৪১ এ মাতৃভূমিতে ফিরছেন নিউজিল্যান্ডের প্রাক্তন তারকা রস টেলর

রস টেলর নামটি ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে এক অতি পরিচিত নাম। দীর্ঘদিন নিউজিল্যান্ড দলের অন্যতম ভরসা হিসেবে মাঠ কাঁপিয়েছেন তিনি। ব্যাট হাতে অগণিত জয় এনে দিয়েছেন ব্ল্যাক ক্যাপসকে। তাঁর কেরিয়ারের মুকুটে সবচেয়ে উজ্জ্বল পালক নিঃসন্দেহে ২০২১ সালে জেতা আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ। তবে ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার তিন বছর পর ফের আন্তর্জাতিক মঞ্চে নাম লেখাচ্ছেন তিনি। কিন্তু এবার আর নিউজিল্যান্ডের হয়ে নয়, নিজের মাতৃভূমি সামোয়ার হয়ে খেলতে নামবেন ৪১ বছর বয়সি এই কিংবদন্তি।

সামোয়া দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের ছোট্ট একটি দ্বীপরাষ্ট্র। জনসংখ্যা মাত্র ২ লক্ষ ২০ হাজার। ক্রিকেট সেখানে খুব একটা পরিচিত খেলা নয়। তবে আগামী বছর ভারতে ও শ্রীলঙ্কায় যে টি-২০ বিশ্বকাপ আয়োজন হতে চলেছে, তাতে খেলার স্বপ্ন দেখছে সামোয়া। এর জন্যই এশিয়া-ইস্ট এশিয়া পেসিফিক জোনের বাছাইপর্বে অংশ নিচ্ছে তারা। আগামী ৮ অক্টোবর ওমানেই শুরু হবে সেই প্রতিযোগিতা। আর এই প্রতিযোগিতার জন্য ঘোষিত সামোয়ার দলে চমক হিসেবে জায়গা করে নিয়েছেন রস টেলর।

টেলরের মা সামোয়ার বাসিন্দা। তাই নিয়ম অনুযায়ী মায়ের সূত্রে তাঁর সামোয়ার পাসপোর্টও রয়েছে। ফলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দেশ পরিবর্তনের নিয়ম মেনেই ফেরার সুযোগ পেয়েছেন তিনি। তিন বছরের ‘কুলিং অফ পিরিয়ড’ শেষ হতেই আর কোনো বাধা থাকল না। সামোয়া ক্রিকেট বোর্ডও বিদেশে খেলা তারকাদের নিজেদের দেশের হয়ে ফেরানোর ডাক দিয়েছিল। সেই আহ্বানেই সাড়া দিলেন টেলর।

নিজের প্রত্যাবর্তন সম্পর্কে টেলর বলেছেন, “এটা শুধু ক্রিকেটে ফেরা নয়। এটা আমার শিকড়ে ফিরে যাওয়া। আমার সংস্কৃতি, আমার ঐতিহ্যকে তুলে ধরার সুযোগ।” তাঁর এই সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে সামোয়ার ক্রিকেটকে নতুন উদ্দীপনা দেবে। আন্তর্জাতিক মঞ্চে এক কিংবদন্তির উপস্থিতি দেশটির ক্রিকেটের প্রচার ও প্রসারে বিরাট ভূমিকা রাখবে।

রস টেলরের কেরিয়ার ঝলমলে। ২০০৬ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ওয়ানডে দিয়ে আন্তর্জাতিক যাত্রা শুরু করেছিলেন। পরের বছর দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে টেস্ট অভিষেক। দীর্ঘ ১৭ বছরের কেরিয়ারে নিউজিল্যান্ডের হয়ে তিন ফরম্যাট মিলিয়ে খেলেছেন ৪৪৫টি ম্যাচ। সংগ্রহ করেছেন ১৮ হাজারেরও বেশি রান। অসংখ্য শতরান ও অর্ধশতরান তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে। ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানান।

তবে অবসর নেওয়ার পরও খেলার প্রতি ভালোবাসা ও দেশের প্রতি টান তাঁকে আবারও মাঠে ফিরিয়ে আনল। নিউজিল্যান্ডের হয়ে সেরাদের একজন হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করার পর এবার তিনি নতুন চ্যালেঞ্জে নামবেন। সামোয়ার হয়ে বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পেলে সেটা শুধু তাঁর কেরিয়ারের জন্য নয়, গোটা দ্বীপরাষ্ট্রের ক্রিকেট ইতিহাসের জন্যই হবে এক অনন্য মুহূর্ত।

রস টেলরের এই প্রত্যাবর্তন কেবল খেলার গল্প নয়, এটি এক আবেগের গল্প—শিকড়ের টানে, ঐতিহ্যের দায়ে, নিজের সংস্কৃতিকে তুলে ধরার এক সংগ্রামের কাহিনি। সামোয়ার ক্রিকেটের ইতিহাসে তাঁর নাম নিঃসন্দেহে সোনার অক্ষরে লেখা থাকবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two + 3 =