচ থেকেই বেরিয়ে আসে মন্দির। প্রকটিত হন মহাদেব।
দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ধরনের মন্দির দেখা যায়। কিন্তু সমুদ্র থেকে উঠে আসা এই মন্দির দেখতে গেলে আপনাকে যেতে হবে গুজরাতের ভাবনগর।
আরব সাগরের তীরে কলিয়া। সেখান থেকে আড়াই কিলোমিটার ভিতরে যেতে হবে নিষ্কলঙ্ক মহাদেব কে দেখতে। যখন জোয়ার আসে মহাদেব চলে যান সমুদ্রের নীচে। ভাটার সময় পথ বের হয়। সেই পথেই লোকে যায় মহাদেবের পুজো দিতে।
এর পিছনে রয়েছে একটি গল্প। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ শেষে প্রিয়জনদের হত্যার পাপ লাগে পাণ্ডবদের ওপর। পাপস্খলনের জন্য পাণ্ডবদের দেওয়া হয় একটি কালো পতাকা ও একটি কালো গোরু। বলা হয় সেই গোরুটিকে অনুসরণ করতে।
এভাবে পথ চলতে চলতে এমন একটি জায়গায় কোন একদিন পাণ্ডবরা পৌঁছবেন যেখানে কালো পতাকা সাদা হয়ে যাবে। গোরুর রং বদলে হবে ধবধবে সাদা। সেই জায়গায় পৌঁছলে পাণ্ডবদের মহাদেবের উপাসনা করতে হবে। তবে খন্ডন হবে পাপ।
কথিত আছে গোরুটিকে অনুসরণ করে পাণ্ডবরা এখানে ওখানে ঘুরতে থাকেন। কিন্তু কিছুতেই কালো গরু আর সাদা হয় না। বদল হয় না কালো পতাকার রং। এভাবে ঘুরতে ঘুরতে একদিন পাণ্ডবরা আসেন গুজরাটের সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায়। আশ্চর্যজনকভাবে বদলে যায় কালো পতাকা ও গোরুর রং। তারা হয়ে যায় সাদা।
এখানে মহাদেবের জন্য তপস্যা শুরু করেন পঞ্চপাণ্ডব। আরাধনায় তুষ্ট হন শিব। প্রকটিত হন শিবলিঙ্গ হিসেবে। পাঁচ ভাইকে শিব দর্শন দিয়েছিলেন। এখানে রয়েছে শিবের স্বয়ম্ভু লিঙ্গ।
যেহেতু এই স্থানে পঞ্চপাণ্ডব প্রিয়জনদের হত্যার পাপ থেকে মুক্ত হয়ে ছিলেন সেহেতু এই মন্দির পরিচিত হয় নিষ্কলঙ্ক মহাদেব মন্দির হিসাবে। ভাদ্র মাসের অমাবস্যা তিথিতে এখানে বড় করে মেলা বসে। পূর্ণিমা ও অমাবস্যা বিশেষ পুজো হয়। লোকে সারাদিন অপেক্ষা করে থাকেন কখন ভাটা আসবে জল সরে যাবে। তারপর গিয়ে তাঁরা শিবের পুজো দেন। লোকের বিশ্বাস এখানে মৃতের চিতাভস্ম বিসর্জন দিলে তাঁর মুক্তি হয়।