কলকাতা: আবাস যোজনায় প্রধানমন্ত্রীর নাম যুক্ত না করলে কেন্দ্রীয় সরকার এই প্রকল্পে আর কোনও টাকা দেবে না। কেন্দ্রীয় গ্রাম উন্নয়ন মন্ত্রকের তরফে সম্প্রতি রাজ্যকে এই চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে।
২০১৬-১৭ আর্থিক বছর থেকে রাজ্যে চালু হয় বাংলা আবাস যোজনা প্রকল্প। মূলত বাড়ি না থাকলে বা মাটির বাড়ি থাকলেই প্রকল্পটির সুবিধা পান উপভোক্তরা। কিন্তু বঙ্গ বিজেপির অভিযোগ, কেন্দ্র সরকার ‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা’ প্রকল্পে যে টাকা দিচ্ছে, সেই টাকায় বাড়ি নির্মাণ করে তা চালানো হচ্ছে ‘বাংলা আবাস যোজনা’ নামে। সেখানে সম্পূর্ণরকম ভাবে ‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা’ নামটি উহ্য রাখা হচ্ছে। যার জেরে মানুষের কাছে বার্তা পৌঁছয় যে মোদি সরকার বাংলার মানুষের জন্য কিছু করছে না। এটা শুধু যে প্রতারণা তাই নয়, কেন্দ্রীয় প্রকল্প রাজ্যে চালানোর যে নিয়মাবলী রয়েছে, নামবদল তারও পরিপন্থী।
যদিও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বহুবার অভিযোগ করেছেন, কেন্দ্রের কাছে রাজ্যের বকেয়া হাজার হাজার কোটি টাকা। বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা, ঋণ , বিশেষ সুবিধা নিয়মিত পেলেও, বাংলাকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। তা সত্ত্বেও রাজ্য সরকার নিজেদের সীমিত পরিসরেই জনকল্যাণমূলক প্রকল্পগুলির কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। একদিকে যখন প্রকল্পের টাকা না পেয়ে কেন্দ্রের দিকে আঙুল তুলছে রাজ্য, তখন অর্থ নিয়ে এবার উল্টো চাপ কেন্দ্রের।
কেন্দ্রের গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের আধিকারিকদের দাবি, বাংলায় কেন্দ্রীয় প্রকল্পের নাম বদলের ঘটনা প্রথম নয়। ২০১৭ সাল থেকেই এই ঘটনা চোখে পড়ছে কেন্দ্রের। তার জেরে ২০১৭ সালের অগস্ট মাসের শেষ দিকে মন্ত্রকের তরফে চিঠি দেওয়া হয় রাজ্যকে। কিন্তু সেই চিঠির কোনও উত্তর দেয়নি নবান্ন। এরপরে ২০২২ সালের ১২ মে আরও একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। তার পরেও রাজ্যের থেকে সদুত্তর না পেয়েই এ বার টাকা দেওয়া হবে না বলে জানিয়ে নতুন একটি চিঠি দিয়েছে কেন্দ্র। একই সঙ্গে কেন্দ্রের নতুন প্রকল্প ‘আবাস প্লাস’ বাবদও বাংলাকে কোনও টাকা দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক। বঙ্গ বিজেপি নেতাদের দাবি, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা, স্বচ্ছ ভারত ও প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার নাম বাংলার বুকে বদলে দেওয়া হয়েছে। অথচ সেই সমস্ত প্রকল্পের কাজের টাকা মোদি সরকার দিচ্ছে। কিন্তু রাজ্য সরকার তা স্বীকারই করছে না। তাঁরা এই প্রকল্পগুলি যথাক্রমে বাংলা আবাস যোজনা, মিশন নির্মল বাংলা ও বাংলা গ্রামীণ সড়ক যোজনা বলে চালাচ্ছে। এতে মানুষের কাছে কেন্দ্রের সরকার সম্পর্কে ভুল বার্তা যাচ্ছে যা আর কোনওরকম ভাবেই মেনে নেবে না মোদি সরকার।
তবে শাসকদলের দাবি, কেন্দ্রের যে প্রকল্পগুলি রাজ্যে চলে তার খরচের একটা বড় অংশ রাজ্যকেও বহন করতে হয়। তাছাড়া এই প্রকল্পগুলির নাম বদল সাধারণ মানুষের বোঝার সুবিধার্থেই। এতে নিয়মভঙ্গের কোনও ব্যাপার নেই। বস্তুত, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনপ্রিয়তায় ভয় পেয়েই রাজ্য সরকারকে সবরকমভাবে প্যাঁচে ফেলার চেষ্টা করছে কেন্দ্র। এমনটাই অভিযোগ তৃণমূলের।