পুজোর মুখে কর্মীদের বেতন আটকে হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সমিতির

দুর্গাপুজো শুরু হতে আর মোটে একটা সপ্তাহ। রাজ্যবাসী উৎসবের মেজাজে থাকলেও মুখে হাসি নেই হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতির কর্মচারীদের। আগস্ট, সেপ্টেম্বর মাসের মাইনে বকেয়া। আগের ওভারটাইম সহ বেশ কিছু টাকাও আটকে রয়েছে বলে কর্মচারীদের অভিযোগ। আর এই টানাপোড়েনে অনিশ্চিয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন সংস্থার কয়েকশো কর্মী। যদিও কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিচ্ছেন সামনের সপ্তাহে কর্মীদের পুজোর বোনাস দিয়ে দেওয়া হবে। যদিও অতীতের অপূর্ণ প্রতিশ্রুতির অভিজ্ঞতা থেকে কর্তৃপক্ষের আশ্বাসের উপরে কর্মীরা ভরসা রাখতে পারছেন না। পাশপাশি বর্তমানের রুগ্ন এই সংস্থাকে পুনরায় বাঁচিয়ে তুলতে সরকারি হস্তক্ষেপ ও পরিষেবার ভাড়া বৃদ্ধির দাবি করছেন সংস্থার কর্মীরাই। না হলে খুব দ্রুত এই সংস্থার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে বলেই কর্মীরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।
হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতিতে দীর্ঘদিন ধরে অচলাবস্থা চলছে, একদিকে নজিরবিহীন দুর্নীতির অভিযোগ অন্য দিকে মেয়াদ উত্তীর্ণ ভেসেলকে কেন্দ্র করে নাজেহাল হতে হচ্ছে সংস্থাকে। ইতিমধ্যেই সংস্থার ১৩টি বড় লঞ্চ ও ৮টি ছোট কাঠের লঞ্চ রয়েছে। হাওড়া থেকে শোভাবাজার,বাগবাজার,আর্মেনিয়াম,বাবুঘাট সহ আরও কিছু রুটে এই লঞ্চগুলো যাতায়াত করে। যার মধ্যে ফিট শংসাপত্র মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ার দরুন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বেশ কয়েকটি। সংস্থার কর্মী নীলয় চক্রবর্তী বলেন, ‘লোকসানে চলছে এই সংস্থা। ৬ টাকায় টিকিট বিক্রি করা হয়। ভেসেলের টিকিটের দাম না বাড়ালে এবং সরকারি হস্তক্ষেপ না পেলে আগামীদিনে হয়তো এই গুরুত্বপূর্ণ লঞ্চ পরিষেবা বন্ধ হয়ে যাবে।’ কর্মচারীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে অচলাবস্থা চলছে। নয়মিত বেতন হচ্ছে না। সামনে পুজো এইসময় পরিবারের জন্য কীভাবে কেনাকাটা করবেন তা জানেন না।
যদিও সংস্থার পক্ষ থেকে পুজোর বোনাস দেবার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। তবে কর্মীরা সংস্থার ভবিষ্যৎ নিয়ে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন। এই সমবায় সমিতির স্পেশ্যাল অফিসার জয় ধর সংস্থার রুগ্ন পরিস্থিতির কথা স্বীকার করে বলেন, ‘কোভিডের সময় থেকে সমস্যা বেশি শুরু হয়। লঞ্চগুলো বন্ধ অবস্থায় পড়েছিল। রাজ্য সরকার দু’দফায় চার কোটি টাকা দিয়েছিল। যদিও লঞ্চ রক্ষণাবেক্ষণ ও কর্মচারীদের মাইনে দেওয়াতেও সেই টাকা পর্যাপ্ত ছিল না। এছাড়াও অন্যান্য পরিবহণের ক্ষেত্রে ভাড়া বাড়লেও এখানে দীর্ঘদিন ধরে ছয় টাকা ভাড়া রয়েছে। যার জেরে সংস্থার লোকসান হচ্ছে।’ সংস্থার স্থায়ী অস্থায়ী প্রায় ৩০৬ জনের দু’মাসের মাইনে এখনো বকেয়া রয়েছে। তাই পুজোর আগে অন্তত বোনাস দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। লঞ্চ গুলোর ফিটনেস শেষ হয়ে যাচ্ছে আগামী জানুয়ারি মাসে। নতুন ফিটনেস করাতে খরচ প্রচুর টাকা। এরমধ্যে ফিটনেস সার্টিফিকেট না হলে বন্ধ হয়ে যাবে এই সমস্ত রুটে লঞ্চ পরিষেবা। যদিও এই বিষয় নিয়ে পরিবহণ মন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। প্রায় দেড় কোটি টাকা দেবার জন্য আমরা আবেদন করেছি। এছাড়াও লঞ্চ ভাড়া কমপক্ষে দু’ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এই রুট গুলোতে বছরে প্রায় এক কোটি ৩০ লাখ মানুষ যাতায়াত করেন। ভাড়া বাড়লে ২ কোটি ৬০ লাখ টাকা আয় হবে। এতে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতি। আর না হলে সংস্থার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।’
উল্লেখ্য ২০১৮ সালেও হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ যথেষ্টই লাভের মুখ দেখেছিল। পরবর্তী বছরগুলোতে সংস্থার অভ্যন্তরে বে লাগাম দুর্নীতি ও অযোগ্য পরিচালনার মাশুল দিতে হচ্ছে এমনটাই অভিযোগ সংস্থার কর্মী সহ বিরোধী দলগুলো। সম্প্রতি বিজেপির পক্ষ থেকে মেয়াদ উত্তীর্ণ ভেসেল দিয়ে যাত্রীদের প্রানের ঝুঁকি নেওয়া হচ্ছে এমন অভিযোগ আসার পর নড়েচড়ে বসে সংস্থা। বসিয়ে দেওয়া হয় একাধিক রুটের ভেসেল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two × 3 =