নাবালিকার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে উত্তাল কালিয়াগঞ্জ। এরপর সিবিআই তদন্তের দাবিতে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় ওই মৃতা নাবালিকার পরিবার। বৃহস্পতিবার হাইকোর্টে এই মামলার শুনানি হয়। এদিকে পরিবারের তরফ থেকে অভিযোগ তোলা হয়েছে, প্রায় এক সপ্তাহ কেটে গেলেও এখনও মৃতদেহ সৎকার করা সম্ভব হয়নি। একইসঙ্গে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ উঠেছে পরিবারের তরফে। এদিকে এই ঘটনায় তদন্তের অগ্রগতি কোন পথে, তা নিয়ে রাজ্যের কাছে বিস্তারিত রিপোর্ট চাইল কলকাতা হাইকোর্ট। পাশাপাশি ময়নাতদন্তের ভিডিয়োগ্রাফিও সংরক্ষণ করার কথাও বলা হয়।
বৃহস্পতিবার শুনানি চলাকালীন নাবালিকার পরিবারের পক্ষে আইনজীবী জানান, ‘এই নাবালিকার মৃত্যুর পর ঘটনায় তার দেহ নৃশংস ভাবে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়। শুধু তাই নয়, পাশাপাশি এও জানানো হয় যে, ময়নাতদন্তের রিপোর্টও পরিবারকে দেওয়া হয়নি। এই সব কারণে রাজ্য পুলিশের উপর কোনও ভরসা নেই মৃতা কিশোরীর পরিবারের। কারণ, ২০ এপ্রিল এই ঘটনাটি ঘটেছে। এখনও দেহ সৎকার করা হয়নি।’ প্রত্যুত্তরে রাজ্যের আইনজীবী বলেন, ‘ছবিতে দেখা যাচ্ছে চারজন দেহ তুলে নিয়ে যাচ্ছে। ২০ তারিখ থেকে কালিয়াগঞ্জে এক যুবক এবং নাবালিকা নিখোঁজ হয়ে যায়। কয়েক ঘণ্টা পর থেকে পুলিশ অনুসন্ধান শুরু করে। পরের দিন সকালে একটি পুকুরের পাড় থেকে মেয়ের দেহ পাওয়া যায়। এই ঘটনায় অপহরণের পর ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ দায়ের করা হয়।’ এরই পাশাপাশি পরিবার সহযোগিতা করেনি বলে অভিযোগ তুলেছে রাজ্য। দেহ রেখে বিক্ষোভ শুরু হয়, আগুন লাগিয়ে দেহ পুড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয় বলেও অভিযোগ জানানো হয় রাজ্যের তরফ থেকে। একইসঙ্গে নাবালিকার পরিবারের বিরুদ্ধে তদন্তে অসহযোগিতার অভিযোগ তোলেন রাজ্যের আইনজীবী। এই প্রসঙ্গে রাজ্যের আইনজীবী জানান, ‘তদন্তে পরিবার সহযোগিতা করেনি। দেহ রেখে বিক্ষোভ শুরু হয়। আগুন লাগিয়ে দেহ পুড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।’
এরপরই ওই কিশোরীর দেহ উদ্ধারের ছবি দেখে বিচারপতি রীতিমতো বিস্ময়প্রকাশ করে বলেন, ‘এটা দেহ উদ্ধারের ছবি!’ এই প্রসঙ্গে রাজ্যের আইনজীবী বিচারপতিকে জানান, কিছু দূরে নিয়ে যাওয়ার পরই দেহ কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা হয়। সঙ্গে এও জানানো হয়, দেহ এইভাবে নিয়ে যাওয়ার জন্য চারজনকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। ময়না তদন্তের রিপোর্ট বলছে, ওই নাবালিকার দেহে বিষ পাওয়া গিয়েছে। ধর্ষণের কোন চিহ্নও নেই।
এদিন এই শুনানিতে সামনে আসে দ্বিতীয় ময়না তদন্তকরার বিষয়টিও। বিচারপতি মান্থা সব শুনে বলেন, ‘প্রয়োজনে কোর্ট পরে সে সব দেখবে।’ দ্বিতীয় ময়না তদন্তের আবেদন বিবেচনা এখনই করা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে জাতীয় কমিশন শিশু অধিকার রক্ষা কমিশনকে সব রিপোর্টের কপি দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পুলিশকে। ২ মে মামলার পরবর্তী শুনানি।
উল্লেখ্য, কালিয়াগঞ্জে নাবালিকার রহস্যমৃত্যুর ঘটনায় দফায় দফায় বিক্ষোভে উত্তাল হয় গোটা এলাকা। সাময়িকভাবে কালিয়াগঞ্জের কিছু অংশে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোনও ভুয়ো খবরে যাতে পরিস্থিতির অবনতি হয়, সেই জন্য এই পদক্ষেপ বলে জানানো হয়।