নতুন কেউ রাজনীতিতে এসে পঞ্চায়েতে জিতলে সার্বিকভাবে উপকৃত হবেন মানুষ, বার্তা অভিষেকের

‘কেউ যদি নতুন কেউ রাজনীতিতে এসে পঞ্চায়েতে জেতে, সার্বিকভাবে এলাকার মানুষ উপকৃত হবেন। আপনি তাঁকে মান্যতা দিয়ে যদি আমাদের কাছে মতামত জানান, তৃণমূল কংগ্রেস সব শক্তি প্রয়োগ করে গণতান্ত্রিকভাবে তাঁকেই প্রার্থী করবে।’ ব্যালট বাক্স ভাঙচুর, হাজারও বিতর্কের মাঝে আরও বুধবার ফের একবার একই বার্তা দিতে দেখা গেল অভিষেক বন্দ্যোপরাধ্যায়কে।
বুধবার ছিল ‘তৃণমূলে নবজোয়ার’ কর্মসূচির দ্বিতীয় দিন । ঘুঘুমারিতে সভায় দলীয় নেতৃত্বকেই বার্তা দিয়ে তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ব্যাখ্যা করেন, কেন দলের এই কর্মসূচি তা নিয়ে। পাশাপাশি এ ব্যাখ্যাও দেন কেনই বা নির্বাচনের আগে এই ভোটগ্রহণ পর্ব তা নিয়েও। অভিষেক এদিন এ প্রসঙ্গে জানান, ‘আগামী দিনে পঞ্চায়েত স্তরে প্রার্থী তৃণমূল কংগ্রেস কিংবা তৃণমূলের কোনও নেতা করবে না, প্রার্থী আপনারা ঠিক করবেন। সাধারণত দেখবেন, যে দল ক্ষমতায় থাকে, সে দল কোনওদিন রাস্তায় নামে না। যারা জনসংযোগ যাত্রা করে, তারা সাধারণত বিরোধী হয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আপনারা তৃতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী করেছেন। আমরা পারতাম, জেলাস্তর, ব্লক স্তরে নেতাদের থেকে মতামত নিয়ে প্রার্থী নির্ধারণ করতে এসেছি।’ পাশাপাশি এও বলেন, ‘আমি বরাবরই বলেছি, মানুষ যাঁকে সার্টিফিকেট দেবে, তাঁকেই টিকিট দেব। মানুষ ঠিক করবে প্রার্থী কে হবেন।‘ এরই রেশ ধরে অভিষেক এদিন এও জানান, ‘অনেক রাজনৈতিক নেতাই অনেক কথা বলেন। কিন্তু ৬০ দিন বউ-বাচ্চা-বাবা-মা সংসার ছেড়ে রাস্তায় পড়ে রয়েছি। আপনাদের সঙ্গে থাকছি, এত গরমেও রাস্তায় থাকছি। আপনাদের বুথে এলাকায় ভাল লোক কিংবা মহিলা রয়েছেন, আপনি তাঁকে মান্যতা দিয়ে যদি আমাদের কাছে জানান, তাহলে তৃণমূল সব শক্তি দিয়েই তাঁকেই প্রার্থী করবে।‘ এরই পাশাপাশি সম্পূর্ণ এই ভোট প্রক্রিয়া কেমন ভাবে হচ্ছে তাও জানান অভিষেক। বলেন, ‘ নীল রঙের একটা ছোট্ট ক্যাম্প করা হয়েছে। সেখানে তিন চারটে ব্যালট বক্স থাকবে। সেখানে আপনাদের ব্যালট পেপার দেওয়া হবে। যারা বয়স্ক, ভোট দিতে পারবেন না, তাঁরা বাড়ি ফিরে যাবেন। আপনাদের একটা নম্বর দিচ্ছি, সেখানে বাড়ি থেকে ৭৮৮৭৭৭৮৮৭৭ ফোন করেও আপনাদের মতামত জানাতে পারবেন।’ এদিনের সভা থেকে ফের অভিষেক মনে করিয়ে দেন, ‘কাউকে একটু প্রভাবিত করে, সুপারিশ করে একটা ব্যালট পেপারে নিজের নামটা দেওয়ানোর চেষ্টা করলে, সেটা কিন্তু নয়। যদি আমার নামেই ১০ টা রেকমেনডেশন পড়ে, প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে আমি এগিয়ে থাকলাম, এটা ভাবলে ভুল। যে নম্বরটা দিলাম, সেখানে তৃণমূল সমর্থকরা তো ফোন করলাম, সাধারণ জনগণও ফোন করছেন। তাই যাঁরা ভাবছেন নিজেদের নামে ২০টা ভোট বেশি ফেলিয়ে আমার জায়গা সুরক্ষিত করলাম, তাঁরা মুর্খের স্বর্গে বাস করছেন।’ এরই রেশ ধরে অভিষেকের বার্তা, ‘এই প্রক্রিয়া দুর্নীতিমুক্ত পঞ্চায়েত গড়ার লক্ষ্যে। এটা তার প্রাথমিক ধাপ। এতে কিছু লোকের অসুবিধা হবে। কিছু লোক তো রয়েছেন, যাঁরা ভেবেছেন, আমার সুপারিশ ব্লক প্রেসিডেন্ট কিংবা বিধায়ক করে দেবেন, আমি টিকিট পেয়ে যাব। ১০০ জনের মধ্যে ৫-৭ জনের তো অসুবিধা হবেই। তবে আপনাদের পরিচয় সম্পূর্ণ গোপন থাকবে। কারোর বাবার নাম, বাড়ির ঠিকানা, ফোন নম্বর থাকবে না। নিশ্চিন্তে ভোট দিন। কেউ জানতে পারবেন না। তবে শৃঙ্খলাপরায়ণ হয়ে ভোট দেবেন।’
পাশাপাশি তুলে ধরেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে বঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচনের ছবিও। এখানেই তিনি তুলে ধরেন, ৭২ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের ছবি। মনে করিয়ে দেন, বাম জমানায় সিপিএম ৭৭ সালে আসার পর তো কী হয়েছিল, না বলাই ভাল। একটা ভোটকে কেন্দ্র করে কত লোকের মৃত্যু। সেই পরিস্থিতি বদলাতেই শাসকদলের প্রতিনিধি হয়ে রাস্তায় নেমেছি।’
এরপরই বিজেপিকে বিদ্ধ করে জানান, ‘মোদি যবে থেকে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, কোচবিহারে একটা পর্যালোচনা বৈঠকও করেনি বিজেপি। যদি এখানে কোথাও করে থাকে, তাহলে আমি এখানে যাত্রা বন্ধ করে দেব। সেখানে আমি পা রাখব না। যদি কেউ দেখাতে পারে ৯ বছরে একটাও মিটিং করেছে বিজেপি, সেখানে আমি ভোট চাইতে যাব না।’ একইসঙ্গে উত্তরবঙ্গের মানুষদের মনে করিয়ে দেন, পঞ্চায়েতে তৃণমূল জিতলেও রাস্তা হচ্ছে, হারলেও হচ্ছে। একশো দিনের টাকা দিচ্ছে না কেন্দ্র। বাংলাই একমাত্র রাজ্য, যেখানে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে পারেনি বিজেপি। এরই পাশাপাশি একেবারে পরিসংখ্যান তুলে ধরে জানান, ‘২০১৯ কিংবা ২০২১এ যাঁরা ভোট দিয়েছিলেন, প্রথমে ৯ টার মধ্যে ৭টায় হেরেছিলাম, পরে দিনহাটা উপনির্বাচনে আমরা ১ লক্ষ ৬৪ হাজার ব্যবধানে সেটি জিতেছি। আজ ৯টা বিধায়কের মধ্যে ৬ বিধায়ক বিজেপি। কিন্তু একদিন দেখান বিধানসভায় গিয়ে আপনাদের স্বার্থে একজনও কেউ প্রশ্ন করেছেন? গলায় গেরুয়া উত্তরীয় জড়িয়ে বিধানসভায় গিয়ে এক মিনিটের মধ্যে ওয়াকআউট করে বিধানসভা থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন। কলকাতায় গিয়ে ফুর্তি করছেন।‘
একইসঙ্গে কটাক্ষ করে জানান, ‘আপনারা যে সাংসদকে নির্বাচিত করেছিলেন, তিনি দুটো মন্ত্রকের দায়িত্বে রয়েছেন, তিনি যুবকল্যাণ ও ক্রীড়া ও স্বরাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী। সেই স্বরাষ্ট্র দপ্তরের অধীনে বিএসএফ। বিএসএফ কীভাবে কোচবিহারের মানুষের ওপর, রাজবংশীদের ওপর অত্যাচার করেছে, আপনারা দেখেছেন।’ তবে অভিষেক এদিন স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ‘মানুষের পঞ্চায়েত গড়তে আমি পরিবার ছেড়ে রাস্তায় এসেছি। আমি যখন কথা দিয়েছি, মানুষের পঞ্চায়েত গড়তে, আমি সেটাই করব।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 × 2 =