যতদিন পৃথিবীতে ফুটবল থাকবে, মারাদোনার ‘হ্যান্ড অব গড’ থাকবে প্রাসঙ্গিক। ইতিহাসের সবচেয়ে বিতর্কিত গোল। যার কারিগর অন্যলোকে পাড়ি দিয়েছেন। চার দশক আগের ঘটনা। ফুটবলের ইতিহাসে খোদাই হয়ে আছে ‘ভগবানের হাতের গোল’। ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপে ওই বিতর্কিত গোলের পর মারাদোনা বলেছিলেন, “এই গোলের পিছনে কিছুটা আমার ও কিছুটা ঈশ্বরের হাত রয়েছে।” ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচের স্কোরলাইন ছিল ২-১। আর্জেন্টিনার দুটি গোলের মধ্যে প্রথমটি ছিল ফুটবল বিশ্বের সবচেয়ে বিতর্কিত গোল। হেডে গোল করতে গিয়ে তার পরিবর্তে হাত দিয়ে গোল করেছিলেন মারাদোনা। জালে বল জড়ানো মাত্রই রেফারি বাঁশি বাজিয়ে জানিয়ে দেন ওটা গোল। উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে আর্জেন্টিনার দর্শকরা। সকলে ভেবেছিলেন হেডে গোল হয়েছে। হ্যান্ডবলের দাবিতে ইংল্যান্ডের ফুটবলাররা ছেঁকে ধরেন রেফারি আলি বেন নাসেরকে। কিন্তু নাসের সিদ্ধান্ত বদলাননি। ইন্টারনেটে ওই মুহূর্তের যে ছবি পাওয়া যায় তাতে স্পষ্ট, মারাদোনা বাম হাতের সাহায্যে বল প্রতিপক্ষের জালে ঠেলছেন। তাঁর মাথা বল থেকে অনেকটাই নীচে। ২০১৯ সালে আসিফ কাপাডিয়া পরিচালিত ডকুমেন্টারি ‘দিয়েগো মারাদোনা’-তে প্রয়াত কিংবদন্তি ওই গোল প্রসঙ্গে ফকল্যান্ড যুদ্ধের প্রসঙ্গ টেনেছিলেন। ১৯৮২ সাল থেকে ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে আর্জেন্টিনা ও ব্রিটেনের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। শক্তিশালী ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে যুদ্ধে প্রচুর আর্জেন্টাইন প্রাণ হারিয়েছিলেন। তথ্যচিত্রে মারাদোনা বলেছিলেন, “সামরিক বাহিনী কী করেছিল তা জানি না। যুদ্ধে আমরা জয়ী হয়েছি বলে জানানো হয়েছিল। কিন্তু বাস্তব ছিল উল্টো। ইংল্যান্ড জিতে গিয়েছিল। এমন কঠিন সময়ে এমন একটা হইচই শুরু হয় যেন আমরা আরও একটা যুদ্ধে যাচ্ছি। আমি জানতাম যে হ্যান্ডবল হয়েছে। তবে সেটা পরিকল্পনায় ছিল না। এত দ্রুত বিষয়টি ঘটে গিয়েছিল যে লাইন্সম্যান কিছু বুঝে উঠতে পারেননি। রেফারি আমার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠেন…গোল। এমন প্রতীকী প্রতিশোধ নেওয়ার আনন্দ আছে।” গোলটি নিয়ে তাঁর কোনও অপরাধবোধ ছিল? ব্রিটিশ মিডিয়ার বলে, মারাদোনা ক্ষমা চেয়েছেন। এর জবাবে পাল্টা মারাদোনা বলেন, “ক্ষমা চাইতে যাব কেন? যা হয়ে গিয়েছে সেটা বদলানোর সুযোগ নেই। অ্যাজটেকা স্টেডিয়ামে সেদিন ১ লক্ষের বেশি মানুষ ছিলেন, ২২ জন ফুটবলার, দুটো লাইন্সম্যান ও একজন রেফারি। গল্প লেখা হয়ে গিয়েছে। ওটাকে বদলানোর সুযোগ নেই।”