যোগী রাজ্যে ৩২ বছরের পুরনো এক হত্যা মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হল গ্যাংস্টার-রাজনীতিক মুখতার আনসারিকে। সোমবার ১৯৯১ সালে এক কংগ্রেস নেতাকে হত্যার অভিযোগে তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে উত্তরপ্রদেশের বারাণসীর এমপি-এমএলএ আদালত। প্রসঙ্গত, ১৯৯১ সালের ৩ অগাস্ট কংগ্রেস নেতা তথা প্রাক্তন বিধায়ক অজয় রাইয়ের বাড়ির বাইরেই তাঁর ভাই অবধেশ রাইকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এই হত্যাকণ্ডের ঘটনায় যে এফআইআর দায়ের করা হয় তাতে মুখতার আনসারি, ভীম সিং এবং প্রাক্তন বিধায়ক আবদুল কালিমের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন অজয় রাই। উল্লেখ্য, ওই সময় থেকেই মুখতার আনসারির রাজনৈতিক উত্থান ঘটে। এরপর, তিনি পাঁচবার বিধায়ক হয়েছিলেন। এরপরে একাধিক ফৌজদারি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হন আনসারি। এই মামলার তদন্ত করে উত্তর প্রদেশ পুলিশের সিআইডি। অদ্ভুতভাবে, ২০২২ সালের জুন মাসে দেখা গিয়েছিল যে, কেস ডায়েরিটিই গায়েব হয়ে গিয়েছে। সেই সময় এই মামলার শুনানি চলছিল পুরোদমে। এরপর, কেস ডায়েরির ফটোকপির ভিত্তিতেই মামলার শুনানি এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। বৈধ নথির প্রতিলিপির ভিত্তিতে ভারতে এই প্রথম কোনও মামলার রায় ঘোষণা করা হল।
এদিকে বর্তমানে তিনি কারাগারেই আছেন। অন্য এক অপহরণ ও হত্যা মামলায় গত এপ্রিলে মাসে তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। ওই মামলায় ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া-ও হয় তাঁকে। এদিকে এর পাশাপাশি বারাণসীর এক এমপি-এমএলএ আদালতে অবধেশ রাই হত্যা মামলার শুনানি চলছিল। ১৯ মে দুইপক্ষের যুক্তিও শোনা শেষ হয়। এরপরই আদালত জানিয়েছিল, ৫ জুন এই মামলার রায় দেওয়া হবে।
এদিন এই রায়দানের প্রেক্ষিতে আদালত চত্বরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছিল। বারাণসী আদালতে উপস্থিত একজন আইনজীবী জানানন, ‘১৯৯১ সালের অবধেশ রাই হত্যা মামলায় মুখতারকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। এদিনই পরবর্তী সময়ে আদালত তাঁর সাজা ঘোষণা করবে।’ পরে আদালতের পক্ষ থেকে এই অপরাধের জন্য মুখতার আনসারিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তবে অবধেশ রাই হত্যার পর থেকেই উত্তর প্রদেশের রাজনীতিতে মুখতার আনসারির রাজনৈতিক গুরুত্ব বাড়তে শুরু করে। এমনকী মউ সদর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে পরপর পাঁচবার বিধায়ক হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি। ২০২২ সালের বিধানসভা নির্বাচনে অবশ্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি। বদলে সুহেলদেব ভারতীয় সমাজ পার্টির টিকিটে ওই কেন্দ্র থেকে বিধায়ক হিসেবে নির্বাচিত হন তাঁর ছেলে আব্বাস আনসারি। এই মামলার তদন্তের ক্ষেত্রে, মুখতার আনসারির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোর অভিযোগও ওঠে।
অবধেশ হত্যা মামলায় মুখতার আনসারির দোষী সাব্যস্ত হওয়ার বিষয়ে প্রাক্তন বিধায়ক অজয় রাই জানান, ‘আমাদের বহু বছরের অপেক্ষার অবসান হল। আমি, আমার বাবা-মা, অবধেশের মেয়ে এবং আমাদের পুরো পরিবার ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করছিলাম। একের পর এক সরকার এসেছে এবং গিয়েছে। মুখতারের ক্ষমতা ক্রমে বেড়েছে। তবে আমরা হাল ছাড়িনি। আমাদের আইনজীবীদের প্রচেষ্টায়, আজ আদালত আমার ভাইয়ের হত্যা মামলায় মুখতারকে দোষী সাব্যস্ত করেছে।’