পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) বিরুদ্ধে আইসিসির তীব্র সমালোচনা ঘিরে নতুন বিতর্ক তৈরি হয়েছে। ভারত-পাকিস্তান এশিয়া কাপ ম্যাচের পর টসের সময়ের এক ‘হ্যান্ডশেক বিতর্ক’ নিয়ে পাকিস্তান যে অভিযোগ করেছিল, তা একেবারে খারিজ করে দিয়েছে বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ামক সংস্থা। শুধু অভিযোগ খারিজ করেই ক্ষান্ত হয়নি, বরং ছ’দফায় বিশ্লেষণ তুলে ধরে বোঝানো হয়েছে যে, অভিযোগ কতটা ভিত্তিহীন ছিল।
ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল গত রবিবার। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ শেষে পিসিবি একটি বিবৃতি জারি করে জানায়, ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফট টসের সময় পাকিস্তান অধিনায়ক সলমন আলি আঘা এবং ভারতীয় অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদবকে একে অপরের সঙ্গে হাত মেলাতে নিষেধ করেছিলেন। পিসিবি অভিযোগ তোলে, এই আচরণ আইসিসির কোড অফ কন্ডাক্টের পরিপন্থী এবং ম্যাচ রেফারি ইচ্ছাকৃতভাবেই এই নির্দেশ দিয়েছিলেন।
এই অভিযোগের ভিত্তিতে পাইক্রফটের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক নালিশ জমা দেয় পিসিবি। কিন্তু বুধবার আইসিসি তাদের চিঠিতে একেবারে ভিন্ন ছবি তুলে ধরে। সংস্থার পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানানো হয়, পিসিবি অভিযোগ তুললেও কোনও খেলোয়াড় বা দলের সদস্যের বয়ান বা সাক্ষ্য তারা জমা দেয়নি। ফলে অভিযোগের প্রমাণ হিসেবে কিছুই হাতে আসেনি।
আইসিসির ব্যাখ্যা অনুযায়ী, পাইক্রফট কোনও ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে এই নির্দেশ দেননি। বরং এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) ভেন্যু ম্যানেজারের নির্দেশ মেনে তিনি কাজ করেছেন। টসের সময় ভারত-পাকিস্তান ম্যাচকে ঘিরে উত্তেজনা তুঙ্গে থাকায়, কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে আয়োজক কমিটি, উভয় দলের ম্যানেজার এবং পাইক্রফটের মধ্যে এক প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে, টস শেষে আনুষ্ঠানিক করমর্দন না করাই শ্রেয়। অর্থাৎ এটি ছিল সম্মিলিত পদক্ষেপ, কোনও ব্যক্তিগত উদ্যোগ নয়।
আইসিসির চিঠিতে আরও কড়া ভাষায় বলা হয়েছে, যদি পিসিবির সত্যিই কোনও অভিযোগ থাকে, তবে সেটা এশিয়া কাপ আয়োজক সংস্থা অর্থাৎ এসিসির বিরুদ্ধে করা উচিত। কারণ নির্দেশটি এসেছে আয়োজক এবং সংশ্লিষ্ট ম্যানেজমেন্ট থেকে। এখানে এক বড়সড় অস্বস্তি তৈরি হয় পাকিস্তানের জন্য, কারণ বর্তমান এসিসি সভাপতি হচ্ছেন পাক বোর্ড চেয়ারম্যান ও মন্ত্রী মহসিন নকভি। কার্যত নিজের বোর্ড চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধেই অভিযোগ আনতে হবে পিসিবিকে—এমন ব্যঙ্গাত্মক পরিস্থিতির ইঙ্গিত দিয়েছে আইসিসি।
ফলে গোটা ঘটনায় জয় শাহ নেতৃত্বাধীন আইসিসি নিজেদের হাত একেবারে ধুয়ে ফেলল। একই সঙ্গে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল যে, অভিযোগ দায়ের করার মতো প্রমাণ বা যথাযথ প্রক্রিয়া তারা মানেনি। একদিকে পাইক্রফটকে ঘিরে বিতর্ক মিইয়ে গেল, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পাকিস্তানের প্রশাসনিক অদক্ষতাও সামনে চলে এল।
সব মিলিয়ে বলা যায়, হ্যান্ডশেক বিতর্ক পাকিস্তানের প্রত্যাশিত সাফল্য আনতে পারেনি। বরং আইসিসির পত্রবোমা উলটে পাক ক্রিকেট বোর্ডের মাথাতেই এসে পড়ল। এই ঘটনায় একদিকে বিশ্ব ক্রিকেটে পাকিস্তানের অবস্থান খাটো হয়েছে, অন্যদিকে প্রশাসনিক পরিকাঠামো নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। ফলত, ম্যাচ রেফারির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ শেষ পর্যন্ত পাক বোর্ডের জন্য বুমেরাং হয়ে দাঁড়াল।

