চন্দ্রযান-৩ এর সাফল্য, চার দিনের মাথায় কেরলে পুজো ইসরো প্রধানের

তিরুঅনন্তপুরম: অক্লান্ত পরিশ্রম, ঘুমহীন রাত, প্রচুর পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ভারতীয় বিজ্ঞানীদের কঠিন অধ্যাবসায়ে আজ কার্যত হাতের মুঠোয় চাঁদ। চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সফলভাবে পা রেখেছে ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর তৈরি ল্যান্ডার বিক্রম ও রোভার প্রজ্ঞান। চাঁদের ছবিও আসছে ইসরোর হাতে।
চন্দ্রযান-৩ এর সাফল্যের চার দিনের মাথায় মন্দিরে পুজো দিলেন ইসরোর প্রধান এস সোমনাথকে। রবিবার সকালে কেরলের তিরুঅনন্তপুরমে পূর্ণমিকাভু-ভদ্রকালী মন্দিরে পুজো দেন ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থার প্রধান। যদিও এ নিয়ে বিতর্ক রয়েছেই। অনেকেরই মতে যে সাফল্য বিজ্ঞানের নিরলস গবেষণার ফসল, বিজ্ঞানীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফল, তারপর বিজ্ঞানীরাই গিয়ে ম¨িরে পুজো দিচ্ছেন!
গত জুলাই মাসে তৃতীয় চন্দ্রযান অভিযানের সাফল্য কামনায় অন্ধ্রপ্রদেশের তিরুমালা তিরুপতি মন্দিরে পুজো দিয়েছিলেন ইসরোর বিজ্ঞানীরা। চন্দ্রযানের একটি মডেল হাতে নিয়ে মন্দিরে পুজো দিতে গিয়েছিলেন ওই বিজ্ঞানীরা। সেই সময় ইসরো প্রধান সোমনাথও অন্ধপ্রদেশের সুল্লুরপেটায় চেঙ্গালাম্মা পরমেশ্বরী মন্দিরে পুজো দিয়েছিলেন। পরে তিনি সংবাদমাধ্যমকে জানান, চন্দ্রযানের সাফল্য কামনাতেই দেবতার আশীর্বাদ নিতে এসেছিলেন তিনি।
গত বুধবার চাঁদে অবতরণ করে চন্দ্রযান-৩। ৪০ দিন প্রথমে পৃথিবী তারপর চাঁদের কক্ষপথে ঘুরে চন্দ্রপৃষ্ঠে নামে ল্যান্ডার বিক্রম। তার আগমনে উপগ্রহের মাটিতে যে ধুলোর ঝড় উঠেছিল, ক্রমে তা থিতিয়ে পড়ে। তার পরে বিক্রমের পেট থেকে বেরিয়ে আসে রোভার প্রজ্ঞান। তার ছ’চাকার ছাপ পড়ে চাঁদের মাটিতে। ১৪ দিন (পৃথিবীর হিসাবে) চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাবে প্রজ্ঞান। তাকে সাহায্য করবে ল্যান্ডার বিক্রম।
পৃথিবী থেকে চাঁদে পৌঁছে, সফলভাবে বিক্রমের অবতরণ সহজ ছিল না। এর আগে ২০১৯ সালে সাফল্যের দোরগোড়ায় পৌঁছেও শেষ মুহূর্তে সফল ল্যান্ডিং হয়নি। একটি সাক্ষাৎকারে সোমনাথ বলেন, ‘এক বছর তো এটা বুঝতেই কেটে গিয়েছিল, ভুল কোথায় ছিল! ’ তারপর আবার ভুল থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে নতুন যাত্রা শুরু । শেষ পর্যন্ত ২০২৩ এসে সাফল্য। যা পরবর্তী মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।
শনিবার বেঙ্গালুরুতে ইসরোর বিজ্ঞানীদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেখানে তাঁকে স্বাগত জানান এস সোমনাথ সহ বাকি বিজ্ঞানীরা। এদিন প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেন, চন্দ্রপৃষ্ঠে চন্দ্রযান-৩ এর অবতরণস্থলের নাম হবে শিবশক্তি।
অন্য দিকে, চন্দ্রাভিযানের সাফল্যের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে শ্রী সোমনাথ জানিয়েছিলেন, শুধু চাঁদ ছুঁয়েই থেমে থাকবে না ভারত। এরপর মঙ্গল, শুক্র এবং সূর্যেও অভিযান হবে। তবে তার জন্য মহাকাশ গবেষণায় আরও বেশি বিনিয়োগ প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন তিনি। এমনকী, ভারতের প্রথম সৌর অভিযান আদিত্য এল-১ সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই উৎক্ষেপণের জন্য সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

sixteen − eight =