বেপরোয়া গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু হল স্বামীর, জখম স্ত্রী ও মেয়ে

মালদা: মালদা সদর মহকুমা শাসকের বেপরোয়া গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু হল এক ব্যক্তির বলে অভিযোগ উঠেছে। গুরুতর জখম হয়েছেন মৃতের স্ত্রী এবং কোলের এক কন্যা সন্তান। তাদের চিকিৎসা চলছে মালদা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। এই ঘটনায় চরম অসন্তোষ ছড়িয়েছে মৃতের পরিবার ও পাড়া প্রতিবেশীদের মধ্যে। রবিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে, মালদা শহরের বৃন্দাবনে মাঠ সংলগ্ন বাঁধ রোড এলাকায়। ওই মাঠেই রবিবার রাতে নকআউট ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করেছিল একটি ক্লাব। সেখানে উপস্থিত হয়েছিলেন বলিউডের খ্যাতনামা অভিনেতা গোবিন্দা। আর সেই অভিনেতাকে দেখার জন্য কাতারে কাতারে মানুষ জড়ো হয়েছিল বৃন্দাবনে মাঠ প্রাঙ্গণে। আর তারই পাশে থাকা রাস্তায় এত ভিড়ের মধ্যে চারচাকা গাড়ি ধাক্কা মারে ওই দম্পতির মোটরবাইকে। কিভাবে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটল তা নিয়েও বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
তবে গাড়ির মধ্যে সদর মহকুমা শাসক ছিলেন কিনা এবং গাড়িটিকে চালাচ্ছিলেন তা নিয়েও ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। মৃতের স্ত্রী’র অভিযোগ, মদ্যপ অবস্থায় চালক গাড়ি চালিয়েই দুর্ঘটনায় তার স্বামীকে মেরে ফেলেছে। মৃতদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মালদা মেডিক্যাল কলেজের মর্গে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে পুলিশ। সোমবার সকালে মালদা মেডিক্যাল কলেজে অসুস্থ ওই মহিলা এবং তার কন্যা সন্তানকে দেখতে যান ইংরেজবাজার পুরসভার চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী। তার সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন মৃতের পরিবার।
পুলিশ ওই স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতের নাম পাপ্পু দাস (৩৫)। তার বাড়ি পুরাতন মালদা থানার সাহাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বালা সাহাপুর এলাকায়। এদিন মোটর বাইক চালিয়ে স্ত্রী এবং কোলের এক কন্যা সন্তানকে নিয়ে মালদা শহরের গাদুয়ার মোড়ের শ্বশুরবাড়ি থেকে নিজের বাড়ি ফিরছিলেন ওই ব্যক্তি। সেই সময় বৃন্দাবনী মাঠ সংলগ্ন বাঁধের রাস্তায় বেপরোয়া ভাবে সদর মহকুমার শাসকের গাড়িটি ওই মোটরবাইকটিতে এসে সজোরে ধাক্কা মারে বলে অভিযোগ। তিনজনেই ছিটকে পড়ে যায় রাস্তায়। তারপরেই সেই গাড়িটি আহতদের চাপা দিয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।
মৃতের স্ত্রী সিমি দাস বলেন, আমি স্বামীর মোটরবাইকে করে কোলে মেয়েকে বসিয়ে মালদা শহরের গাদুয়ার মোড়ের বাবার বাড়ি থেকে ফিরছিলাম। বৃন্দাবনী মাঠ সংলগ্ন বাঁধরোড এলাকায় আচমকাই গাড়ি এসে আমাদের মোটরবাইকে ধাক্কা মারে। আমরা ছিটকে পড়েছিলাম। আমাদের উদ্ধারের জন্য সেই সময় আমার স্বামী গাড়ি থেকে নেমেও গিয়েছিল। চোখের সামনে স্বামীকে গাড়ি ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়ালে চেপে দেয়। নিজেরা আহত হলেও স্বামীকে বাঁচানোর জন্য আর্ত চিৎকার শুরু করে দিই। এরপরই আশেপাশের লোকজন এসে আমাদের উদ্ধার করে। গাড়ি যিনি চালাচ্ছিলেন তিনি চরম মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন। ইংরেজবাজার পুরসভার চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী বলেন, ঘটনাটি যখন ঘটে, তার পাশের একটি মাঠে ফুটবল টুর্নামেন্ট চলছিল। আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করি। কিন্তু গাড়ির ভিতরে কে ছিল, তা বলতে পারব না। ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। মৃতের পরিবার অভিযোগ করলে সেটা পুলিশ, প্রশাসন তদন্ত করে দেখবে। ইংরেজবাজার থানার পুলিশ জানিয়েছে, দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে এক ব্যক্তির। অস্বাভাবিক মৃত্যুর জন্য একটি মামলা রুজু হয়েছে। তবে যে অভিযোগ করা হচ্ছে সে ব্যাপারে নির্দিষ্ট ধারায় এখনও লিখিত নালিশ জমা পড়েনি। অভিযোগ দায়ের হলে অবশ্যই বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। যদিও এ প্রসঙ্গে মালদা সদর মহকুমাশাসক সুরেশচন্দ্র রানোর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তার কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

20 − eight =