প্রয়াত হলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সত্যব্রত মুখোপাধ্যায়। প্রথিতযশা এই আইনজীবী জলুবাবু নামে রাজ্য রাজনীতিতে পরিচিত ছিলেন। তিনি ৯১ বছর বয়সে বালিগঞ্জের সানি পার্কের বাড়িতে শুক্রবার সকালে মারা যান। বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। তাঁর ছেলে সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় রাজ্যের বর্তমান অ্যাডভোকেট জেনারেল।
প্রবীণ এই রাজনৈতিক নেতার মৃত্যুতে শোকবার্তা পাঠান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শোকবার্তায় তিনি জানান, ‘বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, প্রথিতযশা ব্যারিস্টার ও প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সত্যব্রত মুখোপাধ্যায়-এর মৃত্যুতে আমি গভীর শোক প্রকাশ করছি।দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন রাজনীতিক সত্যব্রত মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যু রাজনীতির জগতে এক বড়ো ক্ষতি। আমি সত্যব্রত মুখোপাধ্যায়ের পরিবার-পরিজন ও অনুরাগীদের আমার আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি।’
সত্যব্রতবাবুর মৃত্যুতে শোকাহত বঙ্গ বিজেপি নেতারাও। এদিন ফেসবুক পোস্ট করে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি লেখেন, ‘রাজ্য বিজেপির বর্ষীয়ান নেতৃত্ব, প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি, প্রাক্তন সাংসদ ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, সম্মানীয় শ্রী সত্যব্রত মুখোপাধ্যায়(জলু বাবু) মহোদয়ের প্রয়াণে আমি শোকাহত। ওনার পরিবার, পরিজন, শুভানুধ্যায়ীদের সমবেদনা জানাই। ওনার বিদেহী আত্মার চিরশান্তি কামনা করি।’ তাঁর প্রয়াণে শোকজ্ঞাপন করেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও। জানা গিয়েছে, তিনি জলুবাবুর বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে পারেন। শোকপ্রকাশ করেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষও। শোকপ্রকাশ করতে দেখা যায় বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা তথাগত রায়কেও। তিনি তাঁর টুইটে লেখেন, আমার কাছের মানুষ, কলকাতা হাইকোর্টের অন্যতম সফল আইনজ্ঞ ও ব্যারিস্টার, বিজেপির একসময়ের রাজ্য সভাপতি সত্যব্রত মুখোপাধ্যায় (জলুদা) পরলোকগমন করেছেন। তাঁর আত্মার সদগতি হোক। ওঁ শান্তি।তাঁর মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেন সমগ্র রাজনৈতিক মহল।
প্রসঙ্গত, ২০০০ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত বাজপেয়ী মন্ত্রিসভার দুটি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের মন্ত্রিত্ব সামলানো জলুবাবু রাজ্য বিজেপির সভাপতির দায়িত্বও সামলেছেন। কেন্দ্রীয় সার ও রসায়ন দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। তিনি ১৯৯৮ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত পাঁচবার কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ১৯৯৯ সালে জয়লাভ করেন। এখানে একটা কথা বলতেই হয়, বয়স জনিত কারণে সম্প্রতি সত্যব্রত মুখোপাধ্যায় সক্রিয় রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর আগে বাংলায় যখন বিজেপির বাড়বাড়ন্ত ছিল না, সেই সময় দলের রাশ ধরেছিলেন তিনি। বাংলায় গেরুয়া শিবিরের সংগঠন অনেকটাই মজবুত হয়েছিল তাঁর হাত ধরে। তাঁর প্রয়াণে শোকস্তব্ধ গেরুয়া শিবিরের কার্যকর্তারা। জয়লাভের পর ১৯৯৯ -২০০৪ এই টার্মের শেষ দিকে তিনি কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় প্রতিমন্ত্রী হন। ইদানীং আর সক্রিয় রাজনীতিতে দেখা যায়নি তাঁকে। দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। ১৯৩২ সালে বাংলাদেশে জন্ম হয়েছিল সত্যব্রতবাবুর। নদিয়ার কালিগঞ্জের এই বর্ধিষ্ণু পরিবারের সন্তান সত্যব্রত পরিবারের অন্যান্যদের মতো বেছে নেন আইনি পেশা। এরপর ২০০৯ ও ২০১৪ সালে তাঁকে হারিয়ে কৃষ্ণনগরের সাংসদ নির্বাচিত হন তাপস পাল।