‘আমার বিরুদ্ধে যদি একটা পাতা, একটা কাগজ প্রকাশ করতে পারে, আমি রাজনীতির আঙিনায় পা রাখব না।’ রবিবার ঠিক এই ভাষাতেই বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়তে দেখা গেল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। একইসঙ্গে ডায়মণ্ড হারবারে গত ৮ বছরের উন্নয়নের খতিয়ান পেশও করেন ডায়মণ্ড হারবারের সাংসদ।কারণ, ২০১৪ সালে প্রথম এই কেন্দ্র থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন অভিষেক। এরপরই এদিন ফলতা বিডি গ্রাউন্ডে ডায়মণ্ড হারবারে গত আট বছরের কী কী উন্নয়ন করেছেন সেটাই বইয়ের আকারে ছাপিয়ে বের করলেন সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। নাম ‘নিঃশব্দ বিপ্লব’। শুধু তাই নয়, এদিনের এই মঞ্চ থেকেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পাশাপাশি স্যাফ্রন ব্রিগেডকেও বিদ্ধ করতে ছাড়েননি তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড। প্রসঙ্গ টেনে আনলেন সম্প্রতি অভিষেক জায়া স্ত্রী রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সন্তানসহ বিদেশ যেতে বাধার ঘটনাকে। অভিবাসন দপ্তর থেকে বাধা দেওযার পরই বিমানবন্দরেরই নোটিশ ধরিয়েছিল ইডি।এই ঘটনাকে সামনে এনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে হুঁশিয়ারির সুরে বলেন,’ ৫৬ ইঞ্চি ছাতি নাকি প্রধানমন্ত্রীর। তিনি আমার তিন বছরের বাচ্চা ছেলেকে বিদেশে যেতে আটকাচ্ছেন। আমার নয় বছরের মেয়েকে আটকাচ্ছেন, কারণ ওঁর বাবার নাম অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আমার স্ত্রীকেও আক্রমণ করতে ছাড়েননি। ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হবেই। মনে আছে তো আপনি আমেরিকা যেতে চেয়েছিলেন কংগ্রেস ভিসা দেয়নি। এরপর কংগ্রেসকে জবাব দিয়েছেন সাধারণ মানুষ। মানুষ এসব পছন্দ করে না।’ এখানেই শেষ নয়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বিদ্ধ করে এও বলেন,’ লড়াই করতে হলে রাজনৈতিক ময়দানে করুন। ব্যক্তিগত আক্রমণ কেন? মানুষ চেয়েছে বলে কেউ প্রধানমন্ত্রী হয়েছে, কেউ মুখ্যমন্ত্রী। যেদিন মানুষ চাইবে না গদি থেকে টেনে হিঁচড়ে নামিয়ে দেবে। আমি নয়, মানুষই আপনাকে জবাব দেবে।’
একইসঙ্গে সাংসদ ভবন পরিবর্তনের ঘটনাকে তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন-কম্যান্ড।এই প্রসঙ্গে বলেন,’ প্রধানমন্ত্রী পালটানোর রাজনীতি খুব ভালোবাসেন। আগে শহরের নাম পালটাতেন, জায়গার নাম পালটাতেন, এখন সংসদ ভবনই পালটে ফেলছেন।’ বিজেপির উদ্দেশে তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘ যত কুৎসা করবেন, তত গর্তে ঢুকবেন। আমি বিজেপির পোষা কুত্তা হয়ে থাকব না। ২১-এর থেকে ২৩ আর ভোট বাড়বে তৃণমূলের। বিজেপির কাছে আছে সিবিআই-ইডি, টাকা, কেন্দ্রীয় সংস্থা, কেন্দ্রীয় বাহিনী এমনকী আদালতের একাংশও। আর তৃণমূলের কাছে আছে শুধু মানুষের সমর্থন আছে। রাজনীতিতে যে সন্ত্রাস আপনারা এনেছেন, তার অবসান হবেই।’ কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রসঙ্গ তুলে তিনি বিরোধীদের ধন্যবাদ দিয়ে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় বাহিনী যদি আসে কাকদ্বীপ থেকে কোচবিহার তৃণমূলই জিতবে। কারণ, ভোট মানুষ দেয়। একুশকে মনে করে দেখুন।’ আর সঙ্গে সাফল্যের সমস্ত রিপোর্ট তুলে ধরে আত্মবিশ্বাসী অভিষেক বলেন, ‘একুশের থেকে ২৩-এর ব্যবধান বাড়বে। ২৩-এর থেকে ২৪-এ ভোট আরও বাড়বে।’ একইসঙ্গে এও ডায়মণ্ডহারবাসীকে এও মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘২০১৪ সালের প্রথম বার যখন আমি ডায়মণ্ড হারবারে দাঁড়িয়েছিলাম তখন আমি ৭১ হাজার ২৯৯ ভোটে জয়ী হয়েছিলাম। কিন্তু ২০১৯ সালে আমার কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী এসে প্রচার করে বলে গিয়েছিলেন ডব্বা গুল হো জায়েগা। কিন্তু আপনারা আমাকে ৩ লক্ষ ২২ হাজার ভোট জয়ী করেছিলেন। পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি লোকসভা আসনের মধ্যে আপনারা আমাকে সর্বাধিক ভোট পেতে সাহায্য করেছিলেন।’ সঙ্গে অভিষেকের সংযোজন,‘২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে আমাকে আপনারা ৪ লক্ষের বেশি ভোটে জয়ী করুন। জবাব আপনাদের দিতে হবে। ২০২১ সালে সোনালী গুহ ও দীপক হালদারদের যোগদান করিয়ে ভেবেছিল অনেক কিছু হবে।’