ভিসি অপসারণ ইস্যুতে ফের সংঘাতের আবহ তৈরি হল রাজ্য-রাজ্যপালের মধ্যে।কারণ, কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে অপসারণের নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। এদিকে রাজ্যের তরফে বলা হচ্ছে, শিক্ষা দপ্তরকে না জানিয়েই উপাচার্যকে অপসারণ করা হয়েছে, যা নীতিগতভাবে ঠিক নয়। আর তা নিয়েই সংঘাত চরমে।
এদিকে বেশ কিছুদিন ধরেই উপাচার্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে আন্দোলন চালাচ্ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। উপাচার্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সামিল হন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকর্মীরাও। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারও এই আন্দোলনে যুক্ত হন। সকলেই কার্যত উপাচার্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। আন্দোলনের জেরে আসানসোল উত্তর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন উপাচার্য। এরপর মামলা দায়ের করেন কলকাতা হাইকোর্টে। এদিকে আদালতের তরফ থেকেও তেমন কোনও ইতিবাচক ইঙ্গিত মেলেনি।
এরপরই আন্দোলনের ৬০ দিনের মাথায় রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের হস্তক্ষেপে অপসারিত হলেন উপাচার্য সাধন চক্রবর্তী।গত শনিবার কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজ্যপালের এক অনুষ্ঠান ছিল। সেখানেই কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য-সহ আন্দোলনকারীদের আলোচনার জন্য ডাকা হয়। আন্দোলনকারীরা গিয়ে অভিযোগ জানালেও উপাচার্য যাননি। ফলে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের কোনও পথই খোলা ছিল না। এরপরই উপাচার্যকে অপসারণের সিদ্ধান্ত জানিয়ে ইমেল পাঠানো হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের কাছে। এই ঘটনায় আন্দোলনকারীরা খুশি হলেও, বিতর্কের ঝড় ওঠে। বিশ্লেষকদের কথায়, এখানেই রাজ্যের সঙ্গে রাজ্যপালের সংঘাত প্রকট হয়। প্রশ্ন উঠছে, এইভাবে শিক্ষাদফতরের সঙ্গে আলোচনা না করেই কীভাবে উপাচার্যকে অপসারণ করা যায় কি না তা নিয়ে।
এদিকে উপাচার্য নিয়োগের আইনে বড়সড় বদল আনছে রাজ্য। সেখানে সিদ্ধান্ত নেওযা হয়, উপাচার্য নিয়োগের জন্য তৈরি করা সার্চ কমিটিতে এবার তিনজন প্রতিনিধি নয়, থাকবে পাঁচ সদস্যের সার্চ কমিটি। পুরনো নিয়ম ফিরিয়ে নিয়ে ইউজিসির মনোনীত প্রতিনিধি বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের জন্য গঠিত সার্চ কমিটিতে রাখা হচ্ছে। সেই অডিন্যান্স কার্যকর হলেই উপাচার্য নিয়োগের আইনে বড়সড় বদল আসবে রাজ্যে।
এদিকে নবান্ন সূত্রে খবর, যে পাঁচ সদস্য সার্চ কমিটি প্রস্তাবিত আকারে তৈরি করা হয়েছে তাতে ইউজিসির মনোনীত প্রতিনিধি থাকবেন, রাজ্যপালের মনোনীত প্রতিনিধি থাকবেন, বিশ্ববিদ্যালয়-এর কোর্ট বা সেনেটের মনোনীত প্রতিনিধি থাকবেন, উচ্চ শিক্ষা সংসদের মনোনীত প্রতিনিধি ও রাজ্যের মনোনীত প্রতিনিধি থাকবে। এই পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি নিয়েই তৈরি হবে বিশ্ববিদ্যালয় গুলিতে স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের সার্চ কমিটি।
সম্প্রতি, উপাচার্যদের কাছ থেকে পদত্যাগ পত্র নিয়ে অন্তর্বর্তিকালীন উপাচার্য হিসেবে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। আচার্য তথা রাজ্যপাল চাইছেন রাজ্যের প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয় যাতে স্থায়ী উপাচার্য দ্রুত নিয়োগ করা হয়। নবান্ন সূত্রে খবর, আচার্যের প্রস্তাব মেনেই উপাচার্য নিয়োগের সার্চ কমিটিতে বদল আনছে রাজ্য।