‘এই এক্সিট পোলে বিশ্বাস করি না।‘ ভোটপর্ব মিটতেই এমনটাই প্রতিক্রিয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের। একইসঙ্গে এও জানালেন, এক্সিট পোলগুলির তথ্য ভুল। পাশাপাশি এও জানান, ‘এই এক্সিট পোলগুলি দুই মাসে আগেই তৈরি হয়ে গিয়েছিল। এগুলি সব বিজেপির তৈরি করা।’ এরই রেশ ধরে মুখ্যমন্ত্রী এও মনে করিয়ে দেন, ‘২০১৬, ২০১৯ ও ২০২১ সালের এক্সিট পোল দেখেছি। কোনোটাই মেলাতে পারিনি, কারণ এগুলো সব বিজেপির তৈরি। মিডিয়াকে খাইয়ে দেওয়া হয়েছে। দুই মাস আগেই এই এক্সিট পোলগুলি তৈরি হয়ে গিয়েছিল। সেই কোম্পানিটাও বিজেপির কোম্পানি।’
এই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর কটাক্ষ, ‘বিজেপি কিছু লোক পোষে। সবাই বলে মিডিয়া থেকে ‘ই’ টা উঠিয়ে দাও। ‘ও’ লিখে দাও তার বদলে। ‘মিডিয়া’ তখন ‘মোডিয়া’ হয়ে যাবে। আমি অন্য রাজ্যের বিষয়ে বলতে পারব না, কারণ আমার অন্য রাজ্য নিয়ে ধারণা নেই। তবে অখিলেশরা ভাল করবে, তেজস্বীরা ভাল করবে, স্ট্যালিনরা ভাল করবে। উদ্ধবরা ভাল করবে। যেখানে যেখানে আঞ্চলিক দল রয়েছে, তারা ভাল ফল করবে। যেই-ই আসুক না কেন, খুব বেশি সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আসবে না।’
এরই পাশাপাশি ইন্ডিয়া জোটের ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা নিয়ে মমতা বলেন, ‘যেহেতু অন্য রাজ্যের তথ্য আমার হাতে নেই সেইকারণে এরকম কোনও কথা বলতে পারি না। অন্য় রাজ্যের তথ্য নেই আমার কাছে, কিন্তু নিজের রাজ্য়ের কথা বলতে পারি। যেভাবে আমরা গরমে কাজ করেছি। সিটগুলি নিয়ে পর্যন্ত বলছে যে এই সিটে হারছে, ওই সিটে হারছে। তার মানে কি বিজেপির কাছ থেকে টাকা নিয়েছিল। জানল কী করে কোন সিটে কে জিতছে, কে হারছে।’ আর এখানেই মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, ‘ভোটটা যদি মেশিনেই হয়, ভোটটা যদি গোপনেই হয়, তবে জানল কী করে। আমরা জানবার আগে, কাউন্টিং হওয়ার আগে মিডিয়া কী করে বলছে কে কোন সিটে কে জিতবে, কে হারবে। আমি এই মিডিয়ার ক্যালকুলেশন মানি না। আমি আমাদের কর্মীদের বলব, শক্তিশালী থাকতে, ভাল করে কাউন্টিং করতে। যা সিট দেখিয়েছে মিডিয়া, তার ডবল সিট যদি জিততে না পারি, তখন দেখবেন। প্রত্য়েকটা সিট আমরা জিতব।’ একইসঙ্গে প্রত্যয়ের সঙ্গে এও জানান, ‘আমি কোনও নম্বরে যাব না। আমরা যেভাবে মাঠে-ঘাটে কাজ করেছি, আমি মানুষের চোখ দেখেছি, তাতে আমার কখনও মনে হয়নি মানুষ আমাদের ভোট দেবে না।’
একইসঙ্গে বিজেপির ওপর ক্ষোভ উগরে দিয়ে জানান, ‘বিজেপি অনেক শয়তানি করেছে। সিবিআই-ইনকাম ট্যাক্স রেইড, সিএএ, ওবিসি সার্টিফিকেট বাতিল, চাকরি খেয়ে নেওয়া, টাকা বন্টন করা। এমনকী, কংগ্রেসের এলাকাতে মুসলিম দেখে দেখে টাকা দিয়েছে। আমার মনে হয় না মুসলিমরা ওদের ভোট দেবে। তারপরও ওরা কংগ্রেসিদের টাকা দিয়েছে, যাতে কংগ্রেসকে ভোটটা দেয়, তৃণমূলের ভোটটা কাটা যায়। সিপিএমও করেছে। আমরা একসঙ্গে বিজেপি, কংগ্রেস ও সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়েছি। এই জন্য বলছি, আমাদের রাজ্য নিয়ে যা দেখিয়েছে, তা আমি বিশ্বাস করি না, বিশ্বাস করি না। বিশ্বাস করি না। এটা পুরোটা ফেক। এরা বিজেপির দালাল।’
কংগ্রেসের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ, তাহলে ইন্ডিয়া জোটের সঙ্গে ভোট পরবর্তী আলোচনায় কি এই ইস্যু অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে, এই প্রশ্নের উত্তরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, সর্বভারতীয় স্তরে কোনও অন্তরায় তৈরি হবে না যদি না সিপিএম নাক গলায়। আমার একটাই খারাপ লাগে, ইন্ডিয়া জোটে সব কিছু ঠিকঠাক চলছে, কিন্তু সিপিআইএম এদের সম্পূর্ণ মনিটরিং করছে। সিপিএম কেন মুখপাত্র হবে, আমার এটা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। প্রত্যেকটা আঞ্চলিক দলের সম্মান রয়েছে। জোট মানে সবাইকে নিয়ে চলা। কাউকে বাদ দিয়ে নয়। কাউকে গায়ের জোরে বাদ দেওয়া-সেটা হয় না।
যদি ইন্ডিয়া জোটের সরকার তৈরির মতো পরিস্থিতি হয়, তবে তৃণমূল সেই সরকারের অংশ হবে বলেও জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়। সঙ্গে এও জানান, ‘আমরা যাব। আলোচনা করব আমরা। আমি অর্বাচীন উত্তর দিতে রাজি নই। আমি আগে রেজাল্ট দেখব, তারপর বিবেচনা করব। আমাদেরও একটা অঙ্ক রয়েছে। আরও আঞ্চলিক দলকে সঙ্গে আনার চেষ্টা করব।’
এরই পাশাপাশি হুঁশিয়ারির সুরে মমজা জানান,’যারা মোদীকে জিতিয়ে দিচ্ছেন হাই ভোল্টেজে, তাদের বলছি, এত সহজ অঙ্কে পার পাওয়া যাবে না। এই সরকার কত দিন চলবে, সন্দেহ আছে।’