নীলাদ্রির সংস্থার ঢালাও প্রশংসা করেছিলেন এসএসসি-র প্রাক্তন উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ-ই, মিলল নথি

সামনে এল নীলাদ্রির সঙ্গে এসএসসি-র প্রাক্তন উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদের যোগসাজশের ঘটনা। নীলাদ্রির তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা ‘এনডি ইনফোসিস্টেমস প্রাইভেট লিমিটেড’ ওএমআর মূল্যায়নে কতটা ‘দক্ষতা ও ‘উদ্ভাবনী শক্তি’র পরিচয় দিয়েছে, সে কথা উল্লেখ করে গত কয়েক বছর ধরে শান্তিপ্রসাদ অকাতরে শংসাপত্র দিয়েছিলেন। আর এই সব শংসাপত্র দেওয়া হয়েছিল এসএসসি-র লেটারহেডে। এমনকী, কোভিড আবহেও ওএমআর যাচাইয়ের ক্ষেত্রে নিষ্ঠার সঙ্গে যে কাজ করছে নীলাদ্রির সংস্থা কাজ তাও শান্তিপ্রসাদ জানিয়েছিলেন লিখিত ভাবেই। অর্থাৎ, এর থেকে বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়, নীলাদ্রির সঙ্গে যোগসাজশ ছিল শান্তিপ্রসাদের। আর এই যোগসাজসের ঘটনা নিয়ে তদন্তকারীদের সন্দেহ ছিলই। তবে এর স্বপক্ষে এবার মিলল নথি। তাতে সিলমোহর পড়ল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকদের সন্দেহে। সূত্রের খবর, এই সব নথিতে অন্য জনের সংস্থার কাজ নিয়ে এক জনের ঢালাও প্রশংসা করে দেওয়া শংসাপত্র। আর তা একবার নয়, বহু বার।
ওএমআর কেলেঙ্কারিতে নীলাদ্রিকে গ্রেপ্তার করার পরেই সিবিআই জানিয়েছিল, নীলাদ্রির সূত্রে এখনও পর্যন্ত এসএসসি-র গ্রুপ সি-তে ৩ হাজার ৪৮১, গ্রুপ ডি-তে ২ হাজার ৮২৩, নবম-দশমে ৯৫২ ও একাদশ-দ্বাদশে ৯০৭টি ওএমআর শিটে বিকৃতি নজরে এসেছে। ২০১৯-এর এর মার্চে এসএসসি-র গ্রুপ-সি নিয়োগ পরীক্ষা হয়। সেক্ষেত্রেও নীলাদ্রির সংস্থাকে দেওয়া তাঁর শংসাপত্রে শান্তিপ্রসাদ লেখেন, ‘আমি জানাচ্ছি যে, এনডি ইনফোসিস্টেমস পশ্চিমবঙ্গের ২০টি জেলায় গ্রুপ সি-র ৮ লক্ষ ১৫ হাজার ৭০৯ জন প্রার্থীর নিয়োগ সংক্রান্ত কাজটি আগাগো়ডা সাফল্যের সঙ্গে সম্পন্নকরেছে। এই সংস্থার উদ্ভাবনী শক্তির জন্য প্রশংসা করছি।’
এরপর ২০১৯-এরই মার্চ মাসে গ্রুপ ডি-তে ১১ লক্ষ ৭৭ হাজার ৯৫০ জন প্রার্থীর পরীক্ষা নেওয়া, খাতাপত্র দেখা, মেরিট লিস্ট বানানো- এই সমস্ত কাজে সাফল্যের জন্যও শান্তিপ্রসাদের শংসাপত্র পায় এনডি ইনফোসিস্টেমস। এদিকে আবার ওই ২০১৯ সালের মার্চেই নীলাদ্রি রাজ্য গোয়েন্দা দপ্তর অর্থাৎ সিআইডি-র হাতে গ্রেপ্তার হন পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুরে রুজু হওয়া চাকরি নিয়ে প্রতারণা ও জালিয়াতির মামলায়। তবে পরে হাইকোর্ট থেকে জামিনে ছাড়া পান নীলাদ্রি।
এর ঠিক পরের বছরের ঘটনা। ২০২০-র ১০ ফেব্রুয়ারি উচ্চ-প্রাথমিকে শারীরশিক্ষা ও ওয়ার্ক এডুকেশন বাদে অন্যান্য বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগে টেট পরীক্ষায় ৪ লক্ষ ৯২ হাজার ৫৬৯ জন প্রার্থীর পরীক্ষা প্রক্রিয়া মাত্র একদিনের মধ্যে সুসম্পন্ন করার জন্য নীলাদ্রিকে উষ্ণ অভিনন্দনও জানান এসএসসি-র তৎকালীন উপদেষ্টা। আবার ২০২১-এর ২৪ ফেব্রুয়ারি শান্তিপ্রসাদ স্বাক্ষরিত একটি শংসাপত্র পাওয়া যাচ্ছে। যেখানে শান্তিপ্রসাদকে প্রশংসা করতে দেখা যাচ্ছে ২০১৭-র ২০ জানুয়ারি ২০৬৭ টি শূন্য পদে অশিক্ষক কর্মী অর্থাৎ করণিক নিয়োগে। সেখানে কম্পিউটার টাইপ পরীক্ষা নেওয়ার ক্ষেত্রে নীলাদ্রি দাসের সংস্থার সাফল্যের কথাও উল্লেখ করা হয়। প্রসঙ্গত, এসএসসি-র উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ ২০২১-এর ২৩ ফেব্রুয়ারি লেখেন, ‘মাধ্যমিক স্কুলে অ্যাসিস্ট্যান্ট টিচার নিয়োগের পরীক্ষায় ওএমআর শিট তৈরি ও সরবরাহ, প্রশ্নপত্র তৈরি করা, কোভিড পরিস্থিতিতে সতর্কতা নিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রশিক্ষিত মানবসম্পদ মোতায়েন, বিশেষত লিখিত পরীক্ষায় ওএমআরের মূল্যায়নের মাধ্যমে ফল প্রকাশ ও ঘোষণা, আর তারই পাশাপাশি প্রার্থীদের অভিযোগের উত্তর দেওয়ার মতো কাজে এনডি ইনফোসিস্টেম্‌স-এর সাফল্যের জন্য ভবিষ্যতে তাদের আরও উন্নতি কামনা করি।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

twenty − sixteen =