দীর্ঘ টালবাহানার পর চন্দ্রকোণায় শুভেন্দুর সভার অনুমতি হাইকোর্টের

পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোণায় রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর সভা ঘিরে দিনভর চলল টানাপড়েন। প্রথমে অনুমতি। তারপরে প্রত্যাহার। শেষমেশ আদালতের কড়া নাড়া। এরপরই পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনায় শুভেন্দু অধিকারীর সভা করার অনুমতি দিল কলকাতা হাইকোর্ট। তবে বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা সভা করার এই অনুমতি দেওযার পাশাপাশি স্পষ্ট ভাষায় এও জানান, সভা যাতে শান্তিপূর্ণভাবে হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে বিজেপিকে। যতটা সম্ভব পুলিশ মোতায়েন করতে হবে প্রশাসনকে। একইসঙ্গে বিচারপতির নির্দেশ, সভা থেকে যেন কোনও রকমের উস্কানিমূলক মন্তব্য না করা হয়। সভা করার ক্ষেত্রে আরোপ করা হয়েছে আরও বেশ কিছু শর্ত। বিচারপতির নির্দেশ, সভার পরে সভাস্থল পরিষ্কার করতে হবে।
বঙ্গ বিজেপি সূত্রে খবর, সোমবার চন্দ্রকোণার ঝাঁকড়া হাইস্কুল মাঠে কৃষক সভা ছিল শুভেন্দু অধিকারীর। তবে শেষ মুহূর্তে সভায় পুলিশ অনুমতি দেয়নি বলেই অভিযোগ। এদিকে ১ এপ্রিল তাঁদের স্কুলের ময়দান ব্যবহার করার জন্য লিখিত ভাবে অনুমতি দিয়েছিলেন ঝাঁকরা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক। কিন্তু, পরবর্তীকালে তিনি তা বাতিল করে দেন। এরপরেই বিজেপির স্থানীয় প্রশাসনের তরফে অভিযোগ তোলা হয়, শাসকদলের চাপের মুখে পড়েই অনুমোদন বাতিল করেছেন ওই শিক্ষক। ঝাঁকরা হাইস্কুল মাঠে সোমবার সকালেই হাজির হন বিজেপির ঘাটাল সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তন্ময় দাস৷ সভা বাতিল হওয়া প্রসঙ্গে তিনি জানান, শাসকদল ও পুলিশ রীতিমতো গায়ের জোর দিয়ে সভা বাতিলের জন্য সমস্ত রকম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রধান শিক্ষক অনুমতি দিলেও তাঁকে চাপ দিয়ে অনুমতি বাতিল করানো হয়েছে। অনুমতি বাতিলের খবর তাদের কাছে জানানো হয়নি স্কুলের তরফে, তবে বাতিলের কপি সোশ্যাল মিডিয়া ও মিডিয়ায় দিয়ে প্রচার করা হয়। শেষমেশ এ নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয় পদ্ম শিবির। শুভেন্দু অধিকারী আইনজীবী রাজদীপ মজুমদার আদালতে সওয়াল করতে গিয়ে জানান, ‘শেষ মুহূর্তে সভার অনুমতি প্রত্যাহার করেছে স্কুল। পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি, ইতিমধ্যে জড়ো হতে শুরু করছেন সমর্থকরা। এই অবস্থায় অনুমতি প্রত্যাহারের ছুতো দেখিয়ে পুলিশ বেঁকে বসেছে। হাইকোর্ট হস্তক্ষেপ করুক।’
এরপরই এদিনের শুনানিতে বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার প্রশ্ন করেন, ‘ম্যানেজিং কমিটি কিছু না জানলে স্কুলের মাঠে স্টেজ কি করে তৈরি হল?’ প্রত্যুত্তরে রাজ্যের তরফে বলা হয়, ‘এটা স্কুল প্রশাসনের জমি। কি করে স্টেজ বানানো হল, সেটা ম্যানেজিং কমিটিই বলতে পারবে।’ এরপরই পালটা প্রশ্ন করেন বিচারপতি জানতে চান, ‘কোন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে?’ একইসঙ্গে এও বলেন, ‘বিদ্যালয় এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলিকে রাজনৈতিক কর্মসূচির বাইরে রাখা উচিত।’
এর উত্তরে রাজ্যের তরফের কৌসুলি অনির্বাণ রায় জানান, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে সভার জন্য আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি জরিপ করা যায়নি। শান্তিশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কথা ভেবেই এই উদ্যোগ।’ শুনানি শেষে অবশ্য শুভেন্দু অধিকারীকে সভা করার অনুমতি দেয় আদালত। আদালতের তরফে জানানো হয়, ঝাঁকরা হাই স্কুল গ্রাউন্ডে সোমবারই হবে শুভেন্দু অধিকারী সভা। সভা ঘিরে পুলিশকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে নির্দেশ দেন বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা। সঙ্গে বিচারপতি এও জানান, ‘স্কুলের মাঠ সভার অনুমতি দেওয়ার পর তা কেড়ে এভাবে নেওয়া যায় না।’ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কোনও অবনতি না থাকলে কেন সভা হবে না তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
পাশাপাশি, বিচারপতির পরামর্শ, স্কুলের মাঠ যাতে রাজনৈতিক সভার জন্য ব্যবহার করতে না করতে তা নিয়েও ভাবনাচিন্তা করুক রাজ্য। বিচারপতির নির্দেশ, চন্দ্রকোণা থানাকেই এই সভা সুষ্ঠু ভাবে আয়োজন করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে হবে। প্রয়োজনে সভাস্থলে মোতায়েন করতে হবে পুলিশও। এছাড়াও, ঝাঁকরা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং ম্যানেজিং কমিটিকে এই মামলায় অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আদালতের তরফে। কোন পরিস্থিতিতে অনুমতি দিয়েও তা প্রত্যাহার করা হল, তা স্কুল ম্যানেজিং কমিটিকে এবং ঝাঁকরা হাই স্কুল প্রধান শিক্ষককে হলফনামা দিয়ে জানানোর নির্দেশ দেন বিচারপতি মান্থা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 × 5 =