বিধাননগরের কমিশনারেটের বাসিন্দাদের যেন টার্গেট করে নিয়েছেন প্রতারকেরা। এবার মহিলা হিসাবে নিজেকে পরিচয় দিলেও শেষ পর্যন্ত পুলিশের জালে ধরা পড়ল অনিন্দ্য চক্রবর্তী। প্রথমত তিনি নিজেকে পরিচয় দিতেন মহিলা হিসেবে এর ওপর বাড়ি বিক্রির যে বিজ্ঞাপন দিয়ে ক্রেতাদের সঙ্গে প্রাতরণা করতেন তা সামনে এল বিধাননগর কমিশনারেটের আধিকারিকেরা তদন্তে নামতেই। পাশাপাশি এটাও স্পষ্ট হল তিনি মহিলা নন, আদতে তিনি একজন পুরুষ। তবে তিনি মহিলা হিসেবে সাজলে তাঁকে চেনা কঠিন। আর প্রতারণার ক্ষেত্রে তারই সুবিধা নিয়েছেন তিনি। দৈনিক সংবাদ মাধ্যমে জমি এবং বাড়ি ক্রয় বিক্রয়ের বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণার জাল বিছোতে কখনও ছেলের গলায়, কখনও মেয়ের গলায় ফোন করতেন।বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেট সূত্রে খবর, পুলিশ সূত্রে খবর, চলতি বছর গত ৩০ এপ্রিল দৈনিক সংবাদপত্রে মধ্যমগ্রামে জমি ক্রয়ের বিজ্ঞাপন দেখে উক্ত নম্বরে ফোন করেন বারাসতের বাসিন্দা বিকাশ চন্দ্র মণ্ডল। মহিলা কন্ঠে দিপালী ঘোষ নামে পরিচয় দেন অভিযুক্ত। তিনি নিজেকে বর্ধমানের বাসিন্দা বলে দাবি করেন। এরপরেই জমি সংক্রান্ত বিষয়ে কথাবার্তা শুরু হয়, জমিও দেখান অনিন্দ্য। বিক্রেতার পক্ষ থেকে বলা হয়, জমি ক্রয় করতে গেলে অ্যাডভান্স দিতে হবে ‘টোকেন মানি’। সেইমত ক্রেতা বিকাশ চন্দ্র মণ্ডল রাজি হয়ে যাওয়ার পরে তাঁকে সল্টলেকের সিজে ব্লকে নগদ টাকা নিয়ে আসতে বলা হয়। সেই মতো টাকা নেওয়ার পরে ডিডে সই করিয়ে নেওয়া হয়। এরপরই শুরু হয় সমস্যা। সামনে আসে প্রকৃত ছবি। কারণ, এরপর যতবারই বিকাশবাবু ফোন করেন ততবারই দেখায় উক্ত নম্বরের ফো সুইচড অফ। এরপর বিকাশবাবুর বুঝতে এতটুকু অসুবিধা হয়নি তাঁর সঙ্গে প্রতারণা হয়েছে। আর তা বুঝতে পারার পরই পূর্ব বিধান নগর থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন। এই অভিযোগের ভিত্তিতে বুধবার তাঁকে গ্রেপ্তার করে পূর্ব বিধান নগর থানার পুলিশ।
পাশাপাশি বিধাননগর থানা সূত্রে খবর, পুলিশের কাছে মহিলা রূপেই আসেন তিনি।তবে তাঁর আসল পরিচয় জানতে চাওয়া হয়। জেরায় তিনি বারবার দাবি করতে থাকেন, তিনি একজন মহিলা। বাড়ি বর্ধমানে। অবশেষে পুলিশ সন্দেহের নিরসন করতে দ্বারস্থ হয় চিকিৎসকের কাছে। তিনজন ডাক্তার তাঁকে পরীক্ষা করার পর পুলিশ জানতে পারে, তিনি মহিলা নন একজন পুরুষ। তারপরেই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয় প্রতারণার অভিযোগে।
তদন্তে নেমে তদন্তকারী আধিকারিকেরা জানতে পারেন, জমি বিক্রির বিজ্ঞাপন দিয়ে উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন জমি দেখিয়ে একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে আর্থিক প্রতারণা করেছেন লক্ষ লক্ষ টাকার। ঠিক একই ভাবে পুলিশ গ্রাহক সেজে জাল বিছিয়ে ওই ব্যক্তিকে ফোন করে ডাকিয়ে নিয়ে আসেন এই অনিন্দ্য। এই একইভাবে বহু মানুষের সঙ্গেই অনিন্দ্য এই ভাবেই প্রতারণা করেছেন। নিজেকে কখনও সাংবাদিক হিসাবে পরিচয় দিয়েছেন, আবার কখনও তিনি নিজেকে অবসর প্রাপ্ত পুলিশ আধিকারিক পুলিশ সুপারের মেয়ে হিসাবে পরিচয় দেন।