“সবরকমের নিয়ম ভেঙেছি” আইপিএল নিয়ে গোপন তথ্য ফাঁস করলেন ললিত মোদি

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ বা আইপিএল আজ বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় এবং ধনী ক্রিকেট লিগ। শুধু ক্রিকেট নয়, বিশ্বের অন্যান্য খেলার লিগগুলির সঙ্গেও সমান তালে প্রতিযোগিতা করছে এই টুর্নামেন্ট। ফুটবলের ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ বা বাস্কেটবলের এনবিএ-এর মতো লিগগুলির পাশাপাশি নাম লিখিয়েছে আইপিএলও। কিন্তু এত বড় মহীরুহ হয়ে ওঠার নেপথ্যে শুধুই ক্রিকেটীয় কৌশল নয়, ছিল একাধিক বিতর্কিত সিদ্ধান্ত এবং নিয়ম ভাঙার সাহস। আর এই সাহসী পদক্ষেপগুলির কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন ললিত মোদি—আইপিএলের প্রথম চেয়ারম্যান। ২০০৮ সালে আইপিএলের সূচনা হয়েছিল এক অভূতপূর্ব আড়ম্বরে। ঝাঁ চকচকে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, প্রচারের অভিনব কৌশল এবং কোটি কোটি টাকার বিনিয়োগ—সব মিলিয়ে এক নতুন দুনিয়া তৈরি করেছিলেন ললিত মোদি। অনেকেই মনে করেন, তাঁর মস্তিষ্কপ্রসূত এই লিগই ভারতীয় ক্রিকেটের অর্থনীতিকে নতুন পথে নিয়ে গিয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে মোদি স্বীকার করেছেন, আইপিএলকে জনপ্রিয় করার তাগিদে তিনি প্রথম থেকেই নিয়ম ভাঙতে বাধ্য হয়েছিলেন। প্রথম আসরের সম্প্রচারের একচ্ছত্র স্বত্ব ছিল সোনি স্পোর্টসের হাতে। চুক্তি অনুযায়ী, অন্য কোনও চ্যানেল ম্যাচের সম্প্রচার বা অংশবিশেষ দেখাতে পারত না। কিন্তু মোদি তখনও নিশ্চিত ছিলেন না সোনির জনপ্রিয়তা এবং পৌঁছনো নিয়ে। তাঁর ভয় ছিল, যদি প্রথম ম্যাচ দর্শকদের আকর্ষণ করতে না পারে, তাহলে গোটা প্রকল্প ভেস্তে যাবে।

তাই তিনি সবরকম ঝুঁকি নিয়ে নিয়ম অগ্রাহ্য করেন। নিজের স্বীকারোক্তিতে মোদি জানিয়েছেন, তিনি একাধিক নিউজ চ্যানেলকে উৎসাহিত করেছিলেন যেন তারা ম্যাচের কিছু অংশ লাইভ দেখায়। লক্ষ্য একটাই—যত বেশি সম্ভব মানুষের কাছে প্রথম ম্যাচ পৌঁছে দেওয়া। ফলাফল সত্যিই বিস্ময়কর হয়েছিল। উদ্বোধনী ম্যাচে কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে ব্রেন্ডন ম্যাকালামের ঝোড়ো ১৫৮ রানের ইনিংস শুধু দর্শকদের মুগ্ধই করেনি, বরং লিগকে রাতারাতি জনপ্রিয় করে তুলেছিল।

টেলিভিশনের সামনে কোটি কোটি মানুষ সেই ম্যাচ উপভোগ করেছিলেন। ললিত মোদি পরে বলেছেন, “যদি ওই ম্যাচটা হিট না হত, তবে আমার সব শেষ হয়ে যেত। তাই যেভাবেই হোক আমি নিশ্চিত করেছিলাম যে মানুষ সেটা দেখবে।” অবশ্য সোনি স্পোর্টস এই বিষয়টি জানার পর ক্ষুব্ধ হয়েছিল। তারা এমনকি মোদিকে মামলা করার হুমকিও দিয়েছিল। কিন্তু প্রথম ম্যাচের বিপুল জনপ্রিয়তার আঁচ সোনিও টের পায় এবং পরে আর বিষয়টি ততটা এগোয়নি। মোদি কার্যত দেখিয়ে দিয়েছিলেন, কখনও কখনও নিয়ম ভাঙা সত্ত্বেও সঠিক কৌশল একটি স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে পারে।

আজ ১৭ বছর পরও আইপিএল বিশ্বের শীর্ষ তিন জনপ্রিয় ক্রীড়া লিগের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে। তার পেছনে রয়েছে প্রচুর বিনিয়োগ, দক্ষ ব্যবস্থাপনা এবং ক্রিকেটীয় উত্তেজনা। কিন্তু এর ভিত্তি তৈরি হয়েছিল সেই প্রথম ম্যাচে, যেখানে একদিকে ছিল ম্যাকালামের ইনিংস, অন্যদিকে ছিল ললিত মোদির নিয়ম ভাঙার সাহস। বলা চলে, বিতর্ককে সঙ্গে নিয়েই জন্ম হয়েছিল এই লিগের, যা এখন কোটি টাকার ব্র্যান্ড এবং কোটি মানুষের আবেগের নাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one + sixteen =