আর্থিক মন্দায় ধুঁকছে হাওড়ার বিখ্যাত বুড়িমার ফায়ার ওয়াক্স-এর বাজি

কালী পুজো মানেই অনেকেই মনে করেন শুধু শব্দ বাজি । আরও সোজা ভাবে বললে চকলেট বোমা। আর চকলেট বোমা মানেই ভেসে ওঠে বুড়িমার ছবি যাতে লেখা থাকে  ‘বুড়িমার চকলেট বোম’।

হাওড়ার প্রসিদ্ধ এই বুড়িমার নাম প্রায় সকলেই শুনেছেন। তবে বুড়িমার নামের পিছনে রয়েছে অপার সংগ্রামের এক হার না মানা কাহিনী।

বুড়িমার চকলেট বোমের প্যাকেটে যাঁর ছবি দেখতে পান তাঁর আসল নাম অন্নপূর্ণা দাস। এই অন্নপূর্ণা দাস ছিলেন বাংলাদেশের ফরিদপুরের বাসিন্দা। ১৯৪৮ সালে স্বামী সুরেন্দ্রনাথের মৃত্যুর পর দেশভাগের সময় ওখান থেকে ভিটেছাড়া হয়ে দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে তিনি এই বঙ্গের পশ্চিম দিনাজপুর জেলার ধলদিঘিতে চলে আসেন। ঠাঁই নেন একটি রিফিউজি ক্যাম্পে। এরপর নানান ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে এক অদম্য লড়াই চলল অন্নপূর্ণা দাসের।

তৎকালীন সময়ে মাত্র ৯০০ টাকা দিয়ে বেলুড়ে বাড়ি কিনে নেন তিনি। সেখানেই শুরু করেন বাজির কারখানা। পরে নানান ধরণের আতসবাজি তৈরি করলেও সব চেয়ে বিখ্যাত ছিল তাঁর বুড়িমার চকলেট বোমাই। বুড়িমা জীবিত না থাকলেও তার এই বাজির দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন বুড়িমার নাতি  সুমন দাস। তিনি বলেন, বর্তমানে প্রশাসনের নির্দেশে শব্দবাজি সবই নিষিদ্ধ। একটি সময় ছিল যখন বুড়িমার শব্দবাজির চল ছিল একচেটিয়াভাবে। এখন সেই  শব্দবাজি নিষিদ্ধ হলেও তাঁরা বাজারে নিয়ে এসেছেন পরিবেশবান্ধব সবুজ বাজি। বর্তমানে এই সবুজ বাজির মূল্য শব্দ বাজির তুলনায় অনেক গুণ বেশি। তাই এই সমস্ত বাজি সরকারি অনুমতিতে চললেও তা কিনতে ক্রেতাদের তেমন ভিড় নেই।  কারণ ক্রেতাদের কাছে আজও একইভাবে চাহিদা বেশি  শব্দবাজির।  তবে সরকারি নিষেধাজ্ঞার কারণে শব্দবাজি আর  তাঁরা তৈরি করছেন না।

পাশাপাশি তিনি জানান, বিগত দুই বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং করোনার দরুণ বাজির বাজার তেমন ভালো ছিল না। তাই এবছর বাজি তৈরি হলেও ক্রেতাদের সংখ্যা খুবই কম। তাই তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এভাবেই চলতে থাকলে  এই ব্যবসাকে কি ভাবে টিকিয়ে রাখবেন সেটাই বড় চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে তাঁদের কাছে। এছাড়াও তিনি আরো জানান, যেহেতু বুড়িমা একটি প্রসিদ্ধ নাম হওয়ার পড়েও যদি এমন করুণ অবস্থা হয়, তাহলে ছোটখাটো ব্যবসায়ীদের নিদারুণ অবস্থা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তিনি এক কথায় বাজির ব্যবসায় মন্দা নেমে এসেছে বলেই দাবি করেন।

পাশাপাশি তিনি সরকারি নীতির সমালোচনা করে বলেন, সরকার যদি সময় থাকতে বাজি তৈরি ও বিক্রির বিষয়ে পদক্ষেপ নিত সেক্ষেত্রে তাঁরাও বেশি সময় পেতেন। এখন যা পরিস্থিতি তাতে ব্যবসায়ীরা বাজি তুলতে ভয় পাচ্ছে। যেহেতু বাজি নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী নয় তাই কাগজ, বোর্ডের দাম বৃদ্ধির জন্য বাজি তৈরির খরচ বাড়ছে। এতে বাজারে বাজি অনেক বেশি দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন বিক্রেতারা। একদিকে সরকারের ঢিলেঢালা নীতি, অপরদিকে ব্যবসায়িক মন্দা, দুই মিলে বাজির বাজার খুবই আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছে বলেই তিনি দাবি করেন।

তবে ব্যবসার আর্থিক মন্দা যতই হোক না কেন অন্নপূর্ণা দেবী ওরফে বুড়িমা কিন্তু বিখ্যাত হয়ে আছেন তাঁর সেই ‘বুড়িমার চকোলেট বোম’-এর জন্যই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

fourteen − eleven =