নজর দূষণমুক্ত পরিবেশ, হাইকোর্টের নির্দেশে আগষ্ট থেকে বাতিল হবে ১৫ বছরের পুরনো বাস, কপালে চিন্তার ভাঁজ বাস মালিকদের

১৫ বছরের পুরনো গাড়ি বসিয়ে দেওয়ার হাইকোর্টের রায় রূপায়ণ করতে গিয়ে আগামী জুলাই মাসের গোড়ায় কলকাতা ও সংলগ্ন ৫ জেলায় (কেএমএ) বহু বেসরকারি বাস-মিনিবাস বসে যাবে। তাতে নিত্যযাত্রীদের বাড়তি ভোগান্তির সম্ভাবনা প্রবল। রুজির প্রশ্নে বাণিজ্যিক পরিবহণের মালিকদেরও কপালে ভাঁজ। এই অবস্থায় ১৫ বছর বয়স হলেই বাণিজ্যিক গাড়ি বাতিলের ব্যবস্থা পুনর্বিবেচনা করার আবেদন করল বেসরকারি বাস মালিকদের সংগঠন।
কলকাতা, ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি ও নদিয়া এই ছয় জেলা নিয়ে কলকাতা মেট্রোপলিটন এলাকা (কেএমএ)। ২০০৭-এ পুরনো বড় গাড়ির দূষণ প্রসঙ্গে প্রথম রায় দিয়েছিল পরিবেশ আদালত। তাতে ২০০৯-এর ১ আগস্ট থেকে ১৫ বছর বা তার চেয়ে পুরনো বাণিজ্যিক গাড়ি কেএমএ-তে চালানোর ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টে যায় জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটস। হাইকোর্টে হেরে গিয়ে জয়েন্ট কাউন্সিল যায় সুপ্রিম কোর্টে। সুপ্রিম কোর্ট মামলা ফিরিয়ে দেয় কলকাতা হাইকোর্টে। অর্থাৎ সেই রায় আজও বলবৎ রয়েছে।

পুরনো বাস কীভাবে কমছে, তা ব্যখ্যা করতে গিয়ে জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটসের সাধারণ সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘এই মুহূর্তে হাওড়া ও হুগলি জেলায় সবচেয়ে বেশি বাস বাতিল হবে। হুগলি জেলায় ১ থেকে ৩৭ নং রুটের বেশিরভাগই উঠে গেছে। বাংলার প্রাচীনতম ৩ নং রুটে এক সময় ১০০ বাস ছিল। আজ রয়েছে মাত্র ১ টা বাস। আগামী ১ জুলাই থেকে ১৫ বছরের বয়সের কারণে বাতিল হয়ে যাবে প্রচুর বাস।’ তপনবাবুর মতে, ‘উত্তর ২৪ পরগনার ৭৯, ৭৯ সি-র মত একাধিক রুট বন্ধ হয়ে আছে। একাধিক ‘ডি এন’ রুট উঠে গেছে। ৭৫, ৭৬, ৮৩, ৭৭, ৮৯, এস ডি ৪, এস ডি ৮, এস ডি ১৬ এই ধরনের বিভিন্ন রুটের বাস ৯০ শতাংশ কমে গিয়েছে। এবার কলকাতা ও আশপাশের অবস্থা সব থেকে ভয়ানক হবে। মিনিবাস ক’টা থাকবে সন্দেহ আছে। টোটো, অটোর দাপটে হুগলি, কোন্নগর, শ্রীরামপুরের মিনিবাস সব উঠে গিয়েছে।’
পরিবেশ প্রযুক্তিবিদ সোমেন্দ্রমোহন ঘোষ এপ্রসঙ্গে বলেন, ‘মূলত পরিবেশ দূষণ রুখতেই এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।’ তিনি মতে, ‘™রিবেশ ঠিকঠাক রাখতে এই উদ্যোগ অত্যন্ত কার্যকরী। ™রিবেশ দূষণ বেড়ে গেলে সমস্যাও বাড়বে। সেকারণেই পুরনো বাস বাতিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। না হলে দূষণ আরও বাড়তে পারে। কেন্দ্রের পরিবহণ দফতরের ‘সেন্ট্রাল মোটর ভেহিক্যালস রুলস’ অনুযায়ী সারা দেশে এই নিয়ম বলবৎ সুতরাং এটা বদলে দেওয়া যাবে না।’

তবে এ ব্যাপারে জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটসের সাধারণ সম্পাদক তপনবাবুর বক্তব্য, ‘অবশ্যই আমরা দূষণ মুক্ত সমাজ চাই। কলকাতায় এই মুহূর্তে প্রতিদিন প্রায় ১৫ লাখ ছোট বড়ো গাড়ি চলে, তার মধ্যে বাণিজ্যিক গাড়ি মাত্র ২৫০০ থেকে ৩০০০। তাহলে কি কেবলই এই ক’টা বাণিজ্যিক গাড়ি দূষণ ছড়ায়? সরকারের দূষনের মাপকাঠি ঠিক রাখতে ৬ মাস অন্তর সরকার-স্বীকৃত পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে শংসাপত্র নিতে হয়। তা না থাকলে তার জন্য জরিমানার ব্যবস্থা আছে। এই অবস্থায় আমাদের অনুরোধ, ১৫ বছর হলেই বাণিজ্যিক গাড়ি বাতিলের ব্যবস্থা পুনর্বিবেচনা করা হোক।’
তপনবাবু আরও বলেন, ‘একটি নতুন বাস রাস্তায় নামতে কত খরচ, কীভাবে তার ব্যাঙ্কের ঋণ পরিশোধ হবে, এটাও সরকারকে ভাবতে হবে। রাজ্যে শেষ বাস ভাড়া বৃদ্ধি হয়েছিল ২০১৮ সালে, ডিজেলের দাম ১০০ ছুঁই ছুঁই, আনুসঙ্গিক নানা খরচ অত্যাধিক বেড়েছে। মনে রাখতে হবে বাস গণপরিবহন। কৃষির পর সব থেকে বেশী মানুষ এই শিল্পে কাজ করে।’
রাজ্য পরিবহণ দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘এটা নতুন কিছু নয়। এ ব্যাপারে আইনি নির্দেশিকা মানা হচ্ছে। কেউ যদি আদালতে যান, আবার নতুন আইনি রায় এলে সেটাই মানা হবে।’ পরিবেশ প্রযুক্তিবিদ সোমেন্দ্রমোহন ঘোষ, ‘™ুরোনো গাড়ি চলাচল বন্ধ করে বিকল্প জ্বালানিতে ব্যাটারি বা প্রাকৃতিক গ্যাসে চালিত গাড়ি রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে সমাধান পাওয়া সম্ভব।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

13 − eight =