নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঁকুড়া: নিয়ম নিষ্ঠার সঙ্গে বাঁকুড়া জেলাজুড়ে সন্তানের মঙ্গল কামনায় পালন হচ্ছে ‘নীল ষষ্ঠী’ ব্রত। তিথি অনুষারে বছরের বিশেষ এই দিনটি ষষ্ঠী না হলেও চৈত্র সংক্রান্তির আগের দিন ‘নীল ষষ্ঠী’ হিসেবেই পরিচিত।
পুরাণ মতে, বিশেষ দিনটিতে মহাদেবের সঙ্গে নীল চণ্ডিকা বা নীলাবতীর বিয়ে হয়েছিল। সমুদ্র মন্থনে উঠে বিষ কণ্ঠে ধারণ করে শিব হয়েছেন ‘নীলকণ্ঠ’। আর তাঁর সঙ্গে এদিন নীল চণ্ডিকা বা নীলাবতীর বিবাহ হয়েছিল বলেই এই দিনটি নীল ষষ্ঠী নামে পরিচিত। এদিনের পুজোকে নীল পুজো বলা হয়ে থাকে। প্রসঙ্গত, ওই পুরাণেই বর্ণিত আছে, দক্ষযজ্ঞে স্বামীর অপমান সহ্য করতে না পেরে শিবপত্নী সতী দেহত্যাগ করেছিলেন। পরে নীলধ্বজ রাজার ঘরে নতুন করে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। নীল চণ্ডিকা বা নীলাবতী নামের ওই কন্যার সঙ্গে শিবের বিয়ে দেন রাজা নীলধ্বজ। সেই কারণে নীল ষষ্ঠী, চৈত্র সংক্রান্তি ও গাজন শিব দুর্গার বিয়ের উৎসব হিসেবেও পালিত হয়ে আসছে।
শুক্রবার প্রায় মাঝ রাত থেকেই বাঁকুড়া শহর সংলগ্ন অতি প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী এক্তেশ্বর শিবমন্দিরে নীল পুজো এবং গাজন মেলা উপলক্ষে হাজার হাজার ভক্তের ভিড় লক্ষ্য করা যায়। এদিন মহিলারা বাবা এক্তেশ্বর মন্দির এগিয়ে রাতের অন্ধকার থাকতেই সন্তানের মঙ্গল কামনায় এবং পরিবারের মঙ্গল কামনায় প্রদীপ মোমবাতি জেলে পুজো করেন। সন্তানের সুখের জন্য, তাঁর দীর্ঘায়ুর জন্য এই পুজো এবং ব্রত করে থাকেন মায়েরা, নীলের ঘরে বাতি বলতে শিবের ঘরে প্রদীপ জ্বালানোকে বোঝানো হয়। বাঙালির ঘরে ঘরে বারো মাসে তেরো পার্বণ লেগেই আছে। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে এই পার্বণ। যা নীল ষষ্ঠী ব্রত নামে পরিচিত। এই উপলক্ষ্যে বিভিন্ন জায়গায় এখনই মেলা বসেছে, কিছু কিছু জায়গায় এদিন ভোর রাত থেকেই শুরু হবে বিভিন্ন জায়গায় গাজন মেলা।
বাঁকুড়া জেলায় কিছু বিখ্যাত গাজন মেলার মধ্যে অতি প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী বাবা মহাদেবের এক্তেশ্বর গাজন মেলা, বিষ্ণুপুরের ষাঁড়েশ্বর শিবের গাজন,তালডাংরার ভীমাড়া কেশাতড়া মহাকালেশ্বর শিব মন্দিরে মেলা, এছাড়াও বাঁকুড়া সদর থানার অধীনে পিরড়াবনি, মলবোনা, শানদার ছান্দার শিবের গাজন, এছাড়াও সংক্রান্তির সন্ধে থেকে ১ বৈশাখ হরিহরপুরের শিবের গাজন। এই গাজনে দারকেশ্বর নদ সংলগ্ন জায়গায় গাজনকে কেন্দ্র করে মেলাতে যাওয়া বহু ভক্ত সেই স্থানে খাসির মাংস ভাত রান্না করে খান, অনেকটা ঠিক বনভোজনের মতো।