প্রয়াত রাজ্যের প্রাক্তন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। রবিবার ভোর ৫টা নাগাদ তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।, সূত্রে খবর উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে নিজের বাসভবনেই প্রয়াত হন তিনি। বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। ছেলে নীরজ ত্রিপাঠী এদিন তাঁর বাবার মৃত্যুসংবাদ জানান। তাঁর প্রয়াণের খবর পেয়েই ট্যুইটে শোক প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। শোকপ্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
প্রাক্তন রাজ্যাপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ৮ ডিসেম্বর বাড়িতেই শৌচালয়ে পড়ে যান কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। গুরুতর চোট লাগে তাঁর। ডান হাত ভেঙে যায়। এরপর থেকেই কিছুটা শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন তিনি। মাঝে মধ্যেই বয়সজনিত কারণে শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দিয়েছিল। এরপর তাঁর অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। শ্বাসকষ্টের পরিমাণ বাড়ায় তাঁকে প্রয়াগরাজের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। শারীরিক পরিস্থিতি আরও জটিল হওয়ায় কোনও ঝুঁকি না নিয়ে তাঁকে আইসিইউ-তে স্থানান্তরিত করেন চিকিৎসকরা। এক সপ্তাহ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর কিছুটা উন্নতি হলে তাঁকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। এরপর শুক্রবার থেকে ফের একবার প্রাক্তন রাজ্যপালের শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। এরপর একমাসের সমস্ত চেষ্টা ব্যর্থ করে রবিবার ভোরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। উল্লেখ্য, এর আগেও দু’বার কোভিডে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। তখন তাঁকে লখনউয়ের সঞ্জয় গান্ধি পোস্টগ্রাজুয়েট ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সে ভর্তি করা হয়েছিল। তারপর থেকেই তাঁর শরীরে নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়েছিল। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে গিয়েছিল।
প্রসঙ্গত, ১৯৩৪ সালের ১০ নভেম্বর উত্তর প্রদেশের এলাহাবাদে অর্থাৎ বর্তমানে প্রয়াগরাজে জন্মগ্রহণ করেন কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। পেশায় আইনজীবী কেশরীনাথ পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, মেঘালয় ও মিজোরামের রাজ্যপাল হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া তিনি উত্তর প্রদেশে বিজেপির সভাপতিও ছিলেন। ২০১৪ সালের ২৪ জুলাই তিনি পশ্চিমবঙ্গের ২০ তম রাজ্যপাল হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০১৯ সাল অবধি তিনি এই দায়িত্ব পালন করেন। পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল থাকাকালীনই তিনি দুই দফায় বিহারের রাজ্যপাল হিসাবেও অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেছিলেন। পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল থাকাকালীনই তাঁকে মেঘালয় ও মিজোরামের রাজ্যপালের দায়িত্ব দেওয়া হয়।কেশরীনাথ ত্রিপাঠী ১৯৫২ সালে প্রথম ভারতীয় জনসংঘে যোগদান করেন। কাশ্মীর আন্দোলনে তিনি জনসংঘের হয়ে ভূমিকা পালন করেছিলেন। সে সময় তাঁকে জেল খাটতেও হয়েছিল। রাম জন্মভূমি আন্দোলনেও তাঁকে প্রথম সারিতে দেখা গিয়েছিল। ১৯৯০ সালের ২৩ অক্টোবর তিনি গ্রেপ্তারও হন। ১০ নভেম্বর পর্যন্ত জেল খাটেন তিনি। কেশরীনাথ ত্রিপাঠী উত্তরপ্রদেশে ভারতীয় জনতা পার্টির সভাপতির দায়িত্ব সামলেছেন। উত্তরপ্রদেশ বিধানসভায় বিজেপির টিকিটে ছয় বারের বিধায়ক ছিলেন তিনি। ১৯৭৭ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত তিনি অর্থ এবং কর দফতরের মন্ত্রী ছিলেন তিনি। পাশপাশি তিনি এলাহাবাদ হাইকোর্টের আইনজীবী ছিলেন। কবি এবং লেখক ছিলেন কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। ‘মনোনুকৃতি’ এবং ‘আয়ুপঙ্খ’ নামে দু’টি অ্যান্থোলজি বই লিখেছেন তিনি। তাঁর লেখা ‘সঞ্চয়িতা’ বইটি অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়েছিল।