হাওড়ার জল কথা : হাওড়ার জনপদের জল সূত্রের বিবর্তনের প্রাচীন ইতিহাস

হাওড়া : জল ছাড়া জীবন টিকতে পারে না। তাই জলের অপর নাম জীবন। মানব সভ্যতার বিবর্তনের সঙ্গে জল সূত্র অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত। একইভাবে যুক্ত হয়ে রয়েছে প্রায় ৬০০ বছরের হাওড়ার জনপদে জল সূত্রের ইতিহাস। যদিও হাওড়া শহরের পানীয় জলের সমস্যার ইতিহাস অতি সুপ্রাচীন ও বিস্ময়কর। আজ থেকে প্রায় ২০০ বছর আগে ১৮৮০ সালে অনেক হাওড়াবাসী খাবার জল আনতেন গঙ্গা থেকে। এক বড়ো ভার যার দাম পড়তো এক পয়সা। সেই জল বাড়ির বড় জালার মধ্যে রেখে দেওয়া হতো। এরপর ওই জল ভর্তি জালার সারা গায়ে এক বিশেষ প্রকারের ফল ঘষে দেওয়া হতো।

এতে একদিকে যেমন জালার জল পরিশুদ্ধ থাকতো অনেকদিন, তেমনই জলে পোকা ধরতো না এবং অনেক দিন পরিষ্কারও থাকতো। অবশ্য সেই সময়ে যাদের আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল তারা শহর কলকাতা থেকে জল অনিয়ে পান করতেন। এর জন্য ধনীদের বাড়িতে তৈরি করা হতো একটি বিশেষ ঘর। যা ‘জলঘর’ নামে পরিচিত। পরিবারের সদস্যরা এই জলঘরকে অত্যন্ত শুদ্ধ এবং সূচিতার মাধ্যমে রক্ষনাবেক্ষণ করতেন।

গঙ্গার দুই পাড়ের যমজ শহর কলকাতা ও হাওড়া। তবু হাওড়ার আগে কলকাতায় কলের জল আসে। সালটা ১৮৭০ আর হাওড়ায় প্রথম জলের কল বসে তার ২৬ বছর পরে। সালটা ১৮৯৬, ওই বছরের ১০ জানুয়ারি বাংলার ছোট লাট আলেকজান্ডার ম্যাকেঞ্জী সাহেব হাওড়া পৌরসভার জল প্রকল্পের উদ্ভোধন করেন। এই জল শোধনাগারই এখন হাওড়া ‘ওয়াটার ওয়ার্কস’ নামে পরিচিত। শ্রীরামপুর টেক্সটাইল কলেজের বিপরীতে ৮২ বিঘা জমির উপরে এই জলকল গড়ে উঠেছিল। এরমধ্যে জলের উপরে ভাসমান পদার্থ থিতিয়ে রাখার জন্যে ৪ টি পুকুর তৈরি হয়েছিল।

পাশাপাশি জল পরিশোধনের জন্য ১১টি ফিল্টারের ব্যবস্থা করা হয়। পুরানো নথি বলছে দৈনিক ১২৬ লক্ষ গ্যালন জল হাওড়া শহরের পঞ্চাননতলা রোড, সালকিয়া, কৈপুকুর এবং শিবপুর জলাধারের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়। পরবর্তীতে হাওড়া পৌরসভা নিয়মে রূপান্তরিত হওয়ার পরে পদ্ম পুকুর জল প্রকল্প এই জল সূত্রের নবীন সংযোজন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three × two =