নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় একের পর এক তথ্য পাচ্ছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকেরা। এখানেই এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টেরেটের তরফ থেকে দাবি করা হয় যে, নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃত শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে নতুন করে ২৬ জন ক্যান্ডিডেটের লেনদেনের সন্ধান পেল ইডি। যাঁদের থেকে শান্তনুর কাছে এক কোটি চল্লিশ লক্ষ টাকা এসেছে। এই টাকা তিনি পেয়েছেন এই ২৬ জন চাকরি প্রার্থীর তরফ থেকে। এরপরই রিমান্ড প্রেয়ারে ইডি-র তরফ থেকে উল্লেখ করা হয়, শান্তনুর বাড়ি থেকে যে ৩০০ জনের লিস্ট পাওয়া গিয়েছিল, তাদের ছাড়াও আরও ২৬ জন চাকরি প্রার্থীর খোঁজ পাওয়া গিয়েছে।
এখানেই শেষ নয়, তদন্ত করতে গিয়ে ইডি-র আধিকারিকেরা এও জানতে পেরেছেন যে, শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় যাঁদের কাজ করাতেন, তাঁদের নামে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলে রেখেছিল এবং তাঁদের অজান্তে চেক বুকে সই করিয়ে নিয়ে টাকা নয়ছয় করত। ইডি তদন্তে উঠে এসেছে, শান্তনু নিজের রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে কালো টাকা সাদা করার জন্য অন্যদের কোম্পানিও ব্যবহার করতেন। অন্য একজনের একটি কনস্ট্রাকশন কোম্পানিকে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে টেন্ডার পাইয়ে দিতেন শান্তনু। এবং সেই কোম্পানির অ্যাকাউন্টকে কালো টাকা সাদা করার জন্য ফান্ড রুট হিসাবে ব্যবহার করতেন শান্তনু। ফলে তদন্তকাকরীদের এখানে নজর, এই ভাবে একাধিক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে কোনও ব্যাঙ্ক আধিকারিক কিংবা কর্মীর যোগসাজস রয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখার। কারণ, সেখানে থেকে টাকা ঘুরিয়ে সুবিধাপ্রদানকারীদের কাছে পৌঁছাত টাকা।
আর এখানেই সামনে আসছে লোটাস কনস্ট্রাকশন কোম্পানির কার্যকলাপ। একজনের কোম্পানিকে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে টেন্ডার পাইয়ে দিত। সেই কোম্পানির অ্যাকাউন্টকে কালো টাকা সাদা করার জন্য ফান্ড রুট হিসাবে ব্যবহার করত শান্তনু।
তদন্তে উঠে এসেছে আরও এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। খেটে দেওয়া দিনমজুরদের অ্যাকাউন্টও ‘ধার’ করতে হয়েছিল তাঁকে। আর সেখানেই রাখা হত নিয়োগ দুর্নীতির টাকা।
ইডি সূত্রে খবর, দিনমজুরদের দিয়ে জোর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলিয়েছিলেন শান্তনু। তাঁদের দিয়ে জোর করে চেকবুকে সই করিয়ে নিতেন। তারপর দিনমজুরদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে দুর্নীতির টাকা লুকিয়ে রাখতেন শান্তনু। এই সব ঘটনাকে সামনে এনে ইডি-র তরফ থেকে দাবি করা হচ্ছে, শান্তনু নিজের রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে কালো টাকা সাদা করার জন্য অন্যদের কোম্পানিও ব্যবহার করেছে।
গত ১০ মার্চ নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গ্রেপ্তার হন হুগলির প্রাক্তন তৃণমূল যুবনেতা শান্তনু। এদিকে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন নিগমের সামান্য এক কর্মী ছিলেন শান্তনু। এরপর তিনিই কোটি কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক, আদালতে তেমনই দাবি করে ইডি। ধৃত শান্তনুর সঙ্গে কে বা কারা ছিলেন, আর কাদের অ্যাকাউন্টে শান্তনু এভাবে টাকা রেখেছিলেন, তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
এদিকে শান্তনুর আইনজীবীর পাল্টা আবেদন, যে এক কোটি ৪০ লক্ষ টাকার কথা বলা হচ্ছে ইডি-র তরফ থেকে তার কোনও ডকুমেন্টস নেই। তার কিছু লোন রয়েছে। পাশাপাশি আইনজীবী এও বলেন, যেখানে ইডি-র তরফ থেকে তাঁকে বারবার তলব করা হচ্ছিল তখন শান্তনু এতো বোকা নয় যে সবকিছু নিজের বাড়িতে রেখে দেবেন।