চাকরি গেল শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর মেয়ে অঙ্কিতার, বেতন ফেরতের নির্দেশ হাই কোর্টের

কলকাতা: এ যেন কেঁচো খুঁড়তে কেউটে।

এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলা যতই এগোচ্ছে ততই নাম জড়াচ্ছে রাঘব বোয়ালদের। এবার এসএসসি (SSC) নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় বড়সড় পদক্ষেপ নিল কলকাতা হাই কোর্ট। বেআইনিভাবে নিয়োগের অভিযোগে মন্ত্রী পরেশ অধিকারীর (Paresh Adhiakri) মেয়ে অঙ্কিতাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হল। শুধু তাইই নয়,  তাঁকে কর্মজীবনের বেতনের সব টাকা ফেরানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত। দুই কিস্তিতে এই টাকা ফেরাতে হবে অঙ্কিতা অধিকারীকে। হাই কোর্টের রেজিস্ট্রারের কাছে এই টাকা জমা দিতে হবে।কোচবিহারের (Cooch Behar) ইন্দিরা বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা ছিলেন মেখলিগঞ্জের বিধায়ক তথা রাজ্যে স্কুলশিক্ষা দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীর মেয়ে অঙ্কিতা অধিকারী। তিনি ৪৩ মাস চাকরি করছেন। এখন উচ্চ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, অঙ্কিতার শূন্যপদে শিক্ষক নিয়োগের জন্য অগ্রাধিকার পাবেন মামলাকারী ববিতা সরকার।

সম্প্রতি এসএসসি নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতি মামলায় সিবিআই তদন্ত শুরু হওয়ার পর অঙ্কিতার নিয়োগ বেআইনি বলে অভিযোগ ওঠে। বাবার সুপারিশেই অঙ্কিতা যোগ্য নম্বর না পেলেও চাকরিতে যোগ দেন বলে অভিযোগ। মন্ত্রী পরেশ অধিকারীর পাশাপাশি  জিজ্ঞাসাবাদের জন্য অঙ্কিতাকেও ডেকে পাঠায় সিবিআই। কিন্তু তিনি হাজিরা এড়ান।

শুক্রবার এই সংক্রান্ত শুনানিতে কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশের পরেও মন্ত্রীর মেয়ে অঙ্কিতা অধিকারীর বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হল না কেন, সেই প্রশ্ন তুলেছে হাই কোর্ট। আদালত জানতে চায় অঙ্কিতা অধিকারীকে নিয়ে কি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে? তিনি কি এখনও চাকরিতে আছে? স্কুলে কাজ করছেন? তাতে এসএসসি জানায়, এখনও কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি।মন্ত্রীর মেয়ে অঙ্কিতা কোথায়, তা এদিন জানতে চায় আদালত। তাঁকে আদালতে হাজির হতে বললে আসতে পারবে কিনা, তাও জানতে চায় হাই কোর্ট। আইনজীবী জানান, অঙ্কিতা কোচবিহারে আছে। ডাকামাত্রই আসা সম্ভব নয়। এসবের পর উচ্চ আদালত অঙ্কিতাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়। জানানো হয়, অঙ্কিতা যেন শিক্ষিকা হিসেবে নিজের পরিচয় না দেন। তারপরেই বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় নির্দেশ দেন, মন্ত্রীর মেয়ে অঙ্কিতা অধিকারীর স্কুলে ঢুকবেন না। অঙ্কিতা অধিকারী ইন্দিরা গার্লস হাইস্কুলের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সহকারী শিক্ষিকা। সেই স্কুলে ঢুকতে পারবেন না অঙ্কিতার পরিবারের সদস্য, পরিজনরাও। কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশ, ৪৩ মাস স্কুলে চাকরি করাকালীন যে বেতন পেয়েছেন তিনি, তার সমস্ত অর্থ হাইকোর্ট রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে ফিরিয়ে দেবেন। ৭ জুন ও ৭ জুলাই – দুই কিস্তিতে বেতন ফেরাবেন মন্ত্রীর মেয়ে।

অভিযোগ, মেধা তালিকায় না থেকেও স্রেফ মন্ত্রীর মেয়ে হওয়ায় চাকরি পেয়ে গিয়েছেন অঙ্কিতা। ববিতা সরকার নামে এক চাকরিপ্রার্থী এনিয়ে হাই কোর্টে মামলা করেছিলেন। ববিতার দাবি, তাঁর চেয়ে নম্বর কম ছিল মন্ত্রীর মেয়ে অঙ্কিতা অধিকারীর। তারপরেও নিয়োগপত্র হাতে পাননি ববিতা। অথচ ২০১৮ সাল থেকে মেখলিগঞ্জের একটি স্কুলে চাকরি করছেন অঙ্কিতা। এরপরই আদালতের দ্বারস্থ হন চাকরিপ্রার্থী ববিতা।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

10 − two =