সিঁদুর! হিন্দু ঘরের সধবাদের কাছে যার আবেগ ঠুনকো হয়নি জিন্স, প্যালাজোর যুগেও।
সিঁদুর, যা নিয়ে আবেগঘন যাত্রাপালার নাম থেকে রয়েছে একাধিক বাংলা সিনেমা, রয়েছে হিন্দি-বাংলা নির্বিশেষে একাধিক সংলাপ। সেই সিঁদুর নিয়ে এবার শোভন-রত্না তরজা।
স্ত্রী রত্নাকে ছেড়ে বহুদিন বান্ধবী বৈশাখীকে নিয়ে রয়েছেন কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। বৈশাখীর বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে তাঁর স্বামীর সঙ্গে। তবে শোভন-রত্নার আইনি বিচ্ছেদ হয়নি এখনও। সোমাবার ডিভোর্সের মামলায় আলিপুর আদালত চত্বরে দাঁড়িয়ে বৈশাখীকে লক্ষ্য করে একের পর এক মন্তব্য করেছিলেন বেহালা পূর্বের তৃণমূল বিধায়ক রত্না। রত্না প্রশ্ন তোলেন, “কেন সিঁদুর পড়েন বৈশাখী? ওনার তো ডিভোর্স হয়ে গেছে। নিজের মেয়েটাকে কেন বার বার আমার স্বামীর সন্তান বলে সব জায়গায় পরিচয় দেওয়ার চেষ্টা করছেন?” তারই জবাব এল মঙ্গলবার দুপুরে। ১৬ মিনিটের কিছু বেশি সময়ের ওই ভিডিয়োর রত্নার বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন শোভন।
স্পষ্ট করেছেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে সিঁদুর পরতে বলেছেন তিনিই। সোমবার রত্না চট্টোপাধ্যায়ের তোলা প্রশ্নের জবাবে ‘আমার সুরক্ষাকবচ’ বলে শোভনের উত্তর দেওয়া ভিডিয়ো ফেসবুকে পোস্ট করেছেন বৈশাখী। সেই ভিডিয়োয় রত্নাকে শোভনের পাল্টা প্রশ্ন, ‘আপনি (রত্না) এ সব নিয়ে প্রশ্ন তোলার কে?’ তিনি বলেছেন, ‘জেনে রাখুন, বৈশাখীকে সিঁদুর পরার অনুরোধ আমিই করেছিলাম। উপদেশ যদি কেউ দিয়ে থাকে তার নাম শোভন চট্টোপাধ্যায়।’ শোভন এও বলেন, ‘আমি যতদিন বেঁচে থাকব বৈশাখী ততদিন সিঁদুর ও মঙ্গলসূত্র পরবেন। যাতে ওঁর শ্রীবৃদ্ধি হয়।’
শোভনের বক্তব্য, ২২ বছরের সংসারের পরেও তিনি মনে করেন ২২ বছরের সেই সম্পর্ক ছিল তাঁর জীবনের ‘বড় ভুল’।
এই উত্তর শুনে রত্না চট্টোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, ‘বাহ! বাহ! বাহ! এই হল কলকাতার প্রাক্তন মহানাগরিক।’
আইন মতে এখনও রত্না শোভনের ধর্মপত্নী। সেই ধর্মপত্নীর আর একটি টিপ্পনিতে অগ্নিশর্মা শোভন। কলকাতার প্রাক্তন মেয়র বলেন, ‘বৈশাখীকে বলছেন ছেলেধরা? শুনুন, ২২ বছর সংসার করেছি একজন ছেলেধরার সঙ্গে।’
এ ব্যাপারে অবশ্য নির্লিপ্ত রত্না। তিনি বলেন, ‘ছেলেধরাকে ছেলে ধরা বলব না তো কী বলব! আমি কি একা বলছি? গোটা দুনিয়া দেখছে একটা বুড়ো ছেলেকে ধরেছেন বৈশাখী। তাই শোভন ও যা পারছে বলুক। আমার কী!’
শোভনের অভিযোগ, আগের দিন যখন বৈশাখী আদালতে সাক্ষ্য দিতে গিয়েছিলেন তখন লোকলস্কর নিয়ে এসে তাঁকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। রত্না এর জবাবে বলেছেন, ‘ওভাবে কোনও ডিভোর্স মামলাকে প্রভাবিত করা যায় না। আমি ওই অপচেষ্টা কখনও করব না।’
রাজনীতির ময়দানে পারিবারিক সম্পর্ক হাটখোলা হয়ে যাওয়ার ঘটনা জাতীয় রাজনীতিতে আকছার ঘটে। শ্বশুর বউমা ঝগড়া, বাবা-ছেলের বিতণ্ডা দেখা গিয়েছে উত্তরপ্রদেশ, বিহারের রাজনীতিতে। কিন্তু বাংলায় দাম্পত্য কলহ শোয়ার ঘর থেকে কার্যত রাস্তায় নেমে এসেছে।