কলকাতা : নিয়োগ দুর্নীতির একটি মামলায় আদালতের আগের নির্দেশ না মানায় সোমবারই প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি গৌতম পালকে আদালতে সশরীরে হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তড়িঘড়ি এদিন হাইকোর্টে হাজির হয়েছিলেন পর্ষদ সভাপতি। তাঁকে দেখতে পেয়েই এদিন গর্জে ওঠেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় । আদালতের নির্দেশ না মানায় নজিরবিহীনভাবে তাঁর বেতন বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি।
বেতন বন্ধের কথা শুনেই আদালত চত্বরে ভেঙে পড়েন প্রাথমিক পর্ষদ সভাপতি। হাত জোড় করে প্রায় কেঁদে ফেলার উপক্রম করে পর্ষদ সভাপতি বলেন, ‘আমি সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করি।’ জানান, তিনিই পরিবারের একমাত্র রোজগেরে, বাড়িতে বৃদ্ধা মা রয়েছেন। তিনি অসুস্থ, চিকিৎসা চলছে। এরপরেই তাঁকে শান্ত হতে বলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত জানানোর জন্য তিনি গৌতম পালকে ৫ মিনিট সময়ও দেন। অনুরোধ করেন, ‘প্লিজ বেতন বন্ধ করবেন না। একক বেঞ্চের নির্দেশ ৭ দিনেই কার্যকর করব। আমার কোনও ভুল হলে মাফ করে দেবেন।’
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের টেট পরীক্ষায় বসেছিলেন এক চাকরিপ্রার্থী। প্রাথমিকভাবে মামলাকারী জানতে পারেন, তিনি ওই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হননি। যদিও পরে জানা যায়, তিনি টেট পরীক্ষায় পাশ করেছেন। ২০২০ সালে সেই পরীক্ষার জন্য নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়। উত্তীর্ণ হয়েছেন জানতে পারার পরেই আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন মামলাকারী। তখনই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতিকে নির্দেশ দেন, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় মামলাকারীকে যত দ্রুত সম্ভব ইন্টারভিউতে ডাকতে হবে।
গত ৭ জুন এক টেট প্রার্থীর ইন্টারভিউ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। সেই ইন্টারভিউ এখনও পর্যন্ত নেওয়া হয়নি। আদালতের নির্দেশ না মানায় পর্ষদকে ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশও দেন বিচারপতি। কিন্তু পর্ষদ দাবি করেছিল, ডিভিশন বেঞ্চে মামলা হয়েছে। তাই ইন্টারভিউ নেওয়া হচ্ছে না।
এদিকে সোমবার বিচারপতি জানতে পারেন, এদিনই বিকেলে ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন করেছে পর্ষদ। তাহলে আগে কেন ডিভিশন বেঞ্চের কথা বলা হল তা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। শুধু তাই নয়, সোমবারই পর্ষদ সভাপতি গৌতম পালকে হাজিরা দিতেও বলা হয়েছিল। আপিলের নথি নিয়ে আসতে বলা হয়েছিল তাঁকে।
এরপরেই প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি গৌতম পালকে আপিলের নথি নিয়ে দুপুর ৩টের সময় আদালতে হাজিরা দিতে নির্দেশ দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। সেই মতোই তড়িঘড়ি এদিন কলকাতা হাইকোর্টে হাজিরা দেন পর্ষদ সভাপতি। সেখানেই প্রথমে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় তাঁকে ডিভিশন বেঞ্চে দায়ের করা মামলার নম্বর জানতে চান। সূত্রের খবর, সেই প্রশ্নের যথাযথ উত্তর ছিল না গৌতম পালের কাছে। এরপরেই অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, তিনি গৌতম পালের বেতন বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দিচ্ছেন।
তখনই পর্ষদ সভাপতি জানান, বোর্ডের ভুল হয়ে গেছে। এরপরই বোর্ডকে সিদ্ধান্ত জানানোর জন্য ৫ মিনিট সময় বেঁধে দেন বিচারপতি। পাঁচ মিনিট পরে এজলাসে এসে পর্ষদ সভাপতি আশ্বাস দেন, ডিভিশন বেঞ্চ থেকে মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। সেই শর্তে বেতন বন্ধের নির্দেশ দিয়েও প্রত্যাহার করে নেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।