মুখ্যমন্ত্রীর পাড়ায় ঐতিহাসিক মিছিল ডিএ আন্দোলনকারীদের

ঘড়ির কাঁটায় ঠিক দুপুর একটা সাত মিনিট। হাজরা মোড় থেকে শুরু হয় ডিএ আন্দোলনকারীদের মিছিল। সেই মিছিলের মুখ যখন তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি পার হয় তখন ঘড়িতে একটা ৩৭ মিনিট। তবে মিছিল যখন হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিট হয়ে হরিশ মুখার্জি রোডের দিকে তখনও মিছিলের ল্যাজ হাজরা মোড়ে। আন্দোলনকারীদের এই ছবি থেকেই স্পষ্ট, আন্দোলনকারীদের তেজ এবং শক্তির।
এদিকে শনিবার সকাল থেকেই অভিষেকের বাড়ির সামনে পুলিশে ছয়লাপ। এক নিরাপত্তা বলয়ে মুড়ে ফেলা হয় অভিষেকের বাড়ি। প্রশাসনের অনেকের উৎকণ্ঠা ছিল অভিষেকের বাড়ির সামনে দিয়ে যখন মিছিল যাবে তখন কী পরিস্থিতি হবে তা নিয়ে। আদতে দেখা যায় বেলা একটা ৪৮ মিনিটে বেশ শান্ত মেজাজেই অভিষেকের বাড়ি ‘শান্তিনিকেতন’ পার করে যায় মিছিলের একটা বড় অংশ। এই জায়গাটা শান্তিতে পার করা ডিএ আন্দোলনকারীদের কাছেও চ্যালেঞ্জ ছিল। যাতে না অত্যুৎসাহী কারও জন্য আদালতের ভর্ৎসনা না শুনতে হয়। তবে অভিষেকের বাড়ির সামনে আন্দোলনকারীদের স্লোগানের পারদ যে কিছুটা চড়ে সেটা মানতেই হবে।
তবে পাশাপাশি এটাও স্বীকার না করে উপায় নেই, মিছিল সরকারি কর্মচারীদের হলেও স্লোগানের সুর, মেজাজ, সাজসজ্জা যেন হার মানাবে ছাত্র-যুব মিছিলকেও। শনিবার ডিএ আন্দোলনকারীদের যে মিছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির পাশ দিয়ে যাবে সেই মিছিলে দেখা যায়, একটি শবদেহ-সহ খাটিয়া রয়েছে। তবে সেই শব প্রতীকী। সেই খাটিয়ার গায়ে লেখা ‘পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিবেক।’
অতীতে বাম জমানায় এমন খাটিয়া নিয়ে মিছিল করতে দেখা যেত তৃণমূল কংগ্রেসকে। সেই খাটিয়ায় শোয়ানো প্রতীকী শবদেহের গায়ে লেখা থাকত ‘হার্মাদ রাজ’। তৃণমূল জমানায় একেবারে মুখ্যমন্ত্রীর পাড়ায় একই কায়দায় সেই একই রাস্চায় হেঁটে একেবারে বাম -জমানার ‘রিপ্লে’ দেখালেন সরকারি কর্মচারীরা।
এ ব্যাপারে সংগ্রামী যৌথ আহ্বায়ক ভাস্কর ঘোষ বলেন, ‘শান্তিনিকেতন একটাই আছে। যেটা রবীন্দ্রনাথ তৈরি করেছিলেন। বাকি এসব হল অশান্তিনিকেতন। কর্মচারী, শিক্ষক-শিক্ষিকারা দায়িত্বশীল। তাঁরা জানেন কীভাবে মিছিল করতে হয়। শুধু সরকার জানে না কর্মচারীদের প্রতি তার দায়িত্ব কী।’
পাশাপাশি সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের তরফ থেকে এদিন জানানো হয়, ইতিহাস লেখা হল হাজরা মোড় এলাকায়। একইসঙ্গে তাঁদের দাবি, অভাবনীয় জমায়েত হয়েছে শনিবার। তাঁরাও কল্পনা করেননি, দূরবর্তী জেলা থেকে এত কর্মচারী, শিক্ষক-শিক্ষিকা আসবেন।
বঙ্গ রাজনীতির অনেকেই জানাচ্ছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারে আসার পর হাজরা বা কালীঘাট এলাকায় এত বড় রাজনৈতিক মিছিল হয়নি। মুখ্যমন্ত্রীর পাড়াতে তো নয়ই। কারণ পুলিশ অনুমতিই দেয় না। তবে ডিএ আন্দোলনকারীরা হাইকোর্টের অনুমতিতে মিছিল করেন এদিন। একাধিক শর্ত বেঁধে দিয়ে কর্মচারীদের মিছিল করার অনুমতি দেন বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা। পরিস্থিতি যাতে বেগতিক না হয় তার জন্য ছিল নজিরবিহীন পুলিশি নিরাপত্তাও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 × two =